প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, August 31, 2024

বরষা | ৬টা বাজার আগে | শাশ্বত বোস

বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক সংখ্যা/বরষা/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/১তম/১৪ই ভাদ্র, ১৪৩১

বরষা | ধারাবাহিক গল্প

শাশ্বত বোস

৬টা বাজার আগে

[১ম পর্ব]

"এইরকম বাঁশ ঝাড়ের ভেতর দিয়েই তো এক হাতে মাছ আর অন্য হাতে হুইল ছিপ নিয়ে ফিরছিল ও। হঠাৎ করে ছেলেবেলার একটা ঝলক যেন ওর চোখের সামনে ভেসে উঠল। ছোটদিদা বলত-হইন্ধ্যার ফথে বাঁশের বাগান ডিঙাইয়া মাছ লইয়া ফিরবা-না বাপ, অগো নজর লাগে।"


দিল্লি রোডের ধারে উমাঙ্গ কাঁটা নামের বহুকাল বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা দোকানটা পেরিয়েই, থেমে গেল গাড়িটাবেশ কিছুক্ষ ধরেই ইঞ্জিনে একটা ভাইব্রেশন পাচ্ছিল অর্ণাভ, সাথে একটানা একটা বিচ্ছিরি ঘড়ঘড়ে আওয়াজব্রেকে পা দিয়ে ক্লাচে চাপ দিলে একটু যেন হড়কাচ্ছিলও গাড়িটাজায়গাটা অর্ণাভ ছোট থেকে দেখে আসছে, অনেক আগে এইখানটাতে 
বড় বড় লরিগুলো দাঁড়িয়ে মাল ওজন করাতবিশেষ করে কয়লা, বালি, পাথর কিংবা সেইসব মালের গাড়ি যেগুলো থেকে রাস্তায় কিছুটা মাল পরে গিয়ে ওজনে গরমিলের সম্ভাবনা থাকেট্রাক মালিকেরা সেইসব লরিগুলোকে এখানটায় দাঁড় করিয়ে ওজন করাতএই চত্বরে এই একটাই কাঁটা মেশিন ছিল, প্রায় ৮০ কিলো, ১০০ কিলোর আস্ত এক একটা লোডেড পাঞ্জাব ট্রাককে এখানে কাঁটায় চড়িয়ে ওজন করাতে দেখেছে ওএখন সব বন্ধবিকেল শেষ হয়ে সন্ধের অন্ধকারটা নামছে সবেসকাল থেকেই আজ ভ্যাপসা গরম, আকাশে পাতলা মেঘ এসে দিনের বেলাতেই প্রায় ৪০ ডিগ্রি অনুভব হয়েছেএখন এখানে গ্যারেজ কোথায় পাওয়া যাবে? মাথায় একরাশ চিন্তা আর চোখে মুখে বিচ্ছিরি বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল অর্ণাভদূরের বাঁশঝাড়টার ভেতর দিয়ে একটা সরু পথ দেখা যাচ্ছেভাগ্যিস অসুবিধে বুঝে গাড়িটাকে সাইড ঘেঁষে দাঁড় করিয়েছিল ও, না হলে রাস্তার মাঝখানে আজ গাড়ি নিয়ে বসে থাকতে হতগাড়িটা লক করে আশপাশ একটু পায়চারি করে দেখল অর্ণাভ। নাহ্‌ শুধু ঝিঁঝি পোকার ডাক, এঁদো পানায় জন্মানো ডাঁশ মশার গান আর একটা হালকা হিমভাব ছাড়া কিচ্ছু নেই জায়গাটাতেরাস্তাটার পাশে কিছুদূর নেমে গেলে একটা নালা পরেওটা পেরোলেই একটা সরু মেঠো জমির পথ, বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে গ্রামের ভেতর ঢুকে গেছেপ্যান্টটা টেনে একটু গোটাবার চেষ্টা করল অর্ণাভযদি গ্রামের ভেতর গিয়ে কোন জনমানবের দেখা পাওয়া যায়আজ কার মুখ দেখে যে বেরিয়েছিল! পৃথা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর থেকেই জীবনের শ্রী চলে গিয়েছে অর্ণাভরতার এখন দিন-রাতের ঠিক নেইআজ ছুটির দিন দেখে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল কাছেপিঠে একটু ঘুরে আসার জন্যগাড়িটা কদিন ধরেই প্রব্লেম দিচ্ছিলগাড়ির এয়ার কন্ডিশনারটাও কাজ দিচ্ছে না ঠিক করে, তাই এই প্রচণ্ড গরমেও এসি অফ করে জানলার কাচ নামিয়ে গাড়ি চালিয়েছে অর্ণাভহাজার কাজের চাপ আর মাথাভর্তি গিজগিজে চিন্তায় গাড়িটায় কাজ করাতে ভুলেই গেছিল ও, আর তার ফল হাতেনাতে
 
নালাটা পেরোনোর সময় বরফ ঘরের একটা ঠান্ডা হাওয়া যেন কামড় বসাল অর্ণাভর গায়েঅনেক ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ি থেকে মাছ ধরে ফেরার পথে একবার ঠিক এই হাওয়াটাই যেন ওর পিছু নিয়েছিলরাস্তাটাও অনেকটা এরকম ছিল না? এইরকম বাঁশ ঝাড়ের ভেতর দিয়েই তো এক হাতে মাছ আর অন্য হাতে হুইল ছিপ নিয়ে ফিরছিল ওহঠাৎ করে ছেলেবেলার একটা ঝলক যেন ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলছোটদিদা বলত,
-হইন্ধ্যার ফথে বাঁশের বাগান ডিঙাইয়া মাছ লইয়া ফিরবা-না বাপ, অগো নজর লাগে
অর্ণাভ বুঝতে পারে ওর গায়ের লোমগুলো যেন সব খাঁড়া হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তেনালাটা পেরিয়ে জুতোটা পায়ে দিয়ে নেয় অর্ণাভদূর থেকে একটা আলো ভেসে আসছে, তাড়াতাড়ি পা চালায় সেদিকেএকটা চায়ের ঠেক, সামনে টিমটিম করে একটা বাল্‌ব ঝুলছেএকপাশে স্টোভে জল ফুটছে, রেডিয়োয় হিন্দি গান বাজছেমাটির দেওয়ালে ঝোলানো ঘড়িতে সময় দেখল অর্ণাভ, ৬ টা বাজতে এখনো ১০ মিনিট বাকিপ্রাকবর্ষার সন্ধে গুমোট গরমে বেশ ঘেমে গেছে ও, এতক্ষ নিজে সেটা লক্ষ্য করেনিপরনের নীল পাঞ্জাবিটার খুট দিয়ে নিজের চশমাটা একবার মুছে নিয়ে, দোকানের বাইরের বেঞ্চিতে বসে পড়ে অর্ণাভপাশেই একটি বহুল প্রচলিত খাবার ডেলিভারি সংস্থার বাইক দাঁড়িয়ে আছেরাইডার অন্যদিকের বেঞ্চে বসে অন্যমনস্ক হয়ে কী যেন ভাবছে! আবছা অন্ধকারে তার মুখটা ভাল করে দেখা যাচ্ছে নাশুধু বোঝা যাচ্ছে মাঝে মাঝে হাতের চায়ের কাপটা সে বেঞ্চের উপর রাখছে, আবার কিছুক্ষ পর হাতে নিয়ে চুমুক দিচ্ছেতার পিছনের দিকের বেঞ্চিতে একটা বেশ মোটাসোটা পাঞ্জাবি ড্রাইভার হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছেতার শরীরের অর্ধেকটা বেঞ্চির বাইরে বেরিয়ে আছে,
-যাক বাঁচা গেল! এই সর্দারজির থেকে কিছু তো একটা হেল্প পাওয়া যাবে!
 
হাঁফ ছেড়ে নিশ্বাস নিল অর্ণাভকিন্তু আসার পথে কোন লরী তো দেখতে পেল না ও! গাড়ির চিন্তায় খেয়াল করেনি হয়তো! এতক্ষ দোকান মালিকের দিকে চোখ যায়নি ওরবেঁটে মতন চেহারার পাতলা গোছের লোক, কপালে গোসাঁই তিলকগলার গামছা দিয়ে মাঝে মাঝে কপালের ঘাম মুছছেস্টোভের গনগনে ফুটন্ত দুধে চা পাতা ফেলে ঢাকনিটা চাপা দিয়ে দিল লোকটাপাশের উনুনে তখন মামলেট ভাজা হচ্ছেভাজা পিঁয়াজ, ডিমের কুসুম আর কুচি আদা মিলিয়ে ছোটবেলার একটা গন্ধ নাকে ভেসে এল অর্ণাভরসে সরাসরি লোকটাকে জিজ্ঞেস করল,
-দাদা এককাপ চা হবে?
লোকটা হাতের ঈশারাতে অর্ণাভকে বসতে বললঅনেকক্ষ ধরেই বেশ খিদে পেয়েছে অর্ণাভরএতক্ষ সেটা খেয়াল হয়নিএখন চোখের সামনে খাবার দেখে খিদেটা যেন বহুগুণ বেড়ে গেছেপেটের নাড়িগোলানো সেই খিদের কাছে গাড়িটার চিন্তা চাপাই পরে গেল অর্ণাভর মনেলোকটা একটা কানা ভাঙা কাপে করে, কিছুক্ষণের ভেতর এক কাপ চা আর দুটো বিস্কুট এনে অর্ণাভর পাশে রাখলমিহিসুরে জিজ্ঞেস করল,
-আর কিছু খাবেন বাবু? আমার এই দোকান তো আপনাদেরই সেবার জন্ন্যি
 

ক্রমশ…

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)