প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

শেষ থেকে শুরু [৫ম পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/১ ৯ তম সংখ্যা/ ৩০শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ ধারাবাহিক উপন্যাস পারমিতা চ্যাটার্জি শেষ থেকে শুরু [৫ম পর্ব...

Monday, November 27, 2023

ডানা | মৌসুমী চক্রবর্তী

বাতায়ন/ধারাবাহিক/১ম বর্ষ/২৫তম সংখ্যা/১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০

ধারাবাহিক গল্প
মৌসুমী চক্রবর্তী

ডানা
১ম পর্ব

সকাল থেকে রোমিতা দ্রুত হাতে কাজ সারছে। লক্ষ্মী পুজোর পর এবার আরও তিনদিন কলেজ ছুটি। এই তিন দিন আর সময় নষ্ট করলে চলবে না। তার মধ্যে রিয়া-রাহুলের হোমওয়ার্ক এখনও বেশ খানিকটা বাকি। রিয়া-রাহুলকে খাওয়ানো শেষ। শ্বশুর-শাশুড়ির ভাত যত্ন করে টেবিলে বেড়ে দিয়ে রোমিতা ডাকল, “বাপি-মামনি খেতে এসো ভাত দিয়েছি...” নিজের ভাত একেবারে বেড়ে ঢেকে রেখেছে। ওনারা খেতে বসলেই রোমিতা স্নান করতে যাবে।

শিবপ্রসাদবাবু আর শর্মিলাদেবী এসে টেবিলে বসলেন। শর্মিলাদেবী জিজ্ঞাসা করলেন, “এখনও তোমার স্নান হয়নি! বেলা কত হল খেয়াল আছে? আমরা যা লাগে নিজেরা নিয়ে নেব, তুমি যাও।” শিবপ্রসাদবাবু বলে উঠল, “লাগবে আবার কী? এমন সুন্দর করে বাটি বাটি করে সব সাজিয়ে দিয়েছিস। তোর ছুটি থাকলেই আমার কপালে এমন পরিপাটি আহার জোটে, তোর মামনি তো পারলে রান্নাঘর থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে আমাকে খেতে দেয়। শর্মিলাদেবী কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলেন, “দু’দিন পর থেকে নিজে বেড়ে খাবে, ছোঁড়াছুঁড়ি করতে আর ভাল লাগে না গো, হাতে-পায়ে-কোমরে বাত ধরেছে কিনা।”

রোমিতা হাসতে হাসতে স্নানে চলে গেল। মাথায় একটা ছবি ঘুরছে সেই পুজোর আগে থেকে। আজ ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতেই হবে। ঘরের দরজা বন্ধ করে রোমিতা ছবি আঁকায় মগ্ন। বাইরে মনে হচ্ছে কেউ এসেছে, একটা অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে রোমিতা। কিন্তু শাশুড়ি না ডাকা অবধি সে উঠছে না। উনি ডাকেননি। এই কিছু কিছু ব্যাপারে উনি খুব বিবেচক।

**

বিকেলের দিকে দরজায় মৃদু টোকা পড়ল। বেরিয়ে এল রোমিতা। সামনে সৌম্যদর্শন এক ভদ্রলোক, মাথায় কাঁচাপাকা চুল। শাশুড়ি আলাপ করিয়ে দিলেন। “রোমিতা এর নাম সৌমিত্র, আমরা বেহালায় যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, ঠিক তার পাশের বাড়িতে ওরা থাকত, মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে এসেছে।” রোমিতা প্রণাম করল। ভদ্রলোক আপত্তি করলেন না বরং রোমিতার মাথার ওপর সস্নেহে হাত রাখলেন। বললেন, “তুমি আমায় দেখোনি তবে তোমার বর আমার খুব ন্যাওটা ছিল একটা সময়। তোমার বিয়েতেও এসেছি তবে তারপর আর বিশেষ আসা হয়নি ওই বেহালা থেকে দমদম… যা হয় আর কী!” রোমিতা বলল, “আপনাকে আমি চিনি মানে বেহালার ওই ভাড়াবাড়ি আর পাড়ার লোকেদের গল্প বাপি আর মামনির কাছে অনেক শুনেছি, ওদের নস্ট্যালজিয়া” শর্মিলা হেসে উঠল — “কী সুন্দর দিন কাটিয়েছি বল মনেই হত না পাড়ার লোক পরম আত্মীয়ের থেকেও যেন বেশি।” রোমিতা সৌমিত্রকে বলল, “বসুন-না কাকু।” সৌমিত্র হেসে উঠল, “না অনেকক্ষণ বসেছি, আর না, যেয়ো কিন্তু আমার মেয়ের বিয়েতে, তোমাদের সকলকে খুব আশা করব। বাই দ্য ওয়ে, বউদি বলছিল তুমি ছবি আঁকছ! একটু দেখা যাবে?” রোমিতা লজ্জা পেয়ে গেল, “সেরকম কিছু নয় কাকু, এমনি ভাল লাগে তাই একটু, দেখাবার মতন নয়।” সৌমিত্র জোর করল না বলল, “বেশ আপত্তি থাকলে থাক”। রোমিতা বলল, “না না, আসলে এখনও শেষ হয়নি তো তাই।”

শর্মিলাদেবী ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, “দেখাও-না, কবে তোমার শেষ হবে! ও তখন আবার আসবে নাকি? ভাল আঁকে রে।”

রোমিতার খুব লজ্জা করল, মামনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে না। ও বলে উঠল, “আসুন, দেখুন, আসলে আঁকা শিখিনি কখনো।” সৌমিত্র মন দিয়ে দেখতে লাগল। “বা! মীরাবাঈ — শ্রীকৃষ্ণ সাধনায় মগ্ন। দেখি আর কী কী এঁকেছ, হুম কামধেনু – অপূর্ব। আর এটা দেখি দেখি একটা গাছ। সত্যিই আঁকা শেখোনি? এত সূক্ষ্ম রঙের প্রয়োগ। আঁকাটা চালিয়ে যাও রোমিতা, অনেক দূর যাবে। আজ আসি বউদি। আরো অনেক জায়গায় যাওয়া বাকি। তবে আমি কিন্তু আবার আসব, তোমার বউমার ছবি দেখার লোভেই আসব। শিবুদা কোথায়? বলে যাই একবার।”

 

ক্রমশ...

2 comments:

  1. খুব ভালো লাগলো মৌসুমী।

    ReplyDelete
  2. দারুন লাগলো। ছোট একটি গল্প এর মধ্যে দিয়ে নারী শক্তি কে খুব ভালো ভাবে তুলে ধরেছেন।

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)