বাতায়ন/প্রেমের
Rush-লীলা/যুগলবন্দি/২য় বর্ষ/২৫তম সংখ্যা/০৬ই মাঘ, ১৪৩১
প্রেমের
Rush-লীলা | যুগলবন্দি |
সুচরিতা চক্রবর্তী ও অজয় দেবনাথ
সুচরিতা চক্রবর্তী
অভিমান
"স্বার্থপরের মতো আমি আমার বাড়ির সবাইকে ভাল রেখেছি। কারো কোনো অভিযোগ নেই। আমি জানি তুমি আমাকে ঘেন্না করো। আমার কথা মনে এলে তোমার ভ্রূ কুঞ্চিত হয়। আর আমার কেবল কান্না দলা পাকায়। কেবল কান্না।"
"কী আর করা যাবে বলো, কে আর আমার মান ভাঙাতে আসছে! চাঁদের বদলে তোমাকেই তো দেখতে চেয়েছিলাম পর্ণা, কিন্তু সে সুযোগ তুমি দিলে কই! আমার চৌদ্ভি কা চাঁদ।"
বীজিতকে পর্ণা
প্রিয় সখা
কেমন আছো
তুমি? কেমন
আছে তোমার নিঃসঙ্গ অভিমান? তোমাকে সঙ্গ
দেবে বলে সকল একাকীত্ব ভিড় করেছে তোমার আশেপাশে। তুমি নিয়ম করে
বুকের ভেতর নিঃসঙ্গতা পুষে রাখতে ভালবাসো তাই তো? হ্যাঁ তাই-ই। শেষে ভালবাসলে কি না নিঃসঙ্গতা! অন্ধকার হলে নাকি
আকাশ ঘুমিয়ে পড়ে চাঁদ পাহারা দেয় এই বিশ্বসংসার। জেগে থাকে
জোনাকি জেগে থাকি আমি। তোমার যত অভিমান চাঁদের সাথে জোনাকির সাথে আমার সাথে।
রাস্তার
নিয়ন আলোগুলো চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে গলে গলে যাচ্ছে যন্ত্রণার পাথর।
তোমাকে হয়তো
সবটা পড়ে ওঠা হয়নি বিজীত। এক চতুর্থাংশও বুঝিনি তোমাকে নইলে আজ এমনটা হতো না। আমার
সারা জীবনের অপরাধবোধ শেষদিন পর্যন্ত আমাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। দিনগুলো তো আমার কেটে
যায় রাতে আসে জ্বর, কঠিন
এই শীতের রাতে হিমেল আদর।
আচ্ছা যদি
এমন হয় কাল সকালে উঠে দেখলে পৃথিবীটা একদম অন্যরকম হয়ে গেছে। আমি বাস স্ট্যান্ডে
দাঁড়িয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়, বাস স্ট্যান্ডের পাশের লেকে ফুটে আছে অন্য বসন্ত, অন্য পাখি
গাইছে, আকাশ
আশ্চর্য সবুজ!
তুমি একটা
ডাকনাম দিও আমাকে। একটা পাখির নাম বা একটা নদীর নাম। খুব ছোট নাম খুব ছোট খুউব—
এ বিশ্ব
জগতে তুমি ছাড়া এ নাম কেউ জানবে না।
মনে করো
বাসের জানলায় এক চিলতে রোদ এসে পড়েছে তোমার চোখে। আসলে আমিই আমার সাজের আয়নায় রোদ
খেলিয়ে ফেলেছি তোমার চোখে। তুমি বলবে, আহ্ বিরক্ত করো না পর্ণা। আমার হাত ধরে
বলবে সেই তো চলে যাবে। পৃথিবী যতই বদলে যাক তুমি তো ফিরেই যাবে, সেই আবার
অভিনয় করবে নিজের বাড়িতে ভাল থাকার অভিনয়। নিজের সংসার সাজাবে টিপটাপ করে রাখবে
বসার ঘর শোবার ঘর ব্যালকনি।
আমি জানলায়
চোখ রেখে বলব অভিনয় করতে করতে আমি ক্লান্ত বিজীত। ওই ব্যালকনিটুকু ছাড়া ও-বাড়িতে কোনো ঘরই আমার নয়। তুমি তো জানো রোদ-বৃষ্টি-আলো-অন্ধকারে আমি আঁকড়ে থাকি আমার ব্যালকনির গ্রিল।
দেখতে পাই তোমার অগোছালো জীবনটা, হাত পুড়িয়ে রান্না করছ, ইস্ত্রি না
হলেও গ্রাহ্য করো না। বেরিয়ে যাও অফিস, তারপর পার্টি অফিস, রাস্তার
কুকুরগুলো জানে তোমার বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে ওরা এগিয়ে যায় রোজ তোমার হাতের
বিস্কুটের আশায়। এসব কিছুর জন্য আমিই দায়ী বিজীত। অথচ কী স্বার্থপরের মতো আমি আমার বাড়ির সবাইকে ভাল রেখেছি। কারো কোনো অভিযোগ
নেই। আমি জানি তুমি আমাকে ঘেন্না করো। আমার কথা মনে এলে তোমার ভ্রূ কুঞ্চিত হয়। আর আমার কেবল কান্না দলা পাকায়। কেবল কান্না।
ইতি
তোমার কেবল
তোমার পর্ণা।
যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী
অজয় দেবনাথ
‘আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি…’
পর্ণা,
তোমার চিঠি পড়তে পড়তে হঠাৎ এই গানটা
মনে পড়ে গেল। নিজেকে পথ ভোলা পথিকই মনে হলো। যতই বিরক্ত হই না কেন, একটা কথা বলে রাখি
তোমার চিঠি পেতে, পড়তে বেশ ভালই লাগে। অথবা হয়তো সত্যিই বিরক্ত হই না, তোমাকে না পাওয়ার
যন্ত্রণা আমাকে পাগল করে দেয়।
হ্যাঁ আমি অভিমানী পর্ণা। কিন্তু কী
আর করা যাবে বলো, কে আর আমার মান ভাঙাতে আসছে! চাঁদের বদলে তোমাকেই তো দেখতে চেয়েছিলাম
পর্ণা, কিন্তু সে সুযোগ তুমি দিলে কই! আমার চৌদ্ভি কা চাঁদ। অন্ধকারে যদি যন্ত্রণার
পাথর গলে গলে চুঁয়ে পড়ে, যদি শীতের রাতে হিমেল আদর সত্যিই প্রয়োজনীয় হয় তবে আমার বুকের
উষ্ণতায় কেন আসছ না, কেনই বা তোমার আদরে আদরে আমাকেও ভরিয়ে দিচ্ছ না?
বেশ নদীর নাম চাইলে চূর্ণি দিতে পারি
যে বিনা বাধায় নিজের অপছন্দের সবকিছু ভাসিয়ে দিয়ে চূর্ণ করবে। আর, পাখির নাম চাইলে…
মুনিয়া যে সারাক্ষণ আমার সঙ্গে খুনশুটি করে আমার কাছে কাছেই থাকবে আর উষ্ণতায় ভরিয়ে
দেবে আমাকে। দুজনে উড়ে যাব যে দিকে দুচোখ চায়, যেখানে খুশি ঘর বাঁধবো। যাবে তো? কী
গো আমার মিষ্টি মুনিয়া?
পার্টি করতে
আর ভাল লাগে না। কী ভেবে শুরু করেছিলাম আর কী হলো! সকলেই যে যার আখের গোছাতে ব্যস্ত।
আদর্শ মূল্যবোধের কোন মূল্য নেই। আমি বা আমার মতো কিছু ভ্যাগাবন্ড মিছেই আদর্শ ধোওয়া
জল খেয়ে নিজেকেই নিঃস্ব করলাম।
আর ভাল লাগছে না, বিশ্বাস করো। আমার
আদর্শের দোহাই তোমায়। যদি সত্যিই আমি তোমার একমাত্র ভালবাসার মানুষ হই, যদি অপরাধবোধ
সত্যিই তোমাকে দিবারাত্র কুড়ে কুড়ে খায়, তবে আর দেরি না করে চলে এসো। বাকি জীবন আমরা
একসঙ্গেই কাটিয়ে দেব, তবে হ্যাঁ তোমাকেই এবার আসতে হবে, আমি যাব না। আমার অস্থানের
বাসাতেই আমি থাকব। আমার অধিকারে কাউকে ভাগ বসাতে দেব না। আসবে?
তোমার একান্ত…
অনেকবার পড়তে বাধ্য হলাম।অনেক কথা ,মনে হোলো,শোনা,কার কাছে? কোথায়? ওহ।
ReplyDeleteএইরকম মন্তব্য বারবার প্রাণিত করে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ইন্দ্রজিৎ-বাবু।
Deleteবিজিত ,পর্ণার এই ফিসফাস,দাঁত চেপে বলা ,না বলা বিস্ফোরণসমূহ,ক্রমশ জায়গা করে নিচ্ছে সন্ধেগুলো,দুপুরগুলোর ভেতরে,যখন,মনে পড়ে।পড়তেই থাকে।দারুন।পার্টি শব্দের অলিগলি,বিজিত যেভাবে বলছেন,কিছু বলার নেই।আরো হোক
ReplyDeleteআপনার প্রশংসায় বুক ভরে যাচ্ছে গর্ব। এরকম পাঠক যে কোন লেখক, পত্রিকার সম্পদ। হবে, আরো হবে।
Deleteসম্পাদককে অনেক ধন্যবাদ জানাই এই রকম অভিনব একটি কাজের সুযোগ দেবার জন্য।
ReplyDeleteঅনেক অনেকবার স্বাগত জানাই আপনাকে।
ReplyDeleteচিঠি এখানে মনের জানালা হয়ে উঠেছে। ভিতর বাইরের সব দৃশ্যপট দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে আর মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে এই প্রেমকে গুছিয়ে নিতে একান্তভাবে নিজের জন্য।
ReplyDeleteধন্যবাদ জানাচ্ছি।
যথার্থই বলেছেন। আপনাকে স্বাগত জানাই। নিজের পরিচয় দিলে অবশ্য বেশি খুশি হই।
Deleteলেখা যখন পাঠককে স্পর্শ করে যায় তখনই লেখার সার্থকতা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানি বন্ধু।
Delete