প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

তৈমুর খান সংখ্যা | মগজ ও অঙ্গ

বাতায়ন/ তৈমুর খান সংখ্যা/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/ ৩২তম সংখ্যা/১১ই অগ্রহায়ণ , ১৪৩২ তৈমুর খান সংখ্যা | সম্পাদকীয়   মগজ ও অঙ্গ "অপরিসীম মেধ...

Tuesday, November 25, 2025

ঘন কুয়াশার আড়ালে [১ম পর্ব] | কামাল কাদের

বাতায়ন/তৈমুর খান সংখ্যা/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/৩তম সংখ্যা/১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
তৈমুর খান সংখ্যা | ধারাবাহিক গল্প
কামাল কাদের
 
ঘন কুয়াশার আড়ালে
[১ম পর্ব]

"নাগমা এই প্রথম তার সপাঠীদের সাথে কৌতূহলবশত মিছিলে যোগ দিল। বলা বাহুল্য, নূতন পরিবেশে আনন্দঘন মুহূর্তগুলি বেশ ভালই কাটছিল। মিছিলটি শহীদস্মৃতিস্তম্ভের কাছাকাছি আসতেই অঘটনটি ঘটে গেল।"

 
ভারতের কাশ্মীর রাজ্যকে পৃথিবীর ভূস্বর্গ বলা হয়। সেই সুদূর কাশ্মীর থেকে বাংলাদেশের ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে এসেছে নাগমা কোরাইশীকী এমন আকর্ষণ যার জন্য তাকে ভারতের অনেক নাম করা মেডিকেল কলেজ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে তার আগমন? প্রশ্নটি ছিল এক বাঙালি সাংবাদিকের। উত্তরে নাগমা বলেছিল, "অনেকগুলি কারণ রয়েছে যার মধ্যে প্রথমটি হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের গ্র্যাজুয়েটদের ভারতের ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন দ্বারা অনুমোদিত এবং এখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভরণ-পোষণের খরচপত্র অনেক কম। তাছাড়া এদেশের সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং ধর্মীয় আচার-ব্যবহার আমাদের সাথে প্রচুর মিল রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা নাই বা বললাম।"
নাগমার কয়েকমাস কেটে গেছে ঢাকা শহরে। এখন বাংলা নববর্ষ উৎসব উদ্‌যাপনের দিন প্রায় কাছাকাছি। তরুণ সমাজ বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই দিনটি পালন করার জন্য তীর্থের কাকের মতো তারা অপেক্ষা করে থাকে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এবং তার আশেপাশের কলেজ এবং নানা শিল্প-কলা সংঠন, সাহিত্য-গোষ্ঠীদের মাঝে এই দিনটি উদযাপনের প্রস্তুতি একেবারে পুরো দমে চলছে।
নববর্ষের সেই আকাঙ্ক্ষিত দিনটি এল। নানা রংবেরঙের বৈচিত্র্যময় ব্যানার, ফেস্টুন, চিত্র, আরো কত ছাঁচের মডেল নিয়ে বিরাট মিছিল বের হলো যা নিজের চোখে না দেখলে বলা মুশকিল। লোকে লোকারণ্য। মোট কথা এ যেন এক স্বপ্নের রাজ্য।
নাগমা এই প্রথম তার সপাঠীদের সাথে কৌতূহলবশত মিছিলে যোগ দিল। বলা বাহুল্য, নূতন পরিবেশে আনন্দঘন মুহূর্তগুলি বেশ ভালই কাটছিল। মিছিলটি শহীদস্মৃতিস্তম্ভের কাছাকাছি আসতেই অঘটনটি ঘটে গেল। এতগুলি লোকের মাঝে হঠাৎ করে এক ঠগ দৌড়ে এসে তার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে দ্রুততার সাথে চলে গেল। নাগমা একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ঠগটি তার হাতটি এত জোরে চেপে ধরেছিল যে, সে তার হাতের মুঠোটি অনায়সে খুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল।
পবন রহমান তার ইউনিভার্সিটি বন্ধুদের সাথে ওই মিছিলেই ছিল। সে নাগমার ভয়ার্ত চিৎকার শুনে কিছু না ভেবে ঠগ ছেলেটির পিছনে দৌড়াল। পরিশেষে সে ছেলেটিকে ধরে নাগমার কাছে নিয়ে আসল। ছেলেটি বয়স প্রায় ১৫-১৬ বছর হবে। তার  করু চেহারা এবং দুঃখের কথা শুনে তাদের দুজনের বিশ্বাস হলো যে, সে অভাবের তাড়নায় এ-রকম কাজ করে যাচ্ছে। বাবার অনুপস্থিতিতে তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। আমাদের সমাজে এইরকম কাহিনি নূতন কিছু নয়। মনে হলো না সে মিথ্যা কথা বলছে। কী আর করা! নাগমার কাছে মাফ চাইয়ে ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়া হলো।
পবন এখন তো নাগমার কাছে হিরো। সে নাগমাকে বলল,
--রকম ঘটনা ছোট-বড় যে-কোনো শহরে হতে পারে, আপনাকে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে, বিশেষ করে জনতার ভিড় থেকে।
কথাগুলি বলে পবন চলে যাচ্ছিল। নাগমা পবনকে ডাকল। পবন পিছনে ফিরে তাকাল।
-বলুন
-আপনার নামটা তো জানা হলো না
ভাঙা ভাঙা বাংলাতে নাগমা প্রশ্ন করল।
-আপনি কি অবাঙালি?
-হ্যাঁ, আমি কাশ্মীরের মেয়ে, কয়েক মাস হলো ঢাকায় ডাক্তারি পড়তে এসেছি।
-ছি, ছি! দেখুন দেখি কী বিশ্রী কাণ্ড হয়ে গেল, আপনার নিশ্চয় বাংলাদেশ সম্বন্ধে একটা খারাপ ধারণা হলো। আর হ্যাঁ, আপনার বাংলায় কথা বলতে অসুবিধা হলে আমার সাথে আপনি অনায়াসে হিন্দি কিংবা উর্দুতে কথা বলতে পারেন। আমি পুরানো ঢাকার আদি অধিবাসী, আমি দু' ভাষাতেই কথা বলতে পারি।
-তা আর প্রয়োজন হবে না, আমি বাংলাতেই কথা বলতে চেষ্টা করব। এদেশে কয়েকবছর থাকব, বাংলা শিখব না তা কি হয়? তাছাড়া বাংলা ভাষাটা আমার কাছে মধুর মনে হয়।
-ভাল কথা, আমার নাম পবন, পবন রহমান।
-পবন তো হিন্দি শব্দ, মানে হলো মৃদু বাতাস।
-পবন বাংলা শব্দও বটে! হিন্দি এবং বাংলা এই দুটি ভাষা-সংস্কৃতি থেকে এসেছে।
-তা ঠিক!
বলে দুজনেই সম্মতি জানাল। তারপর পবন তার পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরাল।
-এ মা, আপনি সিগারেট খান?
নাগমা কিছুটা বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
-সিগারেট এবং চা এ দুটো হলো আমার ব্রেনের উর্বরতার সার। আমি স্টুডেন্ট পলিটিক্স করি। ও দুটো জিনি না হলে আমার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় আঘাত পায়, কাজে অলসতা আসে।
-আপনি নিশ্চয় জানেন, সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। যাকগে, আপনি কি সরকারি দলের হয়ে কাজ করেন?
-না না, আমি হলাম সিপিবি (কমিউনিস্ট পার্টি অফ বাংলাদেশ) দলের একজন সক্রিয় মেম্বার। আমরা অসহায় লোকদের মৌলিক জীবনযাপনের ন্যূনতম দাবির জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। কৃতকার্য হবো কী হবো না তা জানি না। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কিছুক্ষ নীরব থেকে পবন বলল,
-আমার একটু তাড়া আছে। দলের মিছিলের সাথে যোগ দিতে হবে।
-ঠিক আছে, আবার কী আপনার সাথে দেখা হবে?
-হতেও পারে। পৃথিবীটা অনেক ছোট হয়ে গেছে ডিজিটাল বিজ্ঞানের দৌলতে। আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সমাজবিজ্ঞানে এমএ পড়ছি। মাস্টার্স শেষ করে ভবিষ্যতে এই যে ছন্নছাড়া ছেলেটিকে দেখলেন তাদের মতো অভাগা মানুষদের জীবন নিয়ে রিসার্চ করার ইচ্ছা আছে। বাকিটা সময়ই বলে দেবে। আশা করছি কয়েক বছর ঢাকা ইউনিভার্সিটির আশেপাশেই থাকব, সুতরাং দেখাসাক্ষাৎ হওয়াটা অস্বাভাবিক হবে না।
এই বলে দুজনে দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিল।
 
পবন চলে যাবার পর নাগমার মনে হ, ছেলেটি দারু চটপটে এবং প্রাণবন্ত। কিছুটা খামখেয়ালি তো বটেই! এ সমস্ত ছেলেদের সাথে অনায়াসে ঘণ্টার পর ঘন্টা সময় কাটানো যেতে পারে। আবার কবে, কখন দেখা হবে কে জানে। হয়তো-বা জীবনে নাও দেখা হতে পারে। সে পবনের সম্বন্ধে এমন কেন ভাবছে? তার অবচেতন মনে কি পবনকে ভাল লেগে গেল? সবসময় তার দুচোখ ইউনিভার্সিটির, মেডিকেল কলেজের এদিকে-সেদিকে কী যেন খুঁজে বেড়ায়।
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 8 (Last 7 days)