বাতায়ন/ধারাবাহিক
উপন্যাস/৩য় বর্ষ/৩০ সংখ্যা/২৮শে কার্ত্তিক,
১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
অজয় দেবনাথ
মউ
[৯ম পর্ব]
Statutory warning.
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। Smoking is harmful to your health.
অ্যালকোহল সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। Alcohol consumption is harmful to your health.
"আকাশের কালো মুখ কাটছে না কিছুতেই। পাশের বাগান থেকে ব্যাঙের ডাক ভেসে আসছে। কলকাতায় ব্যাঙের ডাক তাও বালিগঞ্জে ভাবাই যায় না। এতক্ষণে হস্টেলে ফিরে যাবার সব সম্ভাবনাই বন্ধ হয়ে গেছে বোধহয়।"
পূর্বানুবৃত্তি পড়াশোনার ফাঁকে ওরা রোজই প্রেমের
খেলা খেলছিল। শুভ্রার শরীরের প্রতি কৌতূহল, নারী শরীরের প্রতি কৌতূহল সম্পূর্ণই
জানা হয়ে গিয়েছিল সুখের শুধু তার এক আদর্শ ছাড়া। ওদিকে
মউয়ের সম্পর্কেও সব কথা জেনে নিচ্ছিল সুখ। এমনকি মউয়ের ফিজিক্যাল রিলেশনের কথাও।
তারপর…
-যা শুনেছি তাই বললাম, আমার কথা
নয়।
-লোকের কথায় আমার ভারী বয়েই গেছে।
মউ এবার চেপে ধরার চেষ্টা করে,
-সে নাহয় গেল। কিন্তু তুমি বিয়ে
করলে না কেন? তুমিও কি জীবনে পস্তাচ্ছ না?
সুখ মউয়ের কথা শুনতে শুনতে আর
নিজের বিশ্লেষণ সম্বন্ধে ভাবতে ভাবতে বলল,
-আমার কথা বাদ দে, এই তো বেশ আছি।
তাছাড়া তুই এত পাকাপাকা কথা বলছিস কেন!
মউ হাসে,
-আমি একটু পাকাই, তবে তুমি বারণ
করলে তোমার সঙ্গে আর এভাবে কথা বলব না।
সুখ মউয়ের কথার ধরনে হেসে ফেলে,
-না না, নিজের মত সবসময় খোলাখুলি
প্রকাশ করার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার থাকা যায়। আর জীবনে
আনন্দ না থাকলে সেই জীবনের কোনো অর্থ হয় না।
মউ যেন হাতে চাঁদ পায় সোল্লাসে
বলে ওঠে,
-আমারও তাই মনে হয়। জীবন একটাই
যেমন খুশি বাঁচো। এ জীবন গেলে ফিরে আসবে না আর। তাই জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত নিংড়ে
নাও, উপভোগ করো।
মউয়ের মনোভাব সুখের বেশ ভালই লাগে।
১২
খুব বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন। কখনও
টিপটিপ ঝিরঝির, কখনও মুষল ধারে। এই নিয়ে টানা তিনদিন। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের ফল।
যদিও মায়ের কথায়, খনার বচনে ‘শনির সপ্তা মঙ্গলের তিন, এক বুধে পনেরোদিন’। ডিভিসি
না বলে জল ছেড়েছে, বাঁধ ভেঙে যাবার মতো পরিস্থিতি। জেলায়, কলকাতায় বন্যা। কলেজ
স্ট্রিটে নৌকা চলছে। সত্যি এ ডিভিসির ভীষণ অন্যায়, কেন না বলে জল ছাড়বে! তাতে যদি
ডিভিসির বাঁধ ভাঙে তো ভাঙুক, তাতে কার কী! আর কলেজ স্ট্রিটে ব্যাঙে হিসি করলেও তো
কোমরজল। সে আর নতুন কথা কী!
বুধবার ভোর-রাত্রি থেকে বৃষ্টি
শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার। তিনদিন দেখা হয়নি শুভ্রার সঙ্গে। হস্টেলে ফোনের পর ফোন।
আজ যাবেই শুভ্রার কাছে যেভাবেই হোক। কাল-পরশু দেখা হবে না, ওর বাবা-মা বাড়িতেই
থাকবে। এখন চিন্তা কলেজ স্ট্রিট থেকে বালিগঞ্জে যাবে কীভাবে! পাবলিক ট্রান্সপোর্ট
পাওয়ার চান্স নেই। মনে হয় এগারো নম্বরই ভরসা। অবশ্য বিল্ব যদি দুর্যোগ মাথায় নিয়ে
বন্যায় ভেসে যাওয়া নদী সাঁতরে পার হয়ে চিন্তার কাছে পৌঁছোতে পারে, সে কেন পারবে
না! পারতেই হবে তাকে।
সকালসকাল বেরিয়ে জল ঠেলতে ঠেলতে
শিয়ালদা থেকে এক সংবাদপত্রের গাড়িকে রিকোয়েস্ট করে খানিক দূর অবধি যেতে পারল সুখ।
তারপর এদিক-ওদিক করে, কখনও-বা পায়ে হেঁটে পৌঁছোল শুভ্রার বাড়ি। ওপরের জল নীচের জলে
ভিজে একেবারে চান। ঠকঠক ঠকঠক করে কাঁপছে। শুভ্রা টাওয়েল, ওর বাবার পাজামা-পাঞ্জাবি
দিয়ে বলল,
-জামাকাপড় ছেড়ে গরম জলে স্নান করে
নাও আগে, আমি গিজার চালিয়ে দিচ্ছি।
স্নান সেরে বেরতেই একটা কাচের
গ্লাসে দু-পেগ ব্র্যান্ডি এগিয়ে দিল,
-এটা খেয়ে নাও।
সুখ গ্লাসটা মুখের কাছে নিয়ে,
-আমি খাই না তাছাড়া বিচ্ছিরি
গন্ধ, বমি হয়ে যাবে।
-ডক্টরস্ ব্র্যান্ডি, মাত্র
দু-পেগ খেলে কিচ্ছু হবে না, এটা না খেলে বরং অসুখ করবে।
সুখ নাক টিপে কোনরকমে গলাধঃকরণ
করতে যাচ্ছিল। শুভ্রা বলল,
-আস্তে একসঙ্গে না, সইয়ে সইয়ে,
নইলে অসুবিধা হবে।
সুখ অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য ছেলের
মতো খেয়ে নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্র্যান্ডি অনভ্যাসের মগজে, শরীরে ক্রিয়া শুরু
করল।
-আমার মাথা ঘুরছে, ঝিমঝিম করছে।
দাঁড়াতে পারছি না।
শুভ্রা সুখকে ধরে বিছানায় শুইয়ে
দিল। গায়ে একটা ব্ল্যাঙ্কেট টেনে দিল। নিজেও ব্ল্যাঙ্কেটের মধ্যে ঢুকে সুখকে জড়িয়ে
ধরে দুজনের শরীরের ওম মিশিয়ে নিল।
বেশ একটা জম্পেশ ঘুম দিয়ে উঠল
সুখ, তখন বিকেল কিন্তু দেখে মনে হয় ঘন রাত্রি। ঘন রাত্রি নেমেছে পৃথিবীর বুকে।
শুভ্রা দু-কাপ কফি এনে এক-কাপ সুখকে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-কেমন লাগছে এখন?
-ভাল, ফ্রেশ লাগছে।
বাইরে তখনও অঝোর ধারায় বৃষ্টি,
সেই সঙ্গে ঘনঘন মেঘের গর্জন আর বিদ্যুৎচমক। মনে হচ্ছে সৃষ্টি রসাতলে যাবে। অন্ধকার
করে আছে। আকাশের কালো মুখ কাটছে না কিছুতেই। পাশের বাগান থেকে ব্যাঙের ডাক ভেসে
আসছে। কলকাতায় ব্যাঙের ডাক তাও বালিগঞ্জে ভাবাই যায় না। এতক্ষণে হস্টেলে ফিরে
যাবার সব সম্ভাবনাই বন্ধ হয়ে গেছে বোধহয়। ফিরতে না পারলে কী করবে সুখ! থাকবে
কোথায়। শুভ্রার কাছে জানতে পারল কলকাতা সম্পূর্ণই জলের তলায়। ডিভিসি জল ছেড়েই
চলেছে, পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা নামিয়েছে। সমস্ত নীচু
জায়গায় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকার্য চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে আজ
এখানেই থেকে যেতে হবে। বাবা-মা ফিরতে পারবে না। জমা জলে কোনো গাড়িই চলার অবস্থায়
নেই। দুজনেই হসপিটালে থেকে যাবে।
ক্রমশ

Aditi Chatterjee, অপেক্ষায় থাকলাম সুখের বাবা -মা র কি হলো জানতে, সুখ -ই বা বন্যাতে শুভ্রার বাড়িতে কিভাবে থাকবে জানতে ।
ReplyDeleteঅপেক্ষা নিরসনের জন্য আমিও থাকলাম।
Deleteউপন্যাস তার ঢঙে চলুক, কৌতূহল পাঠকের আর লেখকের কাছে তা অনন্য মূলধন যা জিইয়ে রেখে পুরো গল্পকে আরও মূল্যবান আরও রোমাঞ্চকর করে তুলবে এটাই স্বাভাবিক। স্বাগত সাহিত্য 🙏
ReplyDeleteআপনার মন্তব্যও আমার কাছে অমূল্য মূলধন যা আমাকেও রোমাঞ্চিত করে। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ জানাই প্রদীপ-দা।
Delete