প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

শেষ থেকে শুরু [৫ম পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/১ ৯ তম সংখ্যা/ ৩০শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ ধারাবাহিক উপন্যাস পারমিতা চ্যাটার্জি শেষ থেকে শুরু [৫ম পর্ব...

Saturday, June 17, 2023

লাইক | বুদ্ধদেব দাস

বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/১০ম সংখ্যা/১লা আষাঢ়, ১৪৩০

ছোটগল্প
বুদ্ধদেব দাস

লাইক

তুই কী আর ফোন করার সময় পাস না— স্মিতা রেগে গিয়ে দুম করে ফোনটা কেটে দিল। কয়েকদিন ধরে স্মিতার মেজাজটা যেন খিটখিটে। অস্বাভাবিক লাগছে স্মিতাকে। স্মিতা তো ও-রকম মেয়ে নয়। হাসিখুশি এক পুতুল পুতুল মেয়ে। কেন যে এ-রকম হল কে জানে?

“কী হয়েছে রে তোর আজকাল? একটুতে রেগে যাস!” মা রান্নাঘর থেকে হাঁক দিলেন। “কে ফোন করেছিল কে?” মা এবার উত্তর না পেয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তখন ও এক মনে মাথা গুঁজে ফোন ঘেঁটে চলেছে। এখন এ-রকমই চলে প্রায় রাত দু’টো-আড়াইটে পর্যন্ত। “কী যে করে কী জানি।” মা জিজ্ঞাসা করলে মুখের উপর বলে, “তোমার জেনে লাভ নেই।”

সত্যি বলতে কী মেয়েটা এ-রকম ছিল না। দিন কে দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। মায়েরও চিন্তা হয়। কিন্তু কিছুই বলতে পারে না। মেয়ে বড় হয়েছে। কোন কিছু যদি করে বসে। ওর বন্ধুবান্ধবীরা বলে ও নাকি ভাল কবিতা লিখতে পারে। ও নাকি একদিন বড় কবি হবে।


- কী রে কে ফোন করেছিল বললি না তো?
- কে আবার! রনি ফোন করেছিল।
- ফোন ধরলি না?
- দেখছ তো, আমি এখন কাজ করছি।
- কী যে কাজ করিস দিনরাত। জানি না বাপু।
- তুমি জানবে না। এখন তুমি যাও তো।

মা আবার রান্নাঘরে চলে গেলেন। কী যে হয়েছে হাসিখুশি মেয়েটার। মা চিন্তা করে। এ-রকম বদমেজাজি ছিল না। যে মেয়ে একদিনও স্কুল কামাই করেনি, সে মেয়ে আজ বসে বসে কলেজ কামাই করছে। ভাল করে খায়ও না, আগের মতো আবদার করে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে না। ভাবতে ভাবতে অবাক হয়ে যান মা।

বাবা এক কোম্পানির সুপারভাইজারের কাজ করে। ঘরে আসে বছরে মোটে দু’ বার। এক পুজোর সময় - আর বছরের শেষে। যোগাযোগ করার জন্য বাড়িতে একটি ফোন কিনে দিয়ে গিয়েছিল গতবার বাড়ি এসে। মা’কে একাই সংসারটা দেখতে হয়। ভাই এ বছর মাধ্যমিক দেবে। কিছু হয়তো দরকার। তাই জানাতে ফোন করেছিল। মা আর কিছু বলে না। চারিদিকে যা সব ঘটে চলেছে। খবরের কাগজে রোজ দেয় - মায়ের বকুনিতে মেয়ে আত্মঘাতী। ভয় হয়।


- কী রে খাবি আয়। না আজকেও খাবার ঢাকা দিতে হবে?
- ঢাকা দিয়ে দাও। আমি পরে খেয়ে নেব।

পাশের বাড়ির ডলির মতো আবার কোন মনের অসুখ করেনি তো? মায়ের চিন্তা বাড়ে। ডলির মা বলছিল, ডাক্তার নাকি বলেছে - আপনারা কেন ছোট ছোট ছেলেমেয়ের হাতে না বুঝে মোবাইল তুলে দেন?

সকালবেলা মা উঠে দেখেন খাবার টেবিলে সেই খাবার একই রকম ঢাকা দেওয়াই আছে। মা স্মিতার শোয়ার ঘরের দিকে এগিয়ে যান। স্মিতা ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। মশারিটা পর্যন্ত টাঙায়নি। সারারাত না জানি কত মশা কামড়েছে। জ্বরটর হবে খন।

- ওঠ স্মিতা ওঠ। টিউশানে যাবি না?

মা ঠেলা দিয়ে স্মিতাকে বারে বারে ডাকে। স্মিতা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মা সাড়া না পেয়ে আবার ডাক দেয় - ওঠ - ওঠ। কত বেলা হয়ে গেল। মা ঘামতে শুরু করেন। নানান চিন্তা ঘুরপাক খায় মাথাতে। রোজ রোজ কী যে করে মেয়েটা? কী হয়েছে কিছু বলেও না। কেন যে এ-রকম হল। রক্ষা করো ঠাকুর। মা স্মিতার কপালে হাত বোলান। বুঝতে পারেন জ্বরে সারা গা পুড়ে যাচ্ছে। স্মিতা গোঁ গোঁ আওয়াজ করে ওঠার চেষ্টা করে - উঠতে পারে না। মাথা ঘুরে পড়ে যায়। কোলে মাথা নিয়ে ধীরে ধীরে কপালে হাত বুলিয়ে দেন মা। গালে আদর করে চুমু খেয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “কী হয়েছে? কী হয়েছে তোর?” ডুকরে কেঁদে ওঠে। গলা বেয়ে কান্না দলা পাকিয়ে অবিরত বেরতে চায়। মা চোখে-মুখে হাত বুলিয়ে দেন বারেবারে। “জল খাবি? একটু জল খেয়েনে।”  মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে আদর করেন। এবার আর স্মিতা কান্না থামাতে পারে না। গাল বেয়ে চোখের গরম জল গড়িয়ে পড়ে। মা আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেন। স্মিতা জ্বরের ঘোরে বলতে থাকে,


- ওরা কেউ আমাকে ভালবাসে না। আমার কবিতাতে কেউ লাইক করে না। কমেন্টও করে না। আমি কত ভালবেসে কত যত্নে একটা একটা কবিতা সাজাই। কেউ তার দাম দেয় না মা।
- তারা দেয় না তো কী হয়েছে? আমি তো দিই। এখন থেকে তুই আমাকে কবিতা শোনাবি।
- তুমি আমার কবিতা শুনবে মা?
- হ্যাঁ, শুনব। এবার থেকে আর ফেসবুকে লেখার দরকার নেই। তুই কবিতা লিখে প্রথমে আমাকেই শোনাবি। 

চোখের জলে গাল ভিজে যায়। মায়ের আঁচল ভিজে যায়। আর মা সারা শরীরে, মাথায় হাত বুলিয়ে দেন বারেবারে আর বিড়বিড় করে বলেন, “আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, তুই একটুখানি ঘুমো।”

 

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)