বাতায়ন/অন্য চোখে/১ম বর্ষ/২৪তম
সংখ্যা/২৪শে কার্তিক, ১৪৩০
অন্য চোখে
সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দর মুখ/ছবি, সাহিত্যে তার প্রভাব
নির্মল ভানু গুপ্ত
তর্কে বহুদূর
সুদীপ আর শর্মিলা দুজনে নন্দন চত্বরে অবনীন্দ্র হলের সামনে
বাঁধানো গাছটার নীচে বসে প্রায়ই আড্ডা মারে। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে, থুড়ি
তর্ক করে, যেটা মাঝে মাঝে ঝগড়ার পর্যায়ে চলে যায়। তখন এসব থামিয়ে পাশের স্টল
থেকে চা ইত্যাদি খেয়ে আবার নতুন করে সব শুরু করে।
ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে দুজনে সোজা নন্দন চত্বরে হাজির হয়।
আর ফেরার সময় হলে, যে বিষয় নিয়ে আলোচনা-তর্ক হচ্ছিল, সেটা শেষ করে থুড়ি
থামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফেরে। আজকের বিষয় কী? আলোচনা শুনলেই বোঝা যাবে আশা করি। শর্মিলা
বলল,
-তোর লেখা আমি ফেসবুক ইত্যাদি সোস্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই দেখি,
ভালই হচ্ছে তোর লেখা।
-ভাল হচ্ছে কথাটার কোনো দাম নেই।
-তার মানে?
-এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা পড়ে তোকে লাইক দিতে হবে আর কমেন্টে এক্সেলেন্ট দিতে হবে।
-এতে কী লাভ হবে?
-কোনো লেখা পড়ার আগে লোকে আগে কটা লাইক আর কেমন কমেন্ট আছে, সেটা দেখে।
-ব্যাপারটায় তুই এত রিয়্যাক্ট করছিস কেন?
-কারণ আছে সখী, সেটা বললে তুই আমায় ভুল ভাববি।
-নাও হতে পারে। তুই বল।
-আগে যখন সাহিত্যের বেশির ভাগটাই, বই ভিত্তিক ছিল, তখন লোকে লেখাটা আগে পড়ে ভাল লাগলে, পরে সাহিত্যিকের মুখ দেখত বা দেখার চেষ্টা করত। তাতে সাহিত্যে তার চেহারা বা সৌন্দর্যের কোনো প্রভাব পড়ত না।
-কী বলছিস কিছুই বুঝতে পারছি না। মাল টেনে এসেছিস নাকি?
-পুরোটা শোন আগে।
-বল।
-আর এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শ মহিলারা তাদের সুন্দর মেক-আপ করা সহাস্য ছবিসহ কবিতা বা কোনো লেখা দিলেই হল। পটাপট লাইক আর সুন্দর সুন্দর কমেন্টে ছেলেরা ভরিয়ে দেবে।
-তাতে কী হবে?
-বেশি লাইক আর ভাল কমেন্ট দেখে আরো অনেক বেশি লোক সেটা দেখবে আর পড়বে।
-বেশ তাতে সাহিত্যে কি প্রভাব পড়বে?
-বুঝলি না? এতে অনেক নিম্নমানের লেখাও জাতে উঠে যাবে।
-ছেলেরাও এই সুবিধা পেতে পারে।
-পারে না। কারণ খুবই কম সংখ্যক মেয়ে আছে যারা ওই আদেখলা ছেলেদের মতো শুধু চেহারা দেখে গলে যায়। ছেলেদের লাইক দিতে বললে সাথে সাথে দিয়ে দেয়, কিছু ভাবে না। আর মেয়েরা, এখন আমার পড়ার সময় নেই, আগে ভাল করে পড়ি, লাইক দেওয়ার মতো কিছু পাই নাকি।
-তুই এটা কী করে প্রমাণ করবি?
-এক্ষুনি প্রমাণ করে দিতে পারি।
-কী করে? কর।
-আমি কতদিন ধরে লেখালেখি নিয়ে আছি, তুই জানিস?
-আমি তোকে চিনি প্রায় তিন বছর, কিন্তু তোর পুরোনো লেখাও আমি পড়েছি। মোটামুটি তুই বছর ছয়েক লেখালেখি করিস।
-এর মধ্যে তুই আমার কটা লেখা পড়েছিস?
-অধিকাংশ পড়েছি বা শুনেছি।
-না। আই মিন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যতগুলো লেখা লাস্ট তিন বছরে বেরিয়েছে তার মধ্যে কতগুলো?
-নাইন্টি পার্সেন্ট তো পড়েছি।
-কতগুলো লাইক দিয়েছিস বা কমেন্ট করেছিস?
-মনে নেই।
-বাজে কথা। এড়িয়ে যাচ্ছিস। আমি দেখেছি, তুই আমার লেখার দুই শতাংশের আশেপাশে মাত্র লাইক দিয়েছিস। কমেন্টের কথা আর নাই বা বললাম।
-এতে কী প্রমাণ হল?
-প্রমাণ হল যে, মেয়েরা যে সুবিধা সোস্যাল মিডিয়ায় পাচ্ছে, ছেলেরা তার প্রায় কিছুই পাচ্ছে না। তাই অদূর ভবিষ্যতে পুরুষ সাহিত্যিকের সংখ্যা কমে যাবে।
-আমি মানতে পারছি না।
-বেশ। মানতে হবে না। পরীক্ষা হোক।
-কীভাবে?
-তুই মনীষার বিয়েতে সেজেগুজে যে সেলফিটা তুলেছিলি, সেই ছবিটা দিয়ে একটা কবিতা ফেসবুকে পোস্ট দে।
-তুই কি পাগল হলি? আমি লিখব কবিতা? তারপর সবাই মিলে আমাকে পেটাক? আমি ওসব পারব না।
-ঠিক আছে। তাহলে একটা ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোল ওই ছবিটা দিয়ে।
-বেশ খুলব। তারপর?
-গত পরশু তোকে যে কবিতাগুলো শোনালাম, তার মধ্যে যেটা তোর বা আমার কারুর ভাল লাগেনি, সেটা তোকে হোয়াটস্অ্যাপে পাঠাচ্ছি। তুই সেটা ওই ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করবি।
-তোর না পাগলামির শেষ নেই। ঠিক আছে রাত্রে শোয়ার আগে করব। এখন চল উঠি।
-হ্যাঁ। চল, আমাকেও টিউশনি পড়াতে যেতে হবে।
মাঝে গুডফ্রাইডে পড়ে যাবার জন্য প্রায় চার দিন পর দুজনে আবার
দেখা। সুদীপ বলল,
-তোর ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্টের খবর কী?
-হতে পারে ওই কবিতায় কাকতালীয় ভাবে অনেক লাইক আর কমেন্ট পড়েছে। কিন্তু আমি তোর কথা মানতে পারছি না। জাস্ট পারছি না। তর্ক চলতে থাকে।
-এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা পড়ে তোকে লাইক দিতে হবে আর কমেন্টে এক্সেলেন্ট দিতে হবে।
-এতে কী লাভ হবে?
-কোনো লেখা পড়ার আগে লোকে আগে কটা লাইক আর কেমন কমেন্ট আছে, সেটা দেখে।
-ব্যাপারটায় তুই এত রিয়্যাক্ট করছিস কেন?
-কারণ আছে সখী, সেটা বললে তুই আমায় ভুল ভাববি।
-নাও হতে পারে। তুই বল।
-আগে যখন সাহিত্যের বেশির ভাগটাই, বই ভিত্তিক ছিল, তখন লোকে লেখাটা আগে পড়ে ভাল লাগলে, পরে সাহিত্যিকের মুখ দেখত বা দেখার চেষ্টা করত। তাতে সাহিত্যে তার চেহারা বা সৌন্দর্যের কোনো প্রভাব পড়ত না।
-কী বলছিস কিছুই বুঝতে পারছি না। মাল টেনে এসেছিস নাকি?
-পুরোটা শোন আগে।
-বল।
-আর এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শ মহিলারা তাদের সুন্দর মেক-আপ করা সহাস্য ছবিসহ কবিতা বা কোনো লেখা দিলেই হল। পটাপট লাইক আর সুন্দর সুন্দর কমেন্টে ছেলেরা ভরিয়ে দেবে।
-তাতে কী হবে?
-বেশি লাইক আর ভাল কমেন্ট দেখে আরো অনেক বেশি লোক সেটা দেখবে আর পড়বে।
-বেশ তাতে সাহিত্যে কি প্রভাব পড়বে?
-বুঝলি না? এতে অনেক নিম্নমানের লেখাও জাতে উঠে যাবে।
-ছেলেরাও এই সুবিধা পেতে পারে।
-পারে না। কারণ খুবই কম সংখ্যক মেয়ে আছে যারা ওই আদেখলা ছেলেদের মতো শুধু চেহারা দেখে গলে যায়। ছেলেদের লাইক দিতে বললে সাথে সাথে দিয়ে দেয়, কিছু ভাবে না। আর মেয়েরা, এখন আমার পড়ার সময় নেই, আগে ভাল করে পড়ি, লাইক দেওয়ার মতো কিছু পাই নাকি।
-তুই এটা কী করে প্রমাণ করবি?
-এক্ষুনি প্রমাণ করে দিতে পারি।
-কী করে? কর।
-আমি কতদিন ধরে লেখালেখি নিয়ে আছি, তুই জানিস?
-আমি তোকে চিনি প্রায় তিন বছর, কিন্তু তোর পুরোনো লেখাও আমি পড়েছি। মোটামুটি তুই বছর ছয়েক লেখালেখি করিস।
-এর মধ্যে তুই আমার কটা লেখা পড়েছিস?
-অধিকাংশ পড়েছি বা শুনেছি।
-না। আই মিন সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যতগুলো লেখা লাস্ট তিন বছরে বেরিয়েছে তার মধ্যে কতগুলো?
-নাইন্টি পার্সেন্ট তো পড়েছি।
-কতগুলো লাইক দিয়েছিস বা কমেন্ট করেছিস?
-মনে নেই।
-বাজে কথা। এড়িয়ে যাচ্ছিস। আমি দেখেছি, তুই আমার লেখার দুই শতাংশের আশেপাশে মাত্র লাইক দিয়েছিস। কমেন্টের কথা আর নাই বা বললাম।
-এতে কী প্রমাণ হল?
-প্রমাণ হল যে, মেয়েরা যে সুবিধা সোস্যাল মিডিয়ায় পাচ্ছে, ছেলেরা তার প্রায় কিছুই পাচ্ছে না। তাই অদূর ভবিষ্যতে পুরুষ সাহিত্যিকের সংখ্যা কমে যাবে।
-আমি মানতে পারছি না।
-বেশ। মানতে হবে না। পরীক্ষা হোক।
-কীভাবে?
-তুই মনীষার বিয়েতে সেজেগুজে যে সেলফিটা তুলেছিলি, সেই ছবিটা দিয়ে একটা কবিতা ফেসবুকে পোস্ট দে।
-তুই কি পাগল হলি? আমি লিখব কবিতা? তারপর সবাই মিলে আমাকে পেটাক? আমি ওসব পারব না।
-ঠিক আছে। তাহলে একটা ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোল ওই ছবিটা দিয়ে।
-বেশ খুলব। তারপর?
-গত পরশু তোকে যে কবিতাগুলো শোনালাম, তার মধ্যে যেটা তোর বা আমার কারুর ভাল লাগেনি, সেটা তোকে হোয়াটস্অ্যাপে পাঠাচ্ছি। তুই সেটা ওই ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করবি।
-তোর না পাগলামির শেষ নেই। ঠিক আছে রাত্রে শোয়ার আগে করব। এখন চল উঠি।
-হ্যাঁ। চল, আমাকেও টিউশনি পড়াতে যেতে হবে।
-তোর ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্টের খবর কী?
-হতে পারে ওই কবিতায় কাকতালীয় ভাবে অনেক লাইক আর কমেন্ট পড়েছে। কিন্তু আমি তোর কথা মানতে পারছি না। জাস্ট পারছি না। তর্ক চলতে থাকে।
সমাপ্ত
বিষয়টার নতুনত্ব আছে। বেশ লাগল।
ReplyDelete