প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

শারদ | উৎসবের অঙ্গীকার

  বাতায়ন/শারদ/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন , ১৪৩২ শারদ | সম্পাদকীয়   উৎসবের অঙ্গীকার "নারীতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পুরুষতন্ত্...

Monday, September 15, 2025

ঈশ্বরের দরবারে | উলন পাল রকি

বাতায়ন/শারদ/নাটক/৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | নাটক
উলন পাল রকি
 

ঈশ্বরের দরবারে

 
[রূপকধর্মী দার্শনিক নাটক]
সময়কাল: অলৌকিক সত্যপুরী এবং মানুষের বাস্তব জগৎ
চরিত্র:
ঈশ্বর— পরিপূর্ণ নিরপেক্ষ বিচারক
বিশ্বাস— কোমল আলোকিত আত্মা
যুক্তি— বিশ্লেষণধর্মী জিজ্ঞাসু যুক্তিবাদী আত্মা
সন্দেহ— রহস্যময় তির্যক প্রশ্নাত্মক আত্মা
মানবী, ছাত্র, বালক, জনতা— প্রতীকী মানুষ, সময়োপযোগী চরিত্র
 
দৃশ্য ১: ঈশ্বরের দরবার
 
[পটভূমি: এক বিশাল প্রাঙ্গণ। মাঝখানে স্বর্ণজ্যোতির আসনে ঈশ্বর। সামনে তিনটি স্বচ্ছ আসন। আকাশ আলো-ছায়ার মাঝে আন্দোলিত।]
[আলো: সোনালি নরম আলো। মাঝে মাঝে গাঢ় নীল।]
[আবহসংগীত: ধীর, গম্ভীর পিয়ানো ও ঝংকার।]
 
(আলো ফেড ইন। ঈশ্বর বসে আছেন। তিনটি আসনে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে)
 
ঈশ্বর (গম্ভীর ও ধীর স্বরে): তোমরা আমার প্রাচীন আত্মারা—বিশ্বাস, যুক্তি, আর সংশয়। যুগে যুগে মানুষের মনের ভেতর তোমাদের লড়াই চলেছে। আজ আমি জানব—কে আমাকে সত্যিকারে চেনে?
বিশ্বাস (নরম কণ্ঠে): প্রভু, আমি হৃদয়ের পথ চিনি। যেখানে আলো নেই, আমি সে আলো নিই।
যুক্তি (গভীর, সংযত স্বরে): আমি যাচাই করি, পরখ করি। অন্ধ মেনে নেওয়া নয়, আমি খুঁজি।
সন্দেহ (হাস্যরস মেশানো কণ্ঠ): আমি প্রশ্ন তুলি। কেউ বলে ভয়, কেউ বলে মুক্তি। কিন্তু প্রশ্ন ছাড়া কি সত্য টেকে?
ঈশ্বর: তিন দিন, তিন পথ। পৃথিবীতে যাও। মানুষকে পথ দেখাও। যে সত্যে পৌঁছাবে—সে পথই হবে সত্যপথ।
 
দৃশ্য ২: মানুষের জগৎ
দৃশ্য ২.১: বিশ্বাসের যাত্রা
 
[পটভূমি: এক ধ্বংসস্তূপ গ্রাম। পোড়া ঘর, কেঁদে ফেলা একটি নারী।]
[আলো: ধূসর, তারপর ধীরে সোনালি আলো ফোটে।]
(বিশ্বাস ধীরে নারীর পাশে এসে বসে)
 
বিশ্বাস: তুমি একা নও। কেউ তোমার কান্না দেখছে।
নারী: কে? আমি তো কাউকে দেখি না!
বিশ্বাস: চোখ দিয়ে নয়... হৃদয়ে খোঁজো।
(বিশ্বাস একটি ছোট্ট প্রদীপ জ্বালায়। নারী শান্ত হয়। দূরে শিশুর হাসির শব্দ শোনা যায়)
 
দৃশ্য ২.২: যুক্তির কক্ষ
 
[পটভূমি: বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হল। ছাত্ররা বিতর্কে মগ্ন।]
[আলো: সাদা আলো, তীক্ষ্ণ ও পরিষ্কার।]
 
ছাত্র: ঈশ্বর আছে কিনা, তা কীভাবে জানব?
যুক্তি (হাসিমুখে): প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস, কেবল মনগড়া কল্পনা। বিজ্ঞান যেখানে থামে, আমি সেখানে প্রশ্ন করি।
ছাত্র ২: কিন্তু ভালবাসা? তার কি সমীকরণ আছে?
যুক্তি (থেমে গিয়ে): ভালবাসা... হয়তো অনুভব, কিন্তু...
(যুক্তি চুপ করে। চিন্তায় পড়ে যায়)
 
দৃশ্য ২.৩: সন্দেহের রাজ্য
 
[পটভূমি: শহরের এক ব্যস্ত মোড়। মানুষ হাঁটছে, ক্লান্ত, বিভ্রান্ত।]
[আলো: ছায়াময়, মাঝে মাঝে হালকা নীল ঝলক।]
 
সন্দেহ (কানে ফিফি): তোমার বিশ্বাস... তাকে কে বানিয়েছে? তোমার যুক্তি... তার কি শেষ আছে? তোমরা সবাই শুধু ধরে নিচ্ছ।
মানুষ ১: তাহলে... সত্য কি নেই?
সন্দেহ (ধীরে হেসে): সত্য? তুমি যেটা জানো, তা কি সত্য?
(মানুষেরা থমকে দাঁড়ায়, বিভ্রান্ত, সন্দেহের ছায়া ছড়িয়ে পড়ে)
 
দৃশ্য ৩: ফিরে দেখা
 
[পটভূমি: আবার সত্যপুরী। ঈশ্বরের দরবার। তিন আত্মা ফিরে এসেছে।]
[আলো: ঈষৎ গাঢ়, তারপর ধীরে উজ্জ্বল।]
 
সন্দেহ: তারা কাউকে পুরোপুরি পায়নি। কারণ সবই অনিশ্চয়।
যুক্তি: আমি প্রমাণ খুঁজেছি। কিছু পেয়েছি, কিছু পাইনি।
বিশ্বাস (চুপচাপ): আমি তাদের সঙ্গে বসেছি। চোখে হাত রেখেছি। উত্তর দিইনি, কিন্তু শান্তি দিয়েছি।
ঈশ্বর (স্নিগ্ধ হাসিতে): তোমরা প্রত্যেকেই আমার অংশ। সত্য—তোমাদের মাঝেই আছে। কে বেশি? তা নয়, বরং একসাথে—তবেই সত্য সম্পূর্ণ।
 
চূড়ান্ত দৃশ্য: একত্রতা
 
[বিশ্বাস, যুক্তি ও সন্দেহ—তিনজন একে অপরের দিকে তাকায়]
 
বিশ্বাস (হাত বাড়িয়ে): আমরা একা নই।
যুক্তি (হাত ধরে): জ্ঞান শুধু প্রশ্নে নয়, অনুভবেও।
সন্দেহ (মুচকি হেসে): আমি প্রশ্ন তুলব, কিন্তু থামাব না। ভাবতে শেখাব।
(তারা একসঙ্গে হেঁটে যায়)
ঈশ্বর (ধীরে): সত্য কোন একরঙা ছবি নয়— সত্য হল সেই আলো— যা বিশ্বাসের দীপ্তি, যুক্তির প্রতিফলন,
আর সন্দেহের ছায়ার মধ্য দিয়ে প্রস্ফুটিত হয়। তুমি যদি ঈশ্বরকে জানতে চাও, তবে বিশ্বাস করো, প্রশ্ন করো, সন্দেহ করো— কিন্তু একে অপরকে বাদ দিও না। কারণ সত্য—এমন আলো, যা সমস্ত রঙের সমন্বয়ে জ্বলে।
 
যবনিকা

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 10 (Last 7 days)