প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ডিভোর্স | স্বপ্ন ও বাস্তব

বাতায়ন/ডিভোর্স/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ , ১৪৩২ ডিভোর্স | সম্পাদকীয় "কম্প্রোমাইজ করে কোনক্রমে কাটত সুখের খোলসের আড়ালে অত...

Saturday, July 26, 2025

বিদাহী নিগড়, অনিবার্য আর্তি ও সুচরিতাসু... | দীপক বেরা

বাতায়ন/ডিভোর্স/কবিতা/৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ডিভোর্স | কবিতা
দীপক বেরা
 
বিদাহী নিগড়, অনিবার্য আর্তি ও সুচরিতাসু...
 

নাম দিয়েছিলাম, "জোড়া-শালিকের সংসার"। নিছক খুঁটে খাওয়া আমাদের এই যৌথযাপন মিথুন সম্পর্ক। হেঁটে যায় বেগ, আবেগ, অস্থিমজ্জা ও রক্তের যাবতীয় উচ্চারণ, উদ্ভিন্ন উচ্ছ্বাস, উদ্ভাস। এক অদৃশ্য সুখানুভূতির মায়াচাদরের আবরণে আবৃত। মায়ামহল্লায় গাছ-গাছালির অপরূপ আলোছায়া, যেখানে স্নানের দুপুর ভেজানো অন্তঃস্থ বর্ণেরা ডুবে যায়। বিলাসী নদীর তীরে ছুটিঘাস লিখে রাখে আমাদের এমনই খুনসুটি আদর তার আলোচুম ঘরে


... ক্রমে সম্পর্কের পোতাশ্রয়ে জমে হ্যালুসিনেশনের ফাংগাস, হাওয়ায় ভাসে কার্বন মনোক্সাইড। চিড় ধরে সংসারের সংস্কার, ঐতিহ্যের রক্ষাকবচে। মনে জোয়ার এলে, ভেসে যেতে কারুর ছাড়পত্র লাগে না। বুকের মধ্যে বাঁশির পরকীয়া শ্বাস লুকিয়ে রেখে, দেখে কি কেউ— কেমন করে জন্মদাগ মুছে যায় ভণিতা ছাড়াই? পেরোনো পথের চিহ্নগুলো আজ স্মরণিকা হয়ে থাক। অজস্র ধুলো আর ধূসর ঘেঁটে নেমে আসছে অনিঃশেষ অন্ধকার! বে-আব্রু সভ্যতার মারণভূমিতে সিলিকার বিকৃতি তৈরি করে একটা আত্মধ্বংসের প্রেক্ষাপট। 
 
যাকগে সেকথা। ওর একটা চিঠি এসেছে আজকের ডাকে। চিঠির প্রথম ও দ্বিতীয় পাতায় তেমন কিছু নেই। তৃতীয় তথা শেষ পাতায় সে লিখেছে ধূসর অন্তঃস্রাবী স্যাঁতস্যাঁতে এক আয়নার কথা, যার সাথে সুচরিতার অল্পদিনের বন্ধুত্ব এবং যা ওকে প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত করে পরিত্যক্ত ছুঁড়ে ফেলা পোশাকের মতো নির্মোহে। তারপর রোগা করে দেওয়া স্বপ্নদের নিয়ে তার চারদিকে ঘুরে যায় অনবরত—অর্ধেক স্বার্থপরতা, অর্ধেক অনুভূত নারীর মতো। সুচরিতা লিখেছে— ঠিক এখান থেকেই সে সন্দেহ করতে থাকে আয়নাকে। তাদের সম্পর্কটা ভেঙে যায়। 
 
আচ্ছা, আজ রাতে আমরা যদি এমন একটা স্বপ্ন দেখি— আমরা দড়ি টানাটানি খেলছি, মানে আমি আর সুচরিতা! সংসারের টানাটানিতে সম্পর্কের শরীরে যদিও এতবছরের রক্তাল্পতা, তবু সামান্য ঝুঁকি তো নিতেই হবে দুজনকে। কারণ পরিণতিশূন্য এই খেলার জন্য সবকিছু ছেড়ে দেওয়া যায় এবং দেবোও। যদিও খেলার সময় পরস্পরের জন্য গোপন দুর্বলতার সমর্থন থাকবে আমাদের। হ্যাঁ, এভাবেই খেলাটা শুরু হল। কিন্তু,— "কেউ কথা রাখেনি"। প্রেক্ষাপট : হার আর জিৎ — 50:50 অনুপাতে এক জবরদস্ত ম্যাচ হল।
মজার কথা, খেলাশেষে করমর্দনের পর আমি আর সুচরিতা পঞ্চাশ-পা হেঁটে গিয়েও কিন্তু পিছন ফিরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম একবার
সামান্য পঞ্চাশ পা,... তবু, খেলায় যে শুধু প্রতিযোগিতাই থাকে, গট-আপ-এর কোনো কোড, রুলবুকে নেই বলেই কেউ কাউকে কোনওদিনই আর দেখতে পেলাম না!
শুধু বুকের মধ্যে কী হয়েছিল সেটা না-বলাই থাকুক। ডুবতে দাও স্বপ্নদের, বেরিয়ে যাওয়া বাতাসকে ফের বুকের মধ্যে ফেরাতে পারব না। সত্যিই কি তাই? নাকি আঙুরফল টক, ...জানি না! 
 
মেমরি লেনে ছিন্নভিন্ন হৃদপিণ্ডে উচ্ছৃঙ্খল রভসক্রান্তি। চাঁদনি রাতে সাজিয়ে রাখি ল্যাভেন্ডার পিপাসা আর ব্যথার ক্লিভেজে লুকিয়ে রাখি হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের মধুর মহুয়া। অপহৃত স্বপ্নেরা বিষাক্ত শূন্যের ক্যাসিনোয় সুর তোলে। নিভন্ত অলিন্দে প্রজাপতি দিনগুলির হাংরি রিংটোন। নস্টালজিক স্মৃতির প্রস্রবণে উপলব্ধির উগ্র ঘ্রাণ রক্তস্রোতে বয়ে আনে ফারেনহাইট ভাঙা জংলি উত্তাপ। তুষানলের আগুনে হাভাতিয়া মন পুড়তে পুড়তে হয়েছে শ্মশান... 
শামুকের ধূসর শ্লথ যাপনছায়ায় গোটানো শিরদাঁড়া বেয়ে উঠে আসছে হারানো প্রিয়তমার বিয়োগ-হেমলক। অদ্ভুত এক আর্তি! এক ঘোরের মধ্যে অলৌকিক এক যাপন আর অমোঘ মৃত্যুর দিকে হেঁটে যেতে যেতে চেতনাপ্রবাহে ভেসে ওঠে ফেলে আসা কিছু ক্ষণমুহূর্ত অথচ অমূল্য সময়। কতটা সুখস্মৃতি বা যন্ত্রণার এই বেঁচে থাকা, সে-ও এক অমোঘ প্রশ্ন! প্রেম ও পারভারশনের অন্তর্বিতর্ক ও টানাপোড়েনের মধ্যে এই প্রাত্যহিক যাপনের মাঝখান দিয়ে জীবনের আড়ালে বয়ে চলে যে জীবন বা 'মহাজীবন', তাকে ছুঁয়ে থাকার এ এক অনিবার্য আর্তি! তাই রাতজাগা চোখে তনমনে আদিম প্রেমের মায়াঘোরে তখনও নীল কুয়াশায় উড়ে চলা এক মুগ্ধ প্রজাপতি, আমার সেই শাশ্বত প্রিয়তমাসু, সুচরিতাসু... 
 

No comments:

Post a Comment

সে কি তৃপ্ত— ?


Popular Top 10 (Last 7 days)