বাতায়ন/অন্য চোখে/১ম বর্ষ/৮ম সংখ্যা/১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
স্মার্টফোনের কুপ্রভাব
স্মার্টফোনের কুপ্রভাবে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত? সমস্যাকে চিনুন, প্রতিকার করুন, সঙ্গে রয়েছেন বিশিষ্ট মনোবিদ
ছোট্ট একটা মুঠোফোন। প্রথম দিকে দূর থেকে দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনই যার প্রথম এবং প্রধান কার্যকারিতা ছিল। আজকের সময়ে এই ছোট্ট দূরভাষই হয়ে দাঁড়িয়েছে এক সঙ্গে বহু কাজের রূপকার বা মাল্টি টাস্কার। যেমন ওয়েব ব্রাউসিং অর্থাৎ ইন্টারনেটে যাবতীয় তথ্য নিমেষে চোখের সামনে এনে দেওয়া। অনলাইন গেম বা মোবাইলে খেলা। ছবি তোলা থেকে ভিডিও রেকর্ডিং করা এবং — সব কিছু ইন্টারনেটে আপলোড করে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরা। মুভি বা সিরিয়াল দেখা। পৃথিবীর মানচিত্রে নিজের অবস্থান চেনানো এবং গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া অর্থাৎ নেভিগেশনাল সিস্টেম হিসাবে কাজ করা। অনলাইন ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পাওয়ার মাধ্যম প্রভৃতি।
মুঠোফোনের এতগুলি কাজের জন্যই আজ তার নাম স্মার্টফোন— যা আজ মানুষকে চূড়ান্ত সৃষ্টিশীলভাবে নিজেকে প্রকাশিত হতে শুধু সাহায্যই করে না, বিনোদনের চূড়ান্ত মাধ্যম হিসেবেও কার্যকরী। এবং মানুষের প্রিয় বিষয়ের সঙ্গে সর্বক্ষণ সংযুক্ত করে রাখা।
কিন্তু সত্যিই কি মুঠোফোন সকলের জন্য এতটাই আনন্দদায়ক এবং কল্যাণকর হয়ে উঠেছে? সত্যিই কি সকলেই তার ব্যক্তিগত উন্নতির লক্ষ্যে মুঠোফোন হাতে পৌঁছে যাচ্ছে সাফল্যের দোরগোড়ায়?
উত্তরটা জানা আছে আমাদের সকলেরই। বড়রা তো বটেই, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যাদের এখন ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সময়, তারাও আজ মুঠোফোনের মোহিনী মায়ায় একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছে আত্মসংযোগ। মুঠোফোন আজ নাগিনির মতোই তার সহস্র ফণা বিস্তার করে গ্রাস করে নিচ্ছে তার ব্যবহারকারীদের।
কিন্তু কোভিড পরবর্তী অনলাইন শিক্ষার দুনিয়ায় দাঁড়িয়ে মুঠোফোনকে আমরা ফেলে দিতে পারছি না শিক্ষার্থীর হাত থেকে। বরং তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে শিখনের প্রচুর অনলাইন ব্যবস্থাপনায় — যেমন শিখন সংক্রান্ত ছবি সংগ্রহ, শিখন সংক্রান্ত ভিডিও নির্মাণ, ই-নোটিশ তৈরি। টেক্সট করার মাধ্যম হিসাবে প্রশ্নের উত্তর পাঠানো। শিক্ষামূলক ভ্রমণের সময় রাস্তা, মানচিত্র প্রভৃতির সাহায্যে ভ্রমণ পরিচালনা করা। অনলাইন ব্যাঙ্কিং পরিষেবা নেওয়া, ক্যালকুলেটরের ব্যবহার, তারিখ সময়ের নির্দেশ, দৈনন্দিন দেশের তথা বিশ্বের খবরাখবর সংগ্রহ, ওয়েব ব্রাউসিং, তথ্য সম্পাদনা ও স্ক্যান করা এমনকি বইয়ের পিডিএফ সংগ্রহ করে বই হিসেবে মোবাইলের ব্যবহার। যে-কোন ভাষায় লেখা তথ্যের অনুবাদক হিসেবে শিখন সংগ্রহ, বিভিন্ন ভিডিও পর্যবেক্ষণ করা প্রভৃতি।
তাহলে, শিক্ষার্থীকে আমরা কী জানাব? মুঠোফোন তুলে দেব তাদের হাতে? ইন্টারনেট পরিষেবা তো বটেই। এই দুইয়ের যুগল-বন্দি তাদের ছোট্ট দুনিয়ায় নিয়ে আসে বটে অফুরন্ত আলো। তার সঙ্গেই তাদের দুনিয়ায় তোলে মস্ত আলোড়ন। এই বিচিত্র, বিস্ময় জাগানো পরাবাস্তবের জগতে আকৃষ্ট হতে হতে তারা হয়ে যায় একান্তভাবে মুঠোফোন নির্ভর।
না কি, তাদের হাত থেকে সরিয়ে দেব মুঠোফোন। জানিয়ে দেব নেট-পরিষেবা তাদের জন্য নয়, কেবল মাত্র বড়দের জন্য? এই দ্বন্দ্ব আজ আমজনতার অন্তরে। প্রতি মুহূর্তে দ্বিমুখী ভাবনা ও তার ফলে ‘ডুয়াল স্ট্যান্ডার্ড’ আচরণ করতে করতে বাবা-মা শিক্ষক-শিক্ষিকা-সহ সমস্ত মরাল গার্জেনরা আজ বিভ্রান্ত, হতচকিত। আমরা তাদের জোর গলায় বলতে পারছি না, নেট পরিষেবার দরকার নেই। আবার নিশ্চিন্তে তাদের হাতে তুলেও দিতে পারছি না, এই বাস্তব বা অবাস্তব ভার্চুয়াল দুনিয়ার চাবিকাঠি।
আর এই সমস্ত কিছুর পরিণামে কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকাল শুধু নয়, শৈশবও জড়িয়ে যাচ্ছে মুঠোফোনের মায়ার বাঁধনে। ফলে ক্রমাগত তারা বাস্তব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, কেমন যেন এক অন্ধকার গুহাবাসী হয়ে যাচ্ছে। তারা হারিয়ে যাচ্ছে এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার নিজস্ব শব্দ, ছবি ও বিনোদনের জগতে। বাইরের জগত বা চারপাশের মানুষ ও পরিবেশের সঙ্গে থাকছে না কোন সংযোগ। যাকে আমরা বলি ‘সেন্সরি ওয়ার্ল্ড’। সেই ওয়ার্ল্ড বা জগত থেকে দূরে নিজেদের মনের মধ্যে কোন এক কল্পনার জগতে, যাকে আমরা নাম দিয়েছি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড— সেখানে বিচরণ করতে শুরু করছে। আর সমস্যার শুরু হচ্ছে এখান থেকেই।
[ক্রমশ]
সত্যিই শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে, সবার জীবন থেকে সময় হারিয়ে যাচ্ছে।
ReplyDeleteজয়িতা
DeleteKhub sundor lekha didi .. Tumi borabori khub valo lekho .. TV te bahuber dekhechhi tomar alochona ..sob somoi Tumi Amader ke lekha diye somriddhho korechho .. crystal clear concepts with positive problem solving pathways ., porer lekha r jonno wait kore thaktam .. thanks a lot !!
ReplyDeleteKhub sundor lekhoni te tule dharechis .ro phute uthuk ei lekhnir dharabahikota .
ReplyDeleteসমস্যাটা মিটবে কিভাবে সেটা তো আপনার জানা দরকার
ReplyDelete