প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

ঝড়ের রাতে | বিদ্যুৎ মিশ্র

বাতায়ন / ছড়া/৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/ ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছড়া বিদ্যুৎ মিশ্র   ঝড়ের রাতে   ঝড়ের...

Thursday, August 7, 2025

নিয়তি | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/১তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
নিয়তি

"কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না তুই বড্ড বোকা আর বড়ই হতভাগ্য রে, তোর মতন এমন সাদাসিধে আর ভালমানুষ যেন কেউ না হয়।"


আজ অম্লানের মৃতদেহ ঘিরে সবাই হায়-হায় করছে, যে মানুষটা একদিন দুহাতে খরচ করত, কেউ এক হাজার টাকা চাইলে তাকে দুহাজার টাকা দিয়ে দিত কত লোক যে তাকে ভাঙিয়ে গাড়ি-বাড়ি করে নিল, তার ঠিক নেই আজ সেই মানুষটাকেই দেনার দায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হল।

অম্লানের দিদি তার শুকনো চোখদুটো মুছে-মুছে জল বার করার চেষ্টা করে কান্না-কান্না গলায় বলল,
-মা কতবার বারণ করত বাবা, কলশির জল গড়িয়ে-গড়িয়ে খেতে-খেতে একদিন শূন্য হয়ে যায় কে শোনে কার কথা রোজগার করে যা খুশি কর না, কে বারণ করেছে? পিতৃপুরুষদের সম্পত্তি নিয়ে বড়লোকি দেখাতে গিয়ে নিজেও শেষ হল, আমাদেরও সর্বশান্ত করল
অম্লানের প্রাণের বন্ধু নির্মল ওখানে ছিল, সে আর থাকতে না পেরে বলল,
-দিদি কে বলেছে ও রোজগার করত না? আপনিও তো জানেন ও ইউনিভার্সিটির নাম করা প্রফেসর ছিল তাছাড়া বাড়িতেও প্রচুর ছেলেমেয়ে পড়াত
-হ্যাঁ তুমি তো সব জেনে বসে আছ, যা টিউশন করত সবই তো বিনা পয়সায় খরচ তো করত পৈতৃক সম্পত্তি থেকে
-হ্যাঁ সেটা ওরই ছিল, মাসিমা আমায় সব বলেছেন, আপনার প্রাপ্য তো বিয়ের সময় সবই আপনি বুঝে নিয়েছিলেন
-আজ কোথায় এমন ভাইয়ের জন্য গর্ববোধ করার কথা তা না করে আপনি নিন্দে করছেন!
-এই তুমি চুপ কর তো কে বলেছে তোমাকে এত কথা বলতে? মা যে তোমায় বলেছেন আমার প্রাপ্য আমি পেয়েছি তার কোন প্রমাণ আছে তোমার কাছে?
-হ্যাঁ আছে এই যে ওঁর দলিল এতে সব লেখা আছে
-ওটা তোমার কাছে কী করে এল?
-মাসিমাই দিয়ে গিয়েছিলেন আমায়, বলেছিলেন আমার ছেলের তো কিছু ঠিক নেই ও তো শুধু দান করতে শিখেছে এই দলিলটা তোর কাছে গচ্ছিত রাখ
-তবে তো এই দলিলটা এখন আমার
- না তার কারণ এই বাড়ি বন্ধক দিয়ে ও ধার শোধ করতে চেয়েছিল যারা বন্ধক নিয়েছে তারা কদিনের মধ্যেই বাড়িটার দখল নেবে চারিদিকে দেনা হয়ে গিয়েছিল কারণ দান ছাড়াও ওর মরণ অসুখে ধরেছিল ক্যানসার, কিছুতেই চিকিৎসা করাতে চাইত না আমি জোর করে নিয়ে গিয়ে করাতাম শেষের দিকে যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারত না আমায় বলেছিল,
-আমায় ছেড়ে দে তুই, আমায় মরতে দে আমি আর পারছি নাআমি ওকে বলেছিলাম, আমি আমার নামে অফিস থেকে লোনের অ্যাপলাই করেছি ওটা এসে গেলেই তোকে নিয়ে বম্বে যাব যাদের কাছে ও টাকা পেত কেউ সামান্য কিছু ঠেকাল কেউ অস্বীকার করল, এ সব জানেন কিছু? আজই ওকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবার কথা আজ সকালে এসে দেখি সব শেষ করে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে, চির শান্তির ঘুমে। হায় রে নিষ্ঠুর নিয়তি— এই দিদির কাছ থেকেই তুই রাখি পরতিস, ভাইফোঁটা নিতিস— আর দিদির তোর শোকের চেয়ে সম্পত্তির শোক অনেক বড় হয়ে গেল রে! নিয়তির কী পরিহাস! যারা প্রতিটা প্রয়োজনে তোর কাছে টাকার জন্য ছুটে আসত আজ তারা কোথায় রে? কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না তুই বড্ড বোকা আর বড়ই হতভাগ্য রে, তোর মতন এমন সাদাসিধে আর ভালমানুষ যেন কেউ না হয় কারুরই এত ভাল হওয়ার দরকার নেই।
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)