প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Friday, May 16, 2025

ঝড় থামিয়ে ঝিঙা | ঝিঙাফুল সিরিজ— ১৯ | প্রদীপ কুমার দে

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/রম্যরচনা/৩য় বর্ষ/৭ম সংখ্যা/৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার দে
 
ঝড় থামিয়ে ঝিঙা
ঝিঙাফুল সিরিজ-১৯

"নাএখনই যাবো। ওখানেই মা-মাসিদের নিয়মে থাকবো। ডেলিভারী হলে ধাইমা আছে। এটাই স্বাভাবিক। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। ও বুঝতে পেরে বললে,"

 
মাথাটা গরম হয়ে গেল ঝিঙাফুলের। আমার হাত ধরে বেরিয়ে এল চেম্বার ছেড়ে,
-শুধুই চালাকি। প্ল্যানে আসুন…
-হ্যাঁ এখন তো সর্বত্রই এই একই নিয়ম। বেসরকারি হসপিটাল থেকে নার্সিংহোম হয়ে প্রাইভেট চেম্বারে স্কিম চলছে।
-আমার ওসবে দরকার নেই। সব পুরুষদের। মহিলা খুব কম। চলো বাড়ি ফিরে যাই।
-তারপর তোমাকে দেখবে কে?
-তোমার চিন্তা নেই। আমার সব ঠিক করা হয়ে গেছে। বাড়িতে গিয়ে বলব।
 
বাড়ি ফিরছি দুজনে। আমি চিন্তিত। ডাক্তার এখনো ঠিক করা গেল না। ঝিঙাফুল কিছু ভাবছে। আমিও অন্য চিন্তায়। মেয়েরা পয়সা ভালো চেনে। একপয়সার মা বাপ! ছেলেদের মতো অত উদার আর দিলদরিয়া নয়।
 
হো আপনারা কিছু বুঝতে পারছেন না? তাই-তো কী করে পারবেন? আমিই তো বলিনি। এবার আসল কথাটি বলি, আমার বউ ঝিঙাফুল গর্ভবতী। অনেক কষ্টের পর সাড়ে তিন মাসের মাথায় শ্বশুরবাড়ির কথা রাখতে পারলাম। গতবার ফেরার সময় কথা দিয়েছিলাম নচেৎ আমরা আমাদের সন্তান আরো পরেই নিতাম। এমনকি এই সন্তান নেওয়া নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতামই না।
 
ঝিঙাফুল একদিন বলেছিল,
-ভবিষ্যৎ খুব খারাপ। নতুন প্রজন্ম কী পাবে? পৃথিবী রসাতলে। আমরাই তো দুনিয়াটাকে শেষ করে দিচ্ছি। নিজেদের সুখের জন্য সব ধ্বংস করে দিলাম। এখনকার ছেলেমেয়েরা বড় উচ্চাভিলাষী। সবাই নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। আবার এ যুগের ছেলেরা বাপ-মাকে দেখেও না। কেউ দেখলে খরচ করে তাদের বৃদ্ধাশ্রমে ছেড়ে আসে। শুধু শুধু মায়া বাড়ানো।
ঠিকই বলেছিল। তবুও আমি বলেছিলাম,
-ছেলে তবু মা বলে ডাকবে।
ঝিঙাফুল বাস্তবিক,
-কদিন সেটা? অল্পবয়সেই পেকে গেলে হয়ে গেল!
-মেয়ে হলেও তো হয়?
ঝিঙাফুল মুখ বেঁকিয়ে দিল,
-আরো বাজে! আমাকে দেখো, আমি বাবা-মায়ের কী করতে পেরেছি? আমি মেয়ে পছন্দ করি না। আমায় ছেলে দেবে কিন্তু?
-তোমরা মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু। আজকালকার মেয়েরা অনেক বড় বড় কাজ করছে।
-থাক, অনেক হয়েছে। আর লেকচার দিতে হবে না। 
বলেই আমাকে সেদিন থামিয়ে দিয়েছিল।
 
আজ বাড়ি ফিরে ঝিঙাফুল যা বললে আমি চমকে উঠলাম, চক্ষু ছানাবড়া। পিলে চমকে দেওয়া কথা বটেই।
বউ অত্যন্ত সাবলীল ভঙ্গিতে আদেশ দিল,
-নাও সব গুছিয়ে নাও, আমি বাড়ি যাবো।
-ভালো তো, পাঁচমাস হলেই চলে যেও।
-না, এখনই যাবো। ওখানেই মা-মাসিদের নিয়মে থাকবো। ডেলিভারী হলে ধাইমা আছে। এটাই স্বাভাবিক।
আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। ও বুঝতে পেরে বললে,
-বললাম না গুছিয়ে নাও, তুমিও যাবে।
-আমিও? মানে?
-চাকরি ছেড়ে দাও। ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে শহরের মায়া কাটিয়ে আমাদের গ্রামেই চলো, তোমার তো আর নিজের কেউ নেই, আমরাই সব। দাদা বলেছিল, কী মনে পড়ে?
আমি কাঁচুমাচু মুখে,
-কী?
-ওখানেই চাষাবাদ করবে আর আমাকে নিয়ে পুরো পরিবারের সাথে একসঙ্গে থাকবে। তুমি সেদিন বললে না! শহর মানে ইট! মাটিতে থাকবো চলো...
 
সমাপ্ত
 

1 comment:

  1. আজ বড় আনন্দ পেলাম সম্পাদকের সান্নিধ্যে
    👏👏👏

    ReplyDelete

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)