প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ঝড় | টিকে থাকার সাধনা

বাতায়ন /ঝড়/ সম্পাদকীয়/ ৩ য় বর্ষ/ ১ ম সংখ্যা/ ১লা বৈশাখ,   ১৪৩ ২ ঝড় | সম্পাদকীয় টিকে থাকার সাধনা "প্রত্যেক সাহিত্যসেবীর অন্তরে চিরকালীন...

Saturday, September 9, 2023

প্রিয় সোনাকে চন্দ্রমুখী | প্রিয়া সাহা

বাতায়ন/হলদে খাম/১ম বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২২শে ভাদ্র, ১৪৩০

হলদে খাম
প্রিয়া সাহা

প্রিয় সোনাকে চন্দ্রমুখী

প্রিয়তম,

বাড়ির সকলের শরীর ভাল আছে। তুমি আগের দিন চিঠিতে আমাকে জানিয়েছিলে তোমার শরীর কেমন ম্যাজম্যাজ করছে। প্রিয়তম, তোমার জ্বর হয়নি তো? এখন চারপাশের যা আবহাওয়া তাতে ডেঙ্গি জ্বরের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। আমাদের পাশের বাড়ির প্রীতি কাকিমা তিন দিন প্রবল জ্বরে ভুগছেন। আমার ধারণা নিশ্চয়ই ডেঙ্গি হয়েছে। তবে তুমি নিজের যত্ন নিও সোনা।

অনেক দিন হয়ে গেল তুমি বাড়ি নেই। গা থেকে বিয়ের গন্ধ গেল না, আর তুমি নিজের চন্দ্রমুখী সুন্দরী বউকে বাড়িতে রেখে ভিন্ দেশে পাড়ি দিলে। খরচাপাতি যোগাতে হবে। বিয়ের পর খরচা গলগলিয়ে বেড়েই চলেছে। একটা সময় ছিল যখন তোমার সাথে আমার একদিন দেখা না হলে মনে হত এক বছর দেখিনি। আমি মায়ের সাথে কোথাও বেড়াতে গেলে তুমি কত অভিমান করেছ আমার ওপর। তুমি আমাকে অভিমানের কণ্ঠে বলেছ, কী দরকার ছিল মাসির বাড়িতে চার দিন থাকার? আর আমাদের দেখা করার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি বাড়ি ফিরে যাও। সেই মুহূর্তেই আমি রাগ ভাঙানোর জন্য তোমার গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটের নীচে কিস করে দিতাম। তখনই তোমার সব রাগ অভিমান গলে জল হয়ে যেত। তুমি যখনই রাগ করেছ আমি এমন করে তোমার রাগ ভেঙেছি।

নির্দিষ্ট গোপন স্থানে যেখানে আমরা দেখা করতাম সেখানে আমার একটুখানি যেতে দেরি হলে তুমি আমাকে কত বকা দিতে। দুঃখে তোমার কণ্ঠ ফেটে পড়ত, সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে পা ব্যথা হয়ে গেছে। তুমি যদি আসতে আর দু' মিনিট দেরি করতে তাহলে আজ দেখা না করে ফিরে যেতাম। কিন্ত আমি জানতাম, তুমি এমন কাজ কখনো করবে না।

আমাদের দু’জনকে সবার থেকে লুকিয়ে, অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বনে দেখা করতে হত। যাতে কেউ জানতে না পারে। তাই অনেক কিছুর আয়োজন করা হত। প্রেম করছি এই সামান্য কথাটা কাক-পক্ষীতে ইঙ্গিত পেলেই সে হই হই ব্যাপার! রইরই কাণ্ড! বাড়িতেও কাউকে বলা যাবে না। তাই কলেজ যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তাম আর চুপিসারে সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরতাম। সিনেমা দেখতে গেলে তোমাকে বেশি অজুহাত বানাতে হত। কারণ তোমার তো তখন কলেজ ছিল না। একদিন তুমি যেই না আমার সাথে দেখা করে ফিরেছ অমনি মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেছ। তুমি নিজেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা করে বলেছ, দূর আমি আর ওই মেয়েটির সাথে কথাই বলি না দেখা করা তো দূরের কথা।

দু’ বছর পর আবার ওই মেয়েটিকেই বউ করে ঘরে আনলে। অভাবের তাড়নায় সদ্য বিয়ে করা বউকে রেখে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিলে। জানো প্রিয় এখন আমার পুরোনো প্রেমের স্মৃতি মনে করে দিন কাটে। চোখ বন্ধ করলেই সব স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয়। তোমার কথা ভেবে ভেবে দিন কাটিয়ে দিলেও রাত যেন কিছুতেই কাটতে চায় না।

তোমার মনে পড়ে আগেকার দিনগুলোর কথা! আগে একটুখানি চোখের দেখা দেখার জন্য কত প্ল্যান করতে হত। আর আজকে আমি তোমার বাড়িতে থেকেও তোমার দেখা পাচ্ছি না। ঠিক যেন মনে হয় অমাবস্যার রাতের অন্ধকারে পুকুরের দু’ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি জীব। পরস্পর দু’জন দু’জনকে ভীষণ ভালবাসে। তবুও তাদের মিলনের কোন উপায় নেই।

যে সুখস্বপ্ন নিয়ে মেয়েটি তার স্বামীর গৃহে আসল, তার সেই সুখস্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। শুধুমাত্র পুরোনো স্মৃতি আঁকড়ে দিনের পর দিন কাটিয়ে দেওয়া সহজ কথা নয়। কে জানে কখন কার মনের গোপন দুয়ারে টোকা দেয় রাতের কড়া নাড়া।

ভাল থেকো।


ইতি—
জানি না, যাও...

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)