প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, July 22, 2023

বাতায়নে জ্যোৎস্না… | জ্যোৎস্না মন্ডল

বাতায়ন/হলদে খাম/১ম বর্ষ/১৩তম সংখ্যা/৫ই শ্রাবণ, ১৪৩০

হলদে খাম
জ্যোৎস্না মন্ডল

বাতায়নে জ্যোৎস্না…

নববর্ষে, বিজয়াতে পোষ্ট কার্ড আসত। তাতে লেখা থাকত কল্যানীয়াষু, নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিয়ো অথবা লেখা থাকত শ্রীচরণকমলেষু, বিজয়ার প্রণাম নিয়ো। খুব সুন্দর ভাষায় অত্যন্ত আন্তরিকতার মোড়কে চিঠি আসত। সেই সব দিন আজ হারিয়ে গেছে ডিজিটাল মাধ্যমের দাপটে। পিয়োন যখন সাইকেলে চড়ে বাড়ি বাড়ি চিঠি বিলি করতেন ঐ সময় পিয়োন এবং পত্র প্রাপকের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠত। চিঠি পাওয়ার মধ্যে ছিল এক অপার প্রাপ্তির আনন্দ ও গভীর সুখানুভব।

এখনো মনে পড়ে আমার চিঠি আসত ডাকে। উপরে লেখা থাকত কোন এক বান্ধবীর নাম। বাবা না খুলেই আমাকে দিয়ে দিতেন। আমি জানতাম চিঠিটা কোন মানুষের কাছ থেকে এসেছে। ঐ কৈশোরে চিঠির আগমনে হৃৎস্পন্দন দ্বিগুণ হয়ে যেত। লজ্জায় রাঙা মুখ যেন কেউ না দেখে সেই জন্য নিজেকে আলাদা করে নিয়ে যেতাম একদম চিলেকোঠার ঘরে। নিজেকে মনে হত আমি রাজনন্দিনী আর আমার মনের রাজা আমার জন্য সরল দীঘির পাড়ে হিজল গাছের ছায়ায় অপেক্ষমাণ।

সবার বাড়িতে তখন ল্যান্ড ফোন ছিল না। চিঠির উপর ভরসা করেই জীবনের আবেগ, উচ্ছ্বাস, অভিমান সঙ্গে নিয়ে আমাদের কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ।

মনে আছে আমি তখন বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব শ্রী বিভাস চক্রবর্তীর সঙ্গে বাংলাদেশ গিয়েছিলাম। তাঁর পরিচালিত ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে "মাধব মালঞ্চী কইন্যা" নাটকে আমরা শ্রী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী লোকগান পরিবেশন করতাম। হঠাৎ বাবার চিঠি— আমার একটি সরকারি অফিসে চাকরির জয়েনিং লেটার এসেছে। এই চিঠি পেয়ে শ্রদ্ধেয় বিভাসদা আনন্দে সবাইকে মিষ্টিমুখ করালেন। এই ঘটনার আনন্দের রেশ আজও মনের মধ্যে বহমান। 

চিঠির প্রভাব যে কতখানি তা আমরা যারা নব্বই দশকের আগে একটু একটু করে বড় হয়েছি তারাই উপলব্ধি করতে পারি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই অমূল্য মাধ্যমের রসাস্বাদন থেকে বঞ্চিত।

একটা হারিয়ে যাওয়া মেয়েবেলা আজও খুঁজে বেড়াই পথের অলিগলিতে। আজও মনে হয় সাইকেলের ঘন্টা বাজিয়ে খাঁকি পোশাক পরে কাঁধে একটি ঝোলা নিয়ে পিয়োন আসুক আমাদের বাড়ি, ফ্ল্যাটে নয়। ঝোলার ভিতর থেকে সব চিঠি বার করে আমার নাম খোদাই করা চিঠিটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিক।


এখন এই বয়সে এসেও চিঠির প্রভাব থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে বা মুক্ত করতে পারিনি। আমার একটি অত্যন্ত ভাল লাগার বিষয় হল কবিতা ও গান লেখা এবং তাতে সুরারোপ করা। চিঠিকে বিষয়বস্তু করে লিখে ফেললাম একটি মিষ্টি প্রেমের লোকগান…

শোন রে সখী শোন রে
মনের কথা শোন রে
আইজ দুপুরের ডাকে পাইলাম 
চিঠি একখান রে।
 
আশ্বিনেতে দুগ্গা পূজা
খুশির সীমা নাই,
সুজন বন্ধুর আসার খবর 
চিঠির মধ্যে পাই,
শোন রে সখী শোন রে
মনের কথা শোন রে
আইজ দুপুরের ডাকে পাইলাম 
চিঠি একখান রে।
 
ইলিশ মাছের ঝোল রান্ধুম
পাবদা মাছের ঝাল,
পিঠা রান্ধুম আর রান্ধুম
সোনা মুগের ডাল,
শোন রে সখী শোন রে
মনের কথা শোন রে
আইজ দুপুরের ডাকে পাইলাম 
চিঠি একখান রে।

1 comment:

  1. চিঠি সম্পর্কে লেখাটি আর তার সঙ্গে গানটিও ভালো লাগল। সুর দিয়ে গাওয়া হলে গানটি সবার পছন্দের হবে বলে মনে হয়।

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)