বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/৬ষ্ঠ/যশোধরা রায়চৌধুরী
সংখ্যা/২১শে আষাঢ়, ১৪৩১
যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা | সম্পাদকীয়
আত্মসংযম
"সর্বোপরি আরও একটা কথা বলা অসংগত নয়, যে-কোনো ধর্মের সৃষ্টি হয়েছিল যে-কোনো গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষকে রক্ষার তাগিদে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সব ধর্মই নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণে সর্বতোভাবে নিজের নিজের প্রচারে ব্যস্ত।"
ধর্ম আগে না মানুষ আগে?
গোড়ার প্রশ্নে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, যে-কোনো ধর্মের মানুষই অবলম্বন গ্রহণ করেছিলেন
সুস্থ ও শৃঙ্খলিত ভাবে বাঁচার জন্য, কোন হানাহানি কিংবা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সামনে
পড়ার জন্য নয়। তবু হাথরসের ঘটনা ঘটল!
নানা জনে নানা কথা বলছেন। যে যাই বলুন, মানুষ গোড়াতেই নিজের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হলে পৃথিবীর শুভ বা অশুভ কোনও শক্তিই তাকে বিপাকে ফেলতে পারে না। যদি কেউ এই ঘটনার পিছনে ইন্ধন দিয়ে থাকেন তার পিছনেও মানুষই আছেন।
ইদানীং গণপিটুনির বহর
খুব বেড়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ছড়িয়ে আছে। যেসব বীরপুঙ্গব
এসব করছেন তারা কোথায় ছিলেন এতদিন, এলেনই-বা কোথা থেকে! এই যে রাক্ষসের মতো দুঃসাহস
পেলেন কীভাবে! তারা কার প্রতিনিধিত্ব করছেন? আশা করা যায় আন্দাজ করতে পারেন সবাই। একজন
সুস্থ, স্বাভাবিক, রুচিশীল নাগরিকের সন্তান এমন আচরণ করতে পারেন না। আর যারা এসব করছেন
তারাও নিজেদের বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছেন। তাদেরও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসবই করবেন তো!
এটা নিশ্চয়ই তাদের আদর্শ, নিশ্চয়ই তারা তাদের সন্তানকে তেমন ভাবেই শিক্ষায়-দীক্ষায়
বড় করছেন! তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতে এমন চেহারা দেখে তারা নিশ্চয়ই সুখী হবেন, শান্তি
পাবেন!
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের
লোনাভালায় সেলফি তুলতে গিয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল। যদি তারা অগ্রপশ্চাদ্বিবেচনা
না করেই বর্তমান ট্রেন্ডে সাড়া না দিতেন তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। যদিও মানুষ চিরকালই
প্রমাণ রাখতে চায়, তবুও!
আসলে আত্মসংযম অত্যন্ত
জরুরি, যে-কোনো ক্ষেত্রে। সংযমের নিয়মিত অভ্যাসে মনের দিগন্ত খোলে। একজন অভিনেত্রী
রাজনৈতিক নৌকায় পা দিয়ে সামান্য জেরাতেই বাঁচার তাগিদে সত্তর লক্ষ টাকা ফেরত দেবার
কথা ঘোষণা করলেন। যার যেটা ক্ষেত্র তা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র লোভের বশবর্তী হয়ে কর্মের
পরিণাম। মানুষ একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছে যা চায়, তা নিশ্চয়ই একজন শিল্পীর কাছে
চায় না।
সর্বোপরি আরও একটা কথা
বলা অসংগত নয়, যে-কোনো ধর্মের সৃষ্টি হয়েছিল যে-কোনো গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষকে রক্ষার তাগিদে,
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সব ধর্মই নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণে সর্বতোভাবে নিজের নিজের
প্রচারে ব্যস্ত। তবে তাদের আধ্যাত্মিকতার স্থান কোথায়! পুজোপাঠ, ধর্ম পালন, সাধনা,
আরাধনা তো হয় নির্জনে, নিজের মনের মণিকোঠায়।
নানা জনে নানা কথা বলছেন। যে যাই বলুন, মানুষ গোড়াতেই নিজের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হলে পৃথিবীর শুভ বা অশুভ কোনও শক্তিই তাকে বিপাকে ফেলতে পারে না। যদি কেউ এই ঘটনার পিছনে ইন্ধন দিয়ে থাকেন তার পিছনেও মানুষই আছেন।
রাজনীতি নয়, দলবাজি আজ সবকিছু দখল করতে চাইছে। তাই চতুর্দিকে এত বিশৃঙ্খলা। দেশে আজ কোন রাষ্ট্রনেতা নেই। কোন নেতার মুখে নিন্দার ভাষা নেই।শিল্পী, সাহিত্যিকরা আর নিরপেক্ষ নন।
ReplyDeleteধন্যবাদ জানাই সম্পাদকীয় পড়ে আপনার স্বাধীন মতামত জানানোর জন্য। পরিচয় পেলে ভাল লাগত।
Deleteখুব বলিষ্ঠ মত প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ জানাই সম্পাদক মহাশয়কে। ধর্ম কে যেভাবে রাজনৈতিক প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। আর তাছাড়া এখন সমাজে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতি, গুন্ডামি, ভন্ডামি সব মিলেমিশে একাকার। এর থেকে বেরোনোর উপায় কি?
ReplyDeleteসঙ্ঘমিত্রা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই সঙ্ঘমিত্রা। আসলে সমাধান বা উপায় লেখার মধ্যেই আছে, সকলেই যদি নিজের নিজের মেরুদণ্ড সোজা রেখে দিনান্তে একবার অন্তত নিজেদের দেখার চেষ্টা করে তাহলে আর কেউ তাকে ব্যবহার করার সুযোগ পাবে না, অবশ্য পড়ে পাওয়া চোদ্দোআনায় রিপু সম্বরণ করতে হবে।
Delete