প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Thursday, July 4, 2024

ঘড়ির ঘটনা | সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/৭ম সংখ্যা/২৮শে আষাঢ়, ১৪৩১

ধারাবাহিক গল্প

সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়

ঘড়ির ঘটনা

[২য় পর্ব]

"আর আমার হচ্ছে ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং-এর ব্যবসা। লোকেরা আগে খাবার জোগাড় করবে না ঘর সাজাবে? মিস্টার দালাল মাত্র দশ লাখ টাকা অফার করেন। যাক, সেসব আর ভেবে কী হবে? ঘড়িটাই তো নেই।"


পূর্বানুবৃত্তি মিস্টার বর্ধনের বাবার হাতঘড়ি যেটা এখন বাবা মারা যাবার পর তিনিই পড়েন। বর্তমানে পঁচিশ লাখ টাকা দামের ওই ব্র্যান্ডের ঘড়ি একসময় হিটলার পড়তেন। ঘড়িটি অফিস থেকে চুরি হয়ে যাওয়ায় তদন্তের জন্য গোয়েন্দা শিনাকে নিয়োগ করেন। শিনার সঙ্গে সহকারী টিনা ও তাতাইও আসে। তদন্ত এগোতে থাকে। তারপর…
 
ভদ্রলোক অবাক হয়ে শিনার দিকে তাকিয়ে থাকে। বোঝাই যায়। অবাক হয়ে গেছেন। গতকাল সকালে উনি শিনার সঙ্গে দেখা করেন। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে শিনা সব খবরাখবর জোগাড় করে ফেলেছে!
 
অফিসে তল্লাশি করে কোনো লাভ হয়নি। অধিকাংশ কর্মচারী বলে, ঘড়িটা স্যারের হাতে দেখেছি। স্যারের খুব শখের ঘড়ি ছিল। স্যার গত হবার পরে কোম্পানির এবং ঘড়ির মালিক হয় দেবাংশু বর্ধন। তবে, কোম্পানি ইদানিং খুব ভাল চলছে না। বাজারে প্রচুর ধারদেনা হয়ে গেছে। আগের থেকে স্টাফও অনেক কমে গেছে। যারা এখন আছে, তারা সব দেবাংশুর বাবার আমলের। প্রত্যেকে খুবই বিশ্বস্ত।
- একবার আপনার টয়লেটে যাওয়া যাবে?
শিনার কথা শুনে ভদ্রলোক বলে- অবশ্যই।
শিনা, তাতাই আর মিস্টার বর্ধন টয়লেট দেখে ফিরে আসে।
- আপনার কাজের টেবিল তো এটাই। একবার এর ড্রয়ারগুলো দেখতে হবে।
- ডান দিকের ওপরের ড্রয়ারে ঘড়িটা খুলে রাখতাম। তার নীচের দুটো ড্রয়ারে আমার টুকটাক দরকারি জিনিসপত্র থাকে। অথচ একদম নীচের ড্রয়ারে একটা অর্ধেক ভর্তি রামের বোতল পাওয়া গেল।
- আর বাঁ দিকের ড্রয়ারগুলো? সে তো তালা দেওয়া। সেখানে কী আছে?
- কোম্পানির খুব দরকারি কাগজপত্র। যেমন ধরুন সরকারি লিজ সংক্রান্ত কাগজ। বিভিন্ন চুক্তির দলিল। ও-সব ওই বাঁ দিকের তিনটে ড্রয়ারে থাকে।
- চাবি দিয়ে খুলতে বলুন। শিনা বলে।
- সে চাবিটাও তো আমার কাছে। আমিই খুলে দেখাচ্ছি।
বর্ধনবাবু চাবি ঘুরিয়ে ড্রয়ার দেখান।
- আপনারা একটু সরুন। আমি নিজে দেখতে চাই।
শিনার কথায় কাজ হয়। তিনটে ড্রয়ার তন্নতন্ন করে খুঁজে শিনা বলে- এবার একবার দালালের সঙ্গে কথা বলে আসি।
 
এসি মার্কেটে দালালের ঘড়ির দোকান খুঁজতে একদম কষ্ট হয়নি। শিনার সঙ্গে আলাপ পর্ব মিটে যেতেই ভদ্রলোক বলেন- আচ্ছা বলেন তো, ঘড়ি দেখতে গেছি তার মানে কী? আমি সেই ঘড়ি পকেটে করে লিয়ে আসব? মানে চুরি? গতকাল আমার দোকানে পুলিশ এসেছিল। আমাকে অনেকক্ষণ ধরে জেরা করেছে। এমনকি, এটাও বলেছে যে ঘড়ি না পাওয়া গেলে আমার বাড়ি, ঘর, দোকান সব সার্চ করবে। আমরা ভদ্রলোক। চোর, ডাকাত না। ঘড়ির ব্যবসা। ওই লোকটা ওরকম একটা ঘড়ির মূল্য বুঝবে? ওই কোম্পানির ঘড়ি হিটলার পড়ত। ওই ঘড়ির দাম এখন কম করে পঁচিশ লাখ টাকা।
- আগামীকাল সকালে একবার বর্ধনবাবুর অফিসে আসুন। আপনাকে ওই ঘড়ি আবার দেখিয়ে দেবো। আমি প্রমিস করছি। বর্ধনবাবুকে বলবেন, আমি আপনাকে আসতে অনুরোধ করেছি।
তার মানে শিনার প্রবলেম সলভ হয়ে গেছে। এখন ও আর কোনো কথা বলবে না। তাতাই, টিনা এসব জানে।
- মিস্টার বর্ধনকে ফোন করে আগামীকাল সকাল এগারোটার সময় অফিসে আসতে বল। আমি যে মিস্টার দালালকেও আসতে বলেছি, সেটা বলে দিস। বলিস, কাল সকালেই ঘড়ি রহস্য খুলে যাবে। শিনা কথাগুলো তাতাইকে বলে।
- বলে দেব। তার আগে চলো চাংওয়াতে চাইনিজ খেয়ে নিই। ভীষণ খিদে পেয়েছে।
 
- মিস্টার দালাল আপনার ঘড়িটা কিনতে চাইলে আপনি খুব ঘাবড়ে যান। ভয়ও পান। অথচ আপনি বেশ ক মাস ধরেই ঘড়িটা বেচে দেবেন ভাবছিলেন। সেই জন্য ডালহাউসি অঞ্চলের কয়েকটা নামী দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আপনার ছবি দেখাতেই ওরা চিনতে পারে। তাছাড়া, এরকম ঘড়ি তো আর অনেকের কাছে নেই। আপনি দিন পনেরো আগে একটা ইংরেজি কাগজে বিজ্ঞাপন দেন- ওই ঘড়ি বিক্রি করবেন বলে। মিস্টার বর্ধন অবাক হয়ে শিনার কথা শুনছে। শিনা, টিনা আর তাতাই ছাড়া মিস্টার দালাল এসেছে। শিনা বেশি লোকজনকে ডাকতে
বারণ করেছিল। সবাইকে চা আর স্যান্ডউইচ দেওয়া হয়েছে। শিনারা এসেছে সকাল এগারোটায়। মিস্টার বর্ধন তো অফিসেই ছিল। মিস্টার দালালের আসতে মিনিট পনেরো দেরি হয়।
- একটা দোকানে যে আপনি গতকাল ঘড়ির ব্যাপারে ফোন করেছিলেন, তাও আমি জানি।
মিস্টার বর্ধন বলে- ওই দোকান তো তিরিশ লাখ দাম দিয়েছিল। আপনি তো জানেন, আমার ব্যবসার হাল খুব ভাল না। এই কোভিড রোগ একদম শেষ করে দিয়েছে। লোকের হাতে একটা পয়সা নেই। আর আমার হচ্ছে ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং-এর ব্যবসা। লোকেরা আগে খাবার জোগাড় করবে না ঘর সাজাবে? মিস্টার দালাল মাত্র দশ লাখ টাকা অফার করেন। যাক, সেসব আর ভেবে কী হবে? ঘড়িটাই তো নেই।
- মানে? শিনা প্রশ্ন করে।
- ঘড়িটা লুকিয়ে রেখেছিলাম আমার টেবিলের বাঁ দিকের ড্রয়ারে। গতকাল বিকাল থেকে সেটা আর দেখছি না।
- আপনি এক ঢিলে দুটো পাখি মারবেন ভেবেছিলেন। ঘড়িটা ভাল দামে বেচে দিলেন আবার লোকে জানলো যে আপনার ঘড়িটা হারিয়ে গেছে। দেখুন তো। এটাই তো সেই ঘড়ি?
- হ্যাঁ। এটাই।
- আমি ড্রয়ার তল্লাশি করার সময় ঘড়িটা পাই। আমার প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল যে ঘড়িটা চুরি হয়নি। আপনি থানায় গিয়ে বলে আসবেন যে ঘড়িটা অফিসেই পেয়েছেন। কোথায় রেখেছেন তা মনে করতে পারছিলেন না। নয়তো পুলিশ মিস্টার দালালের পিছু ছাড়বে না।
আর এক কাপ চা খেয়ে সবাই উঠে পরে। মিস্টার বর্ধন একটা দশ হাজার টাকার চেক টিনার হাতে দেয়। বলে,
- মানছি আমি ভুল করেছি। কিন্তু একটা উচিৎ শিক্ষা তো পেলাম। সেটাই বা কম কী!
 

সমাপ্ত

1 comment:

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)