নৃপেন চক্রবর্তী
সংখ্যা | রম্যরচনা
প্রতিমা পাল
চশমা
"বাবারে বাবা, অত হ্যান্ডসাম লোক আমাকে দেখছে, উফ্ আর পারি না! মনে যেন বাঁদর নাচ শুরু হয়ে গেল। আমি চশমার উপর দিয়ে দেখছি আর মুচকি মুচকি হাসছি, তাও দেখি তাকিয়েই আছে।"
ইদানিং কয়েক মাস ধরে শাড়ি
আর ম্যাচিং গয়নার প্রতি এত টান কী করে তৈরি হলো ঠিক মনে করতে পারছি না!
টোটোতে করে কোথাও যাওয়া বা আসার সময় কোনো দোকানে ঝুলিয়ে রাখা শাড়ি যদি একবার
পছন্দ হয়ে গেল, ব্যস হয়ে গেল। যতক্ষণ
না সেটা কিনে এনে পাড়ার সবাইকে দেখাতে পারছি ততক্ষণ ঘুম গাছে ওঠে। আমাদের
পাড়াগাঁয়ে একটা কিছু কিনলেই আশেপাশের সবাইকে ডেকে ডেকে এনে দেখানোর একটা রীতি
আছে। সবথেকে তাজ্জব ব্যাপার কোনো শাড়ি পছন্দ করে কিনে এনে যখন সবাইকে দেখাই... এমন
একজনকেও খুঁজে পাই না যে বলবে যে শাড়িটা সুন্দর হয়েছে। মনটা আমার বাংলার পাঁচের
মতো হয়ে যায়। তা হোক গে, শোকেসে থরে থরে
সাজানো থাকলেই শান্তি।
কয়েকদিন ধরেই একটা শাড়ি
দেখে মনে চমক লেগেছে। আজ সেটা কিনে ফেরার পথে টোটোর জন্য অপেক্ষা করছি, দেখি আমার সামনাসামনি এক গুডলুকিং হ্যান্ডসাম লোক একদৃষ্টে
আমাকে দেখছে। বাবারে বাবা, অত হ্যান্ডসাম লোক
আমাকে দেখছে, উফ্ আর পারি না! মনে যেন
বাঁদর নাচ শুরু হয়ে গেল। আমি চশমার উপর দিয়ে দেখছি আর মুচকি মুচকি হাসছি, তাও দেখি তাকিয়েই আছে। ঝটপট করে ফোনের স্ক্রিনে মুখটা
দেখে নিলাম, চুলগুলো ঠিকঠাক আছে
তো! এমনিতেই সূর্যদেব পরমবিক্রমে তাপ ছড়াচ্ছেন তার উপর এক্সাইটমেন্ট। ঘেমে নেয়ে
চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে গেল। যেই না চারচোখ খুলে গুডলুকিংয়ের দিকে
তাকিয়েছি, ওমা... সেকি... সে ছোঁড়া
তো আমার দিকে তাকায়নি… তাহলে?
না না এ
অপমান কিছুতেই গা সওয়া নয়। আমি ছোকরার চাউনির চিরুনিতল্লাশি চালিয়ে যা দেখলাম, তাতে তো চক্ষু চড়কগাছ। আমার ঠিক ৭৫° কোণে দাঁড়ানো সুন্দরীর দিকে তার চোখ। মনে মনে নিজের উপর এত
রাগ হলো... ইশ্! কেন যে সুন্দরী হলাম না। তার থেকেও বেশি রাগ হচ্ছে চশমার দোকানের লোকটার
উপর— কী যে ভুলভাল লেন্স লাগিয়ে
দিয়েছে। মন চাইছে তক্ষুনি গিয়ে ইং বিং চিং করে ভস্ম করে দিয়ে আসি। খামোখা ভাল
চোখটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে...
সমাপ্ত

No comments:
Post a Comment