প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Saturday, December 9, 2023

পরকীয়া | পোরসেলিনের ঝাড়বাতি | চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

বাতায়ন/পরকীয়া/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২৬তম সংখ্যা/২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০

পরকীয়া | ছোটগল্প
চন্দ্রদীপা সেনশর্মা

পোরসেলিনের ঝাড়বাতি

কুন্দ দেখে নিতে চাইল নিজেকে। লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকদিন বাদে সে পোশাক খুলছে। খুলেছে হয়তো বেশ কয়েকবার। খেয়াল করেনি। আজ খেয়ালে এল নিজেকে দেখে নেওয়ার। কুয়াশাভেজা শীতরাত, নিঃশব্দ রাতের ভিতর থেকে উঠে আসা শব্দ বরাবর কুন্দর প্রিয়। আয়নার দিকে তাকিয়ে সে শব্দ শুনতে শুনতে কুন্দ একান্তে দেখছে, পঞ্চাশ পেরোনো হেঁটে যাওয়া প্রৌঢ় শরীর, স্পষ্ট বলিরেখা, বিভাজিকা বা অন্য কিছু। সঠিক বুঝে উঠতে পারছে না, এ শরীর মন কি তার পরিচিত, নিজেকে সে কতটুকু চেনে। হাত রাখছে লালচে লজ্জার তিলে। এই লাভস্পটের শুরু সেই মধ্যচল্লিশ থেকে, বয়সের সঙ্গে গুনতিতে বাড়ছে।

এগারোবছর কত যত্নে এই শরীর বাঁচিয়ে রেখেছে সে। দাম্পত্যের তুফান ছুঁতে পারেনি একটুও। কালচে সবুজ শিরাগুলো স্তন বেয়ে নেমে গেছে। তার মধ্যে ছুটে চলা উষ্ণতাকে বেঁধে রাখা এমন কঠিন না। কুন্দ গলার নীচে নিজের হাত নামিয়ে আনে। ডানদিকে বুকের কাছে নেমে হাত থেমে যায়। কুন্দ মনে করতে পারে এগারোবছর আগের গভীর দাগ। তর্জনি তুলে আনে অধরে, হ্যাঁ ডানপাশেই। এখানেও গভীর ক্ষতচিহ্ন মনে পড়ে তার। মনে পড়ে প্রেম-ভালবাসা ঝগড়া খুনশুটির শরীরী খেলার দিনগুলি, রাতগুলি।

উত্তরের জানলার ফাঁকফোকর গলে ছোবল তুলছে শীত। বাঁ হাতে তখনও ধরা ব্রা, সেমি প্যাডেড, উপরে হালকা লেসের কাজ, কচি কলাপাতা রং। খোলা জামাকাপড়ে নামিয়ে রাখে ব্রা। দ্রুত পরে নেয় রাতপোশাক। শীতের দিনগুলোয় কুন্দ ভিন রাজ্যে বসবাসের কথা ভাবতে ভালবাসে। দেশের উত্তর-পশ্চিম বা উত্তর রাজ্যগুলির শুকনো ঠান্ডা যেমন নির্দয় তেমন মোলায়েম। কুন্দ ওই শীতের শহরে ফেরি করতে আসা কাশ্মীরীদের বোঁচকায় পশমিনা দেখেছিল নিবিড় উৎসাহে। কলকাতার ঠান্ডায় ক্যাশমিলনেই কাজ মিটে যায়। শ্রীনগর থেকে আসা পরিযায়ী ব্যবসায়ী কুন্দকেই মনের মতো খরিদ্দার পেয়েছিল। উল পশমিনার খুব প্রয়োজন কুন্দর। ড্রেস মেটিরিয়াল, শাল, মেঝেতে বিছানো সম্পূর্ণ উলের নিখুঁত এমব্রয়ড্রি করা ভারী গালিচার মতো চাদর, কী অপূর্ব! কার্পেট গালিচা দেখলেও এমনটি আগে দেখেনি। কত যে কিনেছিল, সহযোগী মেয়েটিকে দিয়েছিল।

ছোটবেলা বাবার মুখে শোনা বাংলা প্রবাদ, 'বাবু চেনা যায় শীতকালে', সে বুঝেছে উত্তর ভারতে থাকতে থাকতে। প্রবাদটি বাবু-সংস্কৃতি থেকে এসে থাকতে পারে। এরমধ্যে তাচ্ছিল্য কি নেই? আছে। সমাজে মানুষে মানুষে বিভেদ সবসময়ের, নতুন কিছু না। পোশাক বদলানোর মতো সেও বদলায় মাত্র। নিত্যনতুন শীতপোশাকে নিজেকে সাজিয়ে সে বুঝেছিল, বাহ্, বিবি চেনা যায় শীতকালে।

পশ্চিমের শহরে লিভিংজুড়ে এগারো বাই ষোলো ফিটের বিশাল চারপাল্লার কাচের দরজা। কুন্দর মনে পড়ে আশ্বিনের গায়ে গায়ে মধ্যরাতে শিশির জমত দরজায়। হেমন্তে সন্ধে থেকে ধোঁয়াটে হয়ে উঠত দরজা। ডিনারের পর দরজার দিকে তাকিয়ে কুন্দ সাহির লুধিয়ানভি গুনগুন করত, 'এক ধুন্দ সে আনা হ্যায়, এক ধুন্দ মে জানা হ্যায়...' ঘন কুয়াশায় পাশের বাড়িটিও দৃশ্যের বাইরে। রাত করে অম্লানের সঙ্গে গাড়িতে ফেরার পথে গাড়ি কখনও কখনও দেখাত জিরো ভিজিবিলিটি। তখন শিশির আর কাচের দরজার অবিরাম সংরাগ। এমনকি গভীররাতে শিশিরপতনের অস্ফুট ধ্বনি বাজত। অন্তত কুন্দ শুনতে পেত। গভীররাতের দেওয়া উপহার কাগজে কলমে লেখার চেষ্টা করত। তার হাতে-কলমে-খাতায় শিশির চুমু দিয়ে যেত। কবিতা সে লিখবে ভাবেনি। 'আমাকে নিয়ে লেখ, আমাকে নিয়ে লেখ', সপ্তর্ষির আবদারে কুন্দ কবিতা লিখতে শুরু করেছিল।

ঠোঁটের ডানপাশের খরচামড়া উঠে এসেছে। কুন্দর অমনস্ক মন খুঁটে তুলেছে। লিপবামের ছোট কৌটোটি হাতে তুলে নেয় কুন্দ। আঙুলের ডগায় একটু ক্রিম তুলে নিয়ে বোলায়, মোলায়েম করে তোলে ঠোঁট যতটা সম্ভব। আজ সন্ধের শপিং মলে দেখা পোরসেলিনের অনন্য ঝাড়বাতিটির কথা ভাবতে থাকে। এত সুন্দর ঝাড় বা শ্যান্ডেলিয়র আগে দেখেনি। বুঝেছিল খুব সীমিত মানুষের সাধ্য আর সাধের স্বপ্ন নিয়ে ঝুলছে। সাহস করে লাঁদ্রোর দোকানে ঢুকে পড়েছিল কাছ থেকে দেখবে বলে। তার তন্ময় দু'চোখ মনকে প্রশ্ন করে বুঝে নেয়, এক দুই কত...? লাখের কথাই ভেবেছে সে। উত্তর-পশ্চিম শহরে বিলাসী জীবন অনেক দেখেছে। সেলসের ছেলেটি জানিয়েছিল সাত লাখ!

চোখ বুজে ভাবা যাক ওটি জ্বলে উঠলে কেমন দেখাবে! কুন্দ ইমনসন্ধেয় ঝাঁ-চকচকে দোকানে চোখ বুজেছিল কিছুক্ষণ। সেলসবয়টিকে বুঝতে না দিয়ে গলায় দলাপাকানো যে হেঁচকি সে গিলেছিল, সে অবস্থায় অনুরোধ করা যায় কি, একটু জ্বালিয়ে দেখাবেন? দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকের মতো চাপা হাসি ঠোঁটে রেখে বেরিয়ে এসেছিল। রাতের ঠোঁট, বয়সী রুক্ষতা মেরামত করতে সময় লাগে। ঝাড়বাতির মগ্নতা তাকে আচ্ছন্ন করেছিল বলেই কী পোশাকবদলের সময় কুন্দ নিজেকে দেখতে শুরু করেছিল?

অম্লান অকাতরে ঘুমোচ্ছে। কুন্দ বিছানায় বসে ফুটক্রিম ম্যাসাজ করছে পায়ে। কলকাতায় ফিরে সপ্তর্ষির সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যায়। কবিতা লিখলেও এতগুলো বছর সম্পর্ক ছিল না তাদের। না, সপ্তর্ষি একটুও বদলায়নি, বয়স বেড়েছে। একই প্রশ্ন, একই আবদার, তুমি কি লেখ? আমাকে নিয়ে লেখ কি? একটুও বদলায়নি তার কুন্দকে নিয়ে অবিশ্বাস সন্দেহ ইগোর টানাপোড়েন। কুন্দ ক্রিম বোলাতে বোলাতে মনস্তত্ত্ব ভাবে, ফ্রয়েড ভাবে। অহেতুক সন্দেহ অবিশ্বাস কী একধরনের পাগলামো নয়? আজও এত পজেসিভনেস কেন? এও কী সেক্সচ্যুয়াল? সপ্তর্ষি বিবাহিত, তার সুখী দাম্পত্য দেখলে বোঝা যায়, স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং বোঝাপড়া বেশ ভাল।

অনেকবছর আগের কথা। কুন্দ এবং অম্লানের দাম্পত্যজীবনে বন্ধু এবং অবিবাহিত সপ্তর্ষির অবাধ যাতায়াত। প্রতিবছর দূর শহর থেকে এক-দু'বার এসে সে জমিয়ে আড্ডা মারত। রাতে থাকত না কী এক অজ্ঞাত কারণে। স্টেডি গার্লফ্রেন্ড ছিল। তাকে নিয়ে গল্প করত কুন্দর সঙ্গে। কিন্তু কী এক অস্থিরতা কাজ করত। এরপর ধীরে ধীরে গার্লফ্রেন্ডের কথা জিজ্ঞেস করলে, এড়িয়ে যেত সপ্তর্ষি। কুন্দর কলম কখন যে সপ্তর্ষিকে নিয়ে লিখতে শুরু করেছিল, আজ আর মনে নেই। মনে আছে, সপ্তর্ষি আনন্দ পেত, বলত, আমাকে নিয়ে লেখ।

ধীরে ধীরে নিবিড় হয়ে উঠেছিল তাদের সম্পর্ক। দুজনে দুজনের বন্ধুত্ব উপভোগ করত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানারকম দাবি করতে থাকে সপ্তর্ষি। কুন্দর উপর এই রেগে যায়, এই ক্ষমা চায়। কুন্দর অন্য বন্ধুত্ব নিয়ে অখুশি হয়। দাবি বাড়তে থাকে, কখনও মনে হয় অন্যায় দাবি করছে সপ্তর্ষি। কুন্দর লেখা গল্পের পাণ্ডুলিপি নিয়ে চলে যায়, ফেরত দেয় না। কুন্দ বাধা দেয় আবার মেনে নেয়। সব মেয়েই অন্নপূর্ণা, ভিক্ষাপাত্র ভরে দিতে পারলে খুশি হয়। সে যেমন হোক। কুন্দ ভাবে, নারী কী মায়া এবং মুক্তি দুই-ই?

এইসব চিন্তাভাবনা টানাপোড়েনের মধ্যে অম্লানের বদলির অর্ডার চলে এল পশ্চিম শহরে। ওদের সঙ্গে দেখা করতে এল সপ্তর্ষি। বলল, তোমাদের খুব মিস করব। বেদনা ভারাক্রান্ত সপ্তর্ষির চোখমুখ। রাতে থেকে যাবে বলল। অম্লান ঘুমিয়ে পড়লে লিভিংস্পেসে সপ্তর্ষি কুন্দ বসে গল্প করছিল। কুন্দ বলল, বিয়ে করে নাও, আর কতদিন ব্যাচেলর জীবন কাটাবে? সপ্তর্ষি কথা বলতে বলতে ভেঙে পড়ল হঠাৎ। সে রাতে তার যাচনাটুকু ভুলতে পারেনি কুন্দ, 'যা আমি চাইতে পারি না, চাইলেও তুমিও দিতে পার না, তা অন্য কাউকে দিয়ো না। জানি এ আবদার অন্যায়, তবু পারলে রেখো।' অবাক হয়েছিল কুন্দ। বুঝেছিল সপ্তর্ষি কী বলতে চায়। বুঝেছিল সম্পর্ক নিছক বন্ধুত্বের বেড়া টপকে অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে, কুন্দ টের পায়নি। সপ্তর্ষি স্পষ্ট ছিল নিজের কাছে হয়তো আগে থেকেই, তাই সে রাতে থাকত না।

ধীরে ধীরে শীতল হয়ে গিয়েছিল কুন্দ। উষ্ণতা একমাত্র কলমে ফুটে উঠত। কুন্দ কী এমনটা চেয়েছিল? অম্লানকে ভালবাসত সে। তবে কেন শরীরের উষ্ণতা হারিয়ে গিয়েছিল তার। সপ্তর্ষির কথা সত্যি কী গভীরে নাড়িয়ে দিয়েছিল তাকে? এতদূরে চলে এলেও সপ্তর্ষির দাবি, ছেলেমানুষি আবদার ফোনে চলতেই থাকে। কুন্দ অসহিষ্ণু হয়ে উঠত, একটু বিরক্ত। বিরক্তি থেকে তর্ক ঝগড়া, ভুল বোঝাবুঝি, সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যাচ্ছিল। কুন্দ বুঝেছিল সম্পর্ক আর রাখা উচিত না। এভাবে একদিন চরম ভুল বুঝে সপ্তর্ষি সম্পর্ক তুলে দিল। দাবি থেকে কুন্দর প্রতি অবিশ্বাস সন্দেহ দানা বাঁধছিল তার মনে। কুন্দ বোধহয় স্বস্তি পেল। সত্যি কী সম্পর্ক ছিল না তাদের? এগারোবছর বাদে মুখোমুখি হয়ে বুঝেছিল, বন্ধুত্বের আবেদন দুজনের একই আছে। এবারও ভুল বুঝে সপ্তর্ষি সরে গেল।

ঝাঁকে ঝাঁকে প্রশ্ন ছোটাছুটি করে। রাতের নরম আলোর দিকে তাকিয়ে থাকে কুন্দ। এত অবিশ্বাস এত অন্যায় যে সপ্তর্ষি করে গেল তা কী কুন্দর দুর্বলতার কারণে? তার কী উচিত ছিল সপ্তর্ষির সব কথা মেনে নেওয়া? নিজের লেখা প্রথম ছোটগল্পের পাণ্ডুলিপি ওর হাতে তুলে দেওয়া? দীর্ঘ এগারোবছরের তপশ্চর্যা, নিজেকে বিরত রাখা দাম্পত্য থেকে, হয়তো অম্লানকে ঠকানো। শুধুমাত্র সপ্তর্ষির আবদারে সে কী এসব করেছে? এর থেকেও গভীরতর প্রশ্নের কাছে ফিরতে চায় কুন্দ। সত্যি সে আজও কেন কবিতা লেখে? সপ্তর্ষি না নিজের জন্য? কুন্দর নিরুত্তর অবচেতন হেমন্তের কাচের দরজায় পিছলে যায়। কুন্দ আজ নিজেকে বড় বেশি ভালবেসে ফেলে। একটু আগের দেখে ফেলা নগ্ন চেহারায় কুন্দ নতুন ভোর দেখেছিল। পঞ্চাশ পেরিয়ে সংহত মুক্তির আলো।

কুন্দ ঘুমিয়ে পড়ে অম্লানের পিঠ ছুঁয়ে। ঘড়িতে নগ্ন সময় ফুটে উঠলে কাক ডাকে। প্রকৃতির নিরীশ্বর আকাশে লাঁদ্রোর ঝাড়বাতি একটু একটু করে জ্বলে উঠতে থাকে।

 

সমাপ্ত

11 comments:

  1. দারুন গল্প হয়েছে দিদি।

    ReplyDelete
  2. Bhalo laglo apnar golpo.... Mousumi

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো লাগলো গল্পটা দিদি

    ReplyDelete
  4. একটি একটু বয়স্ক মেয়ে যেন ধীরে ধীরে ফুটে উঠলো।

    ReplyDelete
  5. অত্যন্ত ভালো গল্প।সুঠাম বুনন।চমৎকার।... মন্দিরা।

    ReplyDelete
  6. খুব ভালো লাগল।নারী মনস্তত্ত্বের অকপট উন্মোচন।

    ReplyDelete
  7. খুব ভালো লাগলো।লিখে যাও নিয়মিত।

    ReplyDelete
  8. জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়May 2, 2024 at 10:28 AM

    সুন্দর হয়েছে

    ReplyDelete
  9. জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়May 2, 2024 at 10:28 AM

    সুন্দর গল্প

    ReplyDelete
  10. তুমি তো গল্পটাও ভালো লেখো দেখছি ।বিষয় অত্যন্ত স্পর্শকাতর।এ যেন সরু দড়ির ওপর দিয়ে চলা।কুন্দ যদি তার সংযম রক্ষা করতে না পারত তাহলেই পরিণতি হতো গতানুগতিক ।সেখান থেকে রক্ষা পেয়েছে গল্পটি।

    ReplyDelete
  11. খুব খুউউউব ভালো লাগলো। চেনা ছকের বাইরে। 👌🏼

    ReplyDelete

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)