বাতায়ন/তৈমুর
খান সংখ্যা/ধারাবাহিক উপন্যাস/৩য় বর্ষ/৩২তম
সংখ্যা/১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২
তৈমুর খান সংখ্যা | ধারাবাহিক উপন্যাস
অজয় দেবনাথ
মউ
[১১তম পর্ব]
"আচ্ছা মউ চাইছেটা কী! ওর আচরণ বিশেষ সুবিধার মনে হচ্ছে না। তার বয়স পঁয়তাল্লিশ হতে চলল, আর মউয়ের সবে কুড়ি। ‘বিকেলে ভোরের ফুল’ ফোটাতে এসেছে নাকি!"
পূর্বানুবৃত্তি নাটকের
স্ক্রিপ্ট খুঁজতে বসে গেল। স্ক্রিপ্টের ফাইলের মধ্যে থেকে অনেক পুরোনো দিনের একটা
ব্ল্যাক-অ্যান্ড-হোয়াইট ফটো বেরিয়ে মাটিতে পড়ল। মউ ছবিটা
কুড়িয়ে নিয়ে চুমু খেল। তারপর…
১৪
তখন সবে ক্লাস টু। কাজের চাপে
প্রায়ই রাত্রি জেগে টেমির আলোয় মাকে কাজ করতে হয়। পূরণের কাজ, কাজ অনুযায়ী পয়সা।
বার বার ঘুমে চোখ ঢুলে আসে। তবুও বিকল্প পথ নেই। একদিন ঘুমের ঘোরে সেলাই করতে করতে
অসাবধানে বাঁ-হাতের তর্জনিতে মেশিনের নিড্ল ঢুকে পুরো এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গেল। মা
যন্ত্রণায় কাতরে উঠল। মা-র কাতরানির শব্দে ছোট্ট সুখের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম-ভাঙা
চোখে সুখ দেখল রক্তে ভেসে যাচ্ছে। যন্ত্রণায় মা-র মুখ কালচে হয়ে গেছে। মা বার বার
আঙুলটা মুখে দিয়ে চুষছে কিন্তু কিছুতেই রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। যেই আঙুলটা মুখ থেকে
বের করছে আবার রক্ত বেরোচ্ছে। শেষে টেমি নিয়ে পাশে কমলামাসিদের বাড়ি যেতে কমলামাসি
চুন লাগিয়ে, একটা ছেঁড়া কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল।
কটা দিন কাজ করতে, জল ঘাঁটতে বারণ
করেছিল সবাই। শোনেনি মা, সব কাজই করেছে। বলেছিল, “আমার একলার সংসার, সুখটা ছোট,
সংসারের কাজ, সুখের দেখাশোনা, স্কুল… আমি না করলে কে করবে?” কিছুতেই স্কুল কামাই
করতে দিত না মা। বলত, “তোকে বড় হতে হবে সুখ, অনেক বড়। বড় হয়ে দশের একজন, দেশের
একজন হবি, সকলের মুখ উজ্জ্বল করবি। তোর বাবা ওপর থেকে তোর সুখ দেখে, তোকে সবাই
সম্মান করছে দেখে খুব খুশি হবে।”
মায়ের আঙুলের ব্যথা দিনদিন বেড়ে
গেল। শেষে কমলামাসি একদিন জোর করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে
ডাক্তারবাবু দেখে বললেন, “সেপটিক হয়ে গেছে, আর দেরি করলে আঙুল কেটে বাদ দিতে হত।
যা অবস্থা করেছেন! তবু চেষ্টা করে দেখা যাক একবার।” সে যাত্রায় অবশ্য কিছুদিন ভোগান্তির
পর মায়ের আঙুল ঠিক হল। সুখ কী আর করে মায়ের কষ্ট দেখতেও পারে না আবার কিছু যে করে
তাও তার সাধ্যের বাইরে। মাঝে মাঝে মায়ের আঙুলে ফুঁ দেওয়া, গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে
দেওয়া ছাড়া।
১৫
সুখের ছবিতে মউয়ের চুমু খাওয়ায়
সুখ আশ্চর্য হয়ে গেল! যতই তার ছোটবেলার ছবি হোক। আচ্ছা মউ চাইছেটা কী! ওর আচরণ
বিশেষ সুবিধার মনে হচ্ছে না। তার বয়স পঁয়তাল্লিশ হতে চলল, আর মউয়ের সবে কুড়ি।
‘বিকেলে ভোরের ফুল’ ফোটাতে এসেছে নাকি! মেয়েরা যতই কুড়িতে বুড়ি হোক, তার পক্ষে এ
সম্ভব নয়। তাছাড়া এই বয়সে… নতুন দায়িত্ব একেবারেই নয়। জীবন তাকে অনেক কিছু
শিখিয়েছে।
মায়ের কানে যদি বিষয়টা কোনভাবে
যায়, আগুপিছু কিছু চিন্তা না করেই ধেইধেই করে নাচতে শুরু করবে। মা এখনও হাল
ছাড়েনি, একে-ওকে-তাকে বলে বেড়াচ্ছে। মায়ের এই একটা ইচ্ছাই তার পক্ষে পূর্ণ করা
সম্ভব হল না। আর এতদিন যখন হয়নি এখন আর ভেবে কী হবে!
কিছুক্ষণ স্ক্রিপ্ট খোঁজাখুঁজির
পর সুখ জানতে চাইল,
-কী ধরণের নাটক চাইছিস?
-তুমি যেমন দেবে।
সুখ মনে মনে বিরক্ত হল,
-আচ্ছা মুশকিলে পড়া গেল তো! কোথায়
পারফর্ম করবি, সঙ্গে কে কে আছে, কত জন ক্যারেকটার চাই, সেসব না জানলে স্ক্রিপ্ট
সিলেক্ট করব কী করে!
মউ তাকে অবাক করে বলে বসল,
-সঙ্গে কেউ তো নেই। আমি তোমার
সঙ্গে নাটক করব, তুমি যেখানে করাবে সেখানেই করব।
সুখ চোখ বড় বড় করে বলল,
-আশ্চর্য! আমার সঙ্গে করবি! হঠাৎ…
কেন!
মউ যেন হঠাৎ আঘাত পেয়ে বিষাদ-মাখা
স্বরে বলল,
-কেন! আমার সঙ্গে নাটক করতে নেই
তোমার! কত ছাত্রছাত্রীই তো তোমার সঙ্গে নাটক করে!
সুখ মউয়ের কথা বলার ধরণে ছোট
বাচ্চাদের ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করার কথা মনে করে মনে মনে হাসল।
-আচ্ছা আচ্ছা আমি দেখছি, আর
মনখারাপ করতে হবে না তোকে।
জানতে চাইল সুখ,
-কবিতা আবৃত্তি করতে পারিস? আচ্ছা
তুই বরং একটা গান শোনা।
-কবিতা দিলে পড়ে দিতে পারি, তবে
তোমার মনের মতো হবে কিনা জানি না। আর, গান গাইতেই পারি। কী গান শুনবে বলো।
সুখ মনে মনে বেশ মজা পেয়ে বলল,
-‘কী গান শোনাব বলো…’
-মানে? একটা অন্য, নতুন গান বলতে
পারছ না!
সুখ মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল,
-কেন পুরোনো গান শুনতে নেই! না কি
সেগুলো সব খারাপ!
মউ কনফিডেন্সের সঙ্গে জেদি গলায়
তাকে অপেক্ষা করতে বলল,
-এক মিনিট, এক মিনিট, এক মিনিট…
বলতে বলতেই মোবাইলে ইউটিউব খুলে
সার্চ করতে করতে বলল,
-আর একবার লিরিক্সটা তুমি বলো-না
প্লিজ…
-‘কী গান শোনাব বলো, ওগো
সুচরিতা…’
ক্রমশ

একটা শিশির ভেজা সকালের গল্প পাচ্ছি যেন .... আহাঃ বড় মিঠে সে স্বাদ,,
ReplyDeleteমিষ্টি প্রেম আর মিষ্টি মেয়ের ছোঁয়া...
রোমান্টিক, রোমাঞ্চকর সেই অনুভূতি হচ্ছে ❤️
এটাই বোধহয় লেখকের সার্থকতা। আপনার রোমাঞ্চকর অনুভূতি, মিঠে স্বাদ, মিষ্টি প্রেমের ছোঁওয়ার রোমন্থন করাতে পেরে ভাল লাগছে।
Deleteঅপূর্ব
ReplyDeleteকোন জায়গাটা অপূর্ব জানতে খুব ইচ্ছে করছে পারমিতাদেবী।
Delete