ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা চ্যাটার্জি
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব— ২৮]
পারমিতা চ্যাটার্জি
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব— ২৮]
"সুপ্রভাদেবী হাতের গোছাভরা চুড়ি, লোহাবাঁধানো স্বামীর টেবিলে রেখে লোহাবাঁধানো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে শাঁখা-পলা সব সানবাঁধানো উঠোনে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। ভেঙে খানখান হয়ে গেল শাঁখাজোরা। শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘসে ঘসে সিঁদুর মুছে ছেলেকে বললেন,"
পূর্বানুবৃত্তি সজল এলো কলকাতায়। বাবা-মা’র সঙ্গে অল্প ঝামেলা হলো। সুপ্রকাশ মাকে সঙ্গে নিয়ে সজলের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসতে চাইলে সজল মাকে দেখল এই প্রথম বাবার মুখের ওপর কথা বলতে। মা বলল এটা কি বাড়ি ছিল, নাকি একটা জেলখানা। তারপর…
পথে আসতে
আসতে সজল জানাল,
-আমিও ভাবছি
আজই ওদের সাথে কলকাতায় যাই,
কতদিন মাকে দেখিনি,
একাই তো যাচ্ছি,
আশা করি বাবা আর কিছু বলবেন না বল?
-না না তুই নিশ্চিন্তে যা, আরে যতই হোক বাবা তো বাবাই হন তাই না?
একটু পরেই মনকলি আর প্রবীর রওনা দিল, যাবার সময় মনকলি সুচরিতাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল, সুচরিতারও মনে হচ্ছে যতই ওকে সান্ত্বনা দিক কিন্তু নিজে কি একটুও শান্তি পাচ্ছে? খালি মনে হচ্ছে, আবার দেখা হবে তো? সজল প্রবীরের কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
ওদের গাড়ি এগিয়ে গেলে যতদূর দেখা যায় সুচরিতা দেখতে লাগল, তারপর রাহুল ওকে জোর করে সরিয়ে নিয়ে এসে চোখের জল মুছিয়ে দিল। সেদিন রাতে ওরা তিনজন অনেকক্ষণ অবধি গল্প করল, আড্ডা দিল। পরেরদিন সকালে সজলও চলে গেল, সজলও যাবার সময় বলে গেল,
রাহুল বলল,
সজল এল কলকাতায়। আগেরদিন সজলের দাদা-বউদি ওদের ফ্ল্যাটে এসে সব পরিষ্কার করে রান্নার ব্যবস্থা করে রেখেছিল, সকালে ওর মাকে নিয়ে দাদা আসতে গেলে ছোটখাটো ঝামেলা হল। মাকে বাবা বলল, যাবে তো চিরকালের মতন যাও, মাকে জীবনে প্রথম বাবার কথার উত্তর দিতে দেখল সজলের দাদা সুপ্রকাশ, মা ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন,
এইকথা বলে, সুপ্রভাদেবী হাতের গোছাভরা চুড়ি, লোহাবাঁধানো স্বামীর টেবিলে রেখে লোহাবাঁধানো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে শাঁখা-পলা সব সানবাঁধানো উঠোনে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। ভেঙে খানখান হয়ে গেল শাঁখাজোরা। শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘসে ঘসে সিঁদুর মুছে ছেলেকে বললেন,
পা-টা সবে বাড়াতে যাবেন, গুরুগম্ভীর স্বরে সজলের বাবা বললেন,
-কে কার জন্য জীবন নষ্ট করেছে তা ঈশ্বরই জানেন, যাক আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, জীবনে ক’টা কথা যে বলেছি তা বোধহয় হাতে গোণা যায়।
সুপ্রভাদেবী সুপ্রকাশের হাত ধরে রাস্তায় নামলেন, খোলা আকাশের নীচে প্রাণভরে নিশ্বাস নিলেন। সুপ্রকাশ ভাবছিল মা ভেতরে এত দুঃখ পুষে রেখেছিল, আজ যেন তা আগুন হয়ে বেরিয়ে গেল। সুপ্রকাশ খুব যত্ন করে মাকে নিয়ে চলল নিজের ফ্ল্যাটে। চেয়ে দেখল মায়ের চোখদুটো খটখটে শুকনো কোন জলের চিহ্নমাত্র নেই।
একটু পরেই বলে উঠলেন,
-আমাদের বলোনি কেন মা? আমরা তো বড় হয়েছি।
-যতই বড় হোস, মায়ের কাছে ছেলেরা ছেলেই থাকে, বলা যায় না রে।
-বললে আমি তোমাকে অনেক আগেই এই নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্ত করতাম।
-তোমাদের পড়াশোনা শেষ হয়ে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় ছিলাম, মনে মনে এও ঠিক করেছিলাম যদি তোমরাও তোমাদের বাবার ধারা পাও, তবে আমার বাবার গুরুদেবের আশ্রমে চলে যাব।
-না না আমি আর সজল দুজনেই ঠিক করেছিলাম বড় ফ্ল্যাট কিনে আমিও ইনভেস্ট করব আর মাকেও নিয়ে আসব। ওইভাবে মানুষ বাঁচতে পারে না কি? তোমার হাত-পায়ের শেকল সব খুলে দিয়েছি, তুমি বাতাসে নীল আকাশের তলায় মুক্ত নিশ্বাস নিয়ে বাঁচো, কেউ তোমাকে কিছু বলবে না।
একটু পরেই সজল ঢুকল, সজল ঢুকেই অশ্রুমতী মাকে প্রথমে জড়িয়ে ধরে কাঁদল,
তারপর দুটো কচি কচি গলা কানে এল,
সুপ্রকাশের বিয়ের পরপরই সজল চলে গিয়েছিল। প্রায় ছবছর পরে বউদির জমজ ছেলেমেয়ে হয়। তাই ওরা তাতাইকে শুধু ছবিতে দেখেই চিনেছে। একটা পারিবারিক আনন্দময় পরিবেশে বাড়িটা রমরম করে উঠল।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment