বাতায়ন/প্রেমের
Rush-লীলা/ছোটগল্প/২য় বর্ষ/২৫তম সংখ্যা/০৬ই মাঘ, ১৪৩১
প্রেমের
Rush-লীলা | ছোটগল্প
শ্রীময়ী গুহ
জীবনের রাসলীলা
"বলেছিলি না বিয়ের কথা! বিয়ে তো তুই করেছিস, আমি তো অবিবাহিতা আজও, বিয়ের মর্যাদাটুকু রেখেছিস? তোর দ্বারা কাউকে দেওয়া কোন কথাই রাখা সম্ভব নয় তুহিন। মেরুদন্ডহীন তুই।”
আলতো করে
দেয়াসিনীকে ধাক্কা দিয়ে হাতটা ওর বাহুতে রেখে দিল তুহিন, ঠিক যেমন
সামনের পুকুরের দুপুর নিস্তব্ধ জলে ঝরা পাতা পড়ে টুপ করে, ডোবে না
তখনই কিছুক্ষণ ভেসে থাকে তেমন।
“উঁ! কিছু বলবি?”
ঘুরে তাকাল
তুহিনের দিকে দেয়াসিনী,
দীঘল চোখদুটো ওর যেন কবেকার হরিণীর চঞ্চলতা ছেড়ে গভীর অতল ঝিলের ছলছল ভাব।
সানগ্লাসটা চুলের ওপর তোলা,
সেই আগের পিঠ ছাপানো একঢাল চুলের দেয়া এখন কাঁধ অবধি রুপো রুপো রং চুলের অধিকারিণী।
“উঁ! কিছু বলবি?”
অনেকটাই বদল
মুখ চোখেরও। চোখের কোল ঈষৎ ভারী। তবে এখনও ভীষণ
সুন্দরী, আগের
থেকেও বেশি সুন্দর ঝকঝকে ত্বক আর তেমনই ভরাট ব্যক্তিত্ব। লাবণ্যময়ী? নাকি
লাস্যময়ী! আবেদন ছিলই একটা অদ্ভুত রকমের সেটা বোধহয় লাস্যের নয়, আগেও ভীষণ
আকর্ষণীয় ছিল এখনও ততটাই,
বরং বেশিই যেন। তবে বয়সের কারণে আর স্বল্পভাষী হয়ে যাওয়ার কারণে ওই
লাবণ্যের আতিশর্যে ব্যক্তিত্ব বেড়ে গেছে কিনা
কে জানে!
“হাঁ করে দেখছিস যে চিনিস না?”
দেয়াসিনীর
প্রশ্নে থতমত তুহিন। বলতে চাইল,
“না রে এই দেয়াকে চিনি না।”
কিন্তু পারল না। চুপ করেই রইল।
দেয়া তুহিনের হাতটা ধরল, একটা উষ্ণ চাপ দিল ওর হাতে, আঙুলে আঙুলের নীরব ভাষা… খুউব চেনা এই স্পর্শ।
কখনও কোনোদিন এমনভাবেই আঙুলে আঙুল জড়ানো মৌন ভাষার মাধ্যম ছিল ওদের সবটুকু উন্মাদনার কেন্দ্র। সামনের পুকুরের জলে তিরতির বাতাসীয়া খেলা - ওদের হৃদস্পন্দনের গতিবেগ বৃদ্ধি নির্ধারণ করেই বোধহয় হঠাৎই চঞ্চল হয়ে উঠেছে। দু-একটা পানকৌড়ির ডুব ডুব মুখ-ঠোঁট ওঠা নামা দেখছে ওরা। চুপচাপ কিছুক্ষণ।
“দেয়া তুই বদলে গেছিস অনেক। কতক্ষণ হল আমরা এসেছি এখানে, তুই এত্ত চুপ! আগে হলে তো বকবক করে কান ঝালাপালা করে দিতিস। আচ্ছা এখনও সেইরকম প্রতিবাদী ঝটপট মুখে মুখে কথা আর সত্যবাদী যুধিষ্ঠির আছিস নাকি?”
”ওটার স্ত্রী
লিঙ্গ কর। পারলি না তো! হাঃ হাঃ হাঃ! না রে তুহিন, কোনোদিনই আমি অতটাও সত্যবাদী ছিলাম না, যতটা তোরা
ভাবতিস। তবে হ্যাঁ, অদরকারে
মিথ্যে বলা আমার এখনও স্বভাববিরুদ্ধ।”
“সেদিন তাহলে চলে গেলি কেন আমাকে ফেলে, বল দেয়া!”
“কারণ সত্যিটা স্বীকার করার সাহস তোর ছিল না তাই।”
“তাই বলে এক্কেবারে দুম করে আমাকে ছেড়ে ওভাবে চলে যাবি? আমি তখন দ্বন্দ্বে পড়েছিলাম দেয়া, কোনটা বাছা উচিত— আমার বিদেশের চাকরিটা নাকি তুই! তোকে তো তাও আমি বলেছিলাম, মা-বাবার আপত্তি সত্ত্বেও, যে তুই তোর চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে আমার সাথেই চল। বিয়ের কথা ওখানে গিয়ে নাহয়…”
দেয়াসিনী তুহিনের হাতটা ছেড়ে দেয় আচমকা।
“তুহিন আমার কাজ আছে উঠলাম রে।”
বলেই বুকের কাছে আকাশনীল রঙা শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে টেনে নিয়ে উঠতে যায়।
দেয়ার হাত ধরে ফেলে তুহিন। “এখনই চলে যাবি? আমাকে এখানে একা রেখে? আবারও? আশ্চর্য! আজও তোকে বুঝলাম না দেয়া, বড্ড দেমাকি তুই আর হৃদয়হীনা তো বরাবরই। নাহলে এতবছর পর ফেসবুকে তোকে দেখে দেখা করতে চাইলাম, এদেশে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম জানিস! কতকিছু কল্পনা করে যে পাগল পাগল লাগত সেই আগের মতো… তোর সাথে দেখা হলে সেই পুরোনো…”
দেয়া দাঁড়িয়ে পড়েছে ততক্ষণে, ওর ডানহাতটা তুহিনের হাতের মুঠোয় অনবরত চাপ সহ্য করছে, অধিকারের চাপ, সত্যিটা লুকিয়ে মিথ্যে ভালবাসার প্রলেপে অনেক কিছু আদায়ের চাপ আর প্রথম প্রেমের মাশুল হিসেবে এক হৃদয়হীনা নাম দেওয়া প্রৌঢ়ার হৃদয়টা আবারও এতবছর পরেও নিঙরে নিঃশেষ করে দেওয়ার চাপ।
চকমকি পাথরের মতো ঠিকরে উঠল দেয়াসিনী,
“তুহিন! তুই এদেশে এসেছিস আমার জন্যে নয়, তোর ব্যক্তিগত কারণে… দ্বিতীয়ত, আমার সাথে দেখা করতে এসেছিস তোর পরিবার তোর স্ত্রী, সন্তান জানে তো? তৃতীয়ত, কল্পনা করেছিস আমাকে নিয়ে মানে? সেই পুরোনো দিনের ঘটনা বা দুর্ঘটনার জন্যে আমাকেই মাশুল গুনতে হয়েছে তুহিন। হ্যাঁ, সেই ঘটনায় আমিও নিজের থেকেই তোকে গ্রহণ করেছিলাম কারণ ভরসা এসেছিল কয়েক মুহূর্তের জন্যে হলেও, যে তুই তোর ভালবাসাকে কিছুতেই অসম্মান করতে পারবি না, তুই আমাকে কোনও অবস্থাতেই ঠকাতে পারবি না, এই বিশ্বাসে ভর করেই তো…
কিন্তু আমার কাজটা কাজই নয় এমন ধারণা তোর হল কীভাবে? আমাকেই আমার চাকরি, কর্মজগত ফেলে তোর উন্নতির জন্যে বিদেশ পাড়ি দিতে হবে কেন? কেন আমাকেই তোর সব সাধ পূরণের জন্যে নিজের পৃথিবীটুকু বলি দিতে হবে বল! আর যেহেতু তুই আমাদের ভালবাসাটাকে সম্মান করতে পারিসনি, তুই পালিয়ে গিয়ে বেঁচেছিলি - তাই আমাকেই হাসপাতালের বেডে চোখের জল ফেলতে ফেলতে আমারই শরীরের ভেতরে একটা কুঁড়ি, না ফোটা ফুলের অকালে শেষ হতে দেওয়ার জন্য ক্ষমা চাইতে হয়েছে।
নির্লজ্জ তুই, এতকিছুর পরেও কল্পনা করতে পারেছিস যে এই দেয়াসিনী তোর আলিঙ্গনে আবার নিজেকে ছড়িয়ে দেবে! ছি! বিয়ে তো দুটো মনের হয় রে। প্রথা নিয়ে আমার বিশ্বাস নেই। কিন্তু “পাশাপাশি আছি” বলেও যদি কেউ হাতটা মাঝপথে ছেড়ে দেয়, তাকে কৃতঘ্ন ছাড়া কীইইই বা বলা যায় তুহিন! বলছিলি না আমি সত্যবাদী যুধিষ্ঠির! হ্যাঁ, আমি এমনই। সাহস থাকলে, তোর প্রথম প্রেমকে আবার দেখতে ইচ্ছে করছে, এই সত্যিটা বাড়িতে বলেই আমার কাছে আসতিস। লুকিয়ে নয়।
এটা ভালবাসার অপমান। আমার কাছে আত্মসম্মান আর ভালবাসার সম্মান দুটোর একই অর্থ। নিজেকে বিকিয়ে দিতে আমি পারিনি কখনও মিথ্যের কাছে আর পারবোও না। তুহিন, তোর কাপুরুষ মানসিকতার কল্পনার সঙ্গী আর হতে পারলাম না বলে আমার নিজের প্রতি গর্ব হচ্ছে, বিশ্বাস কর। কষ্টও হচ্ছে ভীষণ এটা ভেবেই যে, আমার মতো এক হৃদয়হীনার হৃদয় তোর মতো একজন বহুরূপীর জন্যে কেঁদে উঠেছে বারবার আর আরোও যন্ত্রণা কোথায় জানিস? আমার ঘটনা দুর্ঘটনা - আমার কল্পনা আবেগ- আমার ভাল লাগা মন্দ লাগা- আমার ভালবাসার সহবাস পরবাস সবটাই এক কুৎসিত অপাত্রে দান করেছিলাম। ফিরিয়ে নিলাম আজ এই মুহূর্তে। আমাদের জীবনের রাসলীলা আমি অন্তত তোর মতো শুধু নিজের স্বার্থের জন্যে, কেবলমাত্র কয়েক মুহূর্তের জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্যে কালিমালিপ্ত করতে দিতে পারি না।
আমি নিজেকে সম্মান করি, প্রতিটা সম্পর্ককে সম্মান করি। তোর মতো করে ভাবতে আমার ঘৃণা বোধ হয়।
ভাল থাকিস তুহিন। ভালবাসার মতো মহার্ঘ উপহার অন্তত আমার কাছ থেকে তোর মতো প্রতারকের প্রাপ্য নয়। তুই তো নিজের স্ত্রী পরিবারকেও প্রতারণা করছিস তুহিন। ছি! বলেছিলি না বিয়ের কথা! বিয়ে তো তুই করেছিস, আমি তো অবিবাহিতা আজও, বিয়ের মর্যাদাটুকু রেখেছিস? তোর দ্বারা কাউকে দেওয়া কোন কথাই রাখা সম্ভব নয় তুহিন। মেরুদন্ডহীন তুই।”
তুহিনকে স্তব্ধ করে দিয়ে গর্বিত অথচ শান্ত পদক্ষেপে হেঁটে চলে গেল এক সাধারণ চাকুরিরতা রমণী, যার নিজেকে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির বলতেও ইচ্ছে করে না, আর অপ্রয়োজনে মিথ্যে বলে নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিতেও ভীষণ অনীহা তাতে যদি কারুর কারুর কাছে হৃদয়হীনা তকমা জোটে তাও সই।
হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে দেয়াসিনীর প্রথম প্রেমিক তুহিনের মাঝের দূরত্বও এখন আমরণের। ভালবাসে সে আজও তুহিনকেই এটা যেমন সত্যি, আবার ঘৃণা করে সবথেকে বেশি ওকেই এটাও সত্যি।
জীবনের রাসলীলা কখনও কখনও নিজেকেই নতুন করে চিনিয়ে দেয় এক ঝলক কান্না মেশা আলোর মতো।
“হাঁ করে দেখছিস যে চিনিস না?”
“না রে এই দেয়াকে চিনি না।”
কিন্তু পারল না। চুপ করেই রইল।
দেয়া তুহিনের হাতটা ধরল, একটা উষ্ণ চাপ দিল ওর হাতে, আঙুলে আঙুলের নীরব ভাষা… খুউব চেনা এই স্পর্শ।
কখনও কোনোদিন এমনভাবেই আঙুলে আঙুল জড়ানো মৌন ভাষার মাধ্যম ছিল ওদের সবটুকু উন্মাদনার কেন্দ্র। সামনের পুকুরের জলে তিরতির বাতাসীয়া খেলা - ওদের হৃদস্পন্দনের গতিবেগ বৃদ্ধি নির্ধারণ করেই বোধহয় হঠাৎই চঞ্চল হয়ে উঠেছে। দু-একটা পানকৌড়ির ডুব ডুব মুখ-ঠোঁট ওঠা নামা দেখছে ওরা। চুপচাপ কিছুক্ষণ।
“দেয়া তুই বদলে গেছিস অনেক। কতক্ষণ হল আমরা এসেছি এখানে, তুই এত্ত চুপ! আগে হলে তো বকবক করে কান ঝালাপালা করে দিতিস। আচ্ছা এখনও সেইরকম প্রতিবাদী ঝটপট মুখে মুখে কথা আর সত্যবাদী যুধিষ্ঠির আছিস নাকি?”
“সেদিন তাহলে চলে গেলি কেন আমাকে ফেলে, বল দেয়া!”
“কারণ সত্যিটা স্বীকার করার সাহস তোর ছিল না তাই।”
“তাই বলে এক্কেবারে দুম করে আমাকে ছেড়ে ওভাবে চলে যাবি? আমি তখন দ্বন্দ্বে পড়েছিলাম দেয়া, কোনটা বাছা উচিত— আমার বিদেশের চাকরিটা নাকি তুই! তোকে তো তাও আমি বলেছিলাম, মা-বাবার আপত্তি সত্ত্বেও, যে তুই তোর চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে আমার সাথেই চল। বিয়ের কথা ওখানে গিয়ে নাহয়…”
দেয়াসিনী তুহিনের হাতটা ছেড়ে দেয় আচমকা।
“তুহিন আমার কাজ আছে উঠলাম রে।”
বলেই বুকের কাছে আকাশনীল রঙা শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে টেনে নিয়ে উঠতে যায়।
দেয়ার হাত ধরে ফেলে তুহিন। “এখনই চলে যাবি? আমাকে এখানে একা রেখে? আবারও? আশ্চর্য! আজও তোকে বুঝলাম না দেয়া, বড্ড দেমাকি তুই আর হৃদয়হীনা তো বরাবরই। নাহলে এতবছর পর ফেসবুকে তোকে দেখে দেখা করতে চাইলাম, এদেশে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম জানিস! কতকিছু কল্পনা করে যে পাগল পাগল লাগত সেই আগের মতো… তোর সাথে দেখা হলে সেই পুরোনো…”
দেয়া দাঁড়িয়ে পড়েছে ততক্ষণে, ওর ডানহাতটা তুহিনের হাতের মুঠোয় অনবরত চাপ সহ্য করছে, অধিকারের চাপ, সত্যিটা লুকিয়ে মিথ্যে ভালবাসার প্রলেপে অনেক কিছু আদায়ের চাপ আর প্রথম প্রেমের মাশুল হিসেবে এক হৃদয়হীনা নাম দেওয়া প্রৌঢ়ার হৃদয়টা আবারও এতবছর পরেও নিঙরে নিঃশেষ করে দেওয়ার চাপ।
চকমকি পাথরের মতো ঠিকরে উঠল দেয়াসিনী,
“তুহিন! তুই এদেশে এসেছিস আমার জন্যে নয়, তোর ব্যক্তিগত কারণে… দ্বিতীয়ত, আমার সাথে দেখা করতে এসেছিস তোর পরিবার তোর স্ত্রী, সন্তান জানে তো? তৃতীয়ত, কল্পনা করেছিস আমাকে নিয়ে মানে? সেই পুরোনো দিনের ঘটনা বা দুর্ঘটনার জন্যে আমাকেই মাশুল গুনতে হয়েছে তুহিন। হ্যাঁ, সেই ঘটনায় আমিও নিজের থেকেই তোকে গ্রহণ করেছিলাম কারণ ভরসা এসেছিল কয়েক মুহূর্তের জন্যে হলেও, যে তুই তোর ভালবাসাকে কিছুতেই অসম্মান করতে পারবি না, তুই আমাকে কোনও অবস্থাতেই ঠকাতে পারবি না, এই বিশ্বাসে ভর করেই তো…
কিন্তু আমার কাজটা কাজই নয় এমন ধারণা তোর হল কীভাবে? আমাকেই আমার চাকরি, কর্মজগত ফেলে তোর উন্নতির জন্যে বিদেশ পাড়ি দিতে হবে কেন? কেন আমাকেই তোর সব সাধ পূরণের জন্যে নিজের পৃথিবীটুকু বলি দিতে হবে বল! আর যেহেতু তুই আমাদের ভালবাসাটাকে সম্মান করতে পারিসনি, তুই পালিয়ে গিয়ে বেঁচেছিলি - তাই আমাকেই হাসপাতালের বেডে চোখের জল ফেলতে ফেলতে আমারই শরীরের ভেতরে একটা কুঁড়ি, না ফোটা ফুলের অকালে শেষ হতে দেওয়ার জন্য ক্ষমা চাইতে হয়েছে।
নির্লজ্জ তুই, এতকিছুর পরেও কল্পনা করতে পারেছিস যে এই দেয়াসিনী তোর আলিঙ্গনে আবার নিজেকে ছড়িয়ে দেবে! ছি! বিয়ে তো দুটো মনের হয় রে। প্রথা নিয়ে আমার বিশ্বাস নেই। কিন্তু “পাশাপাশি আছি” বলেও যদি কেউ হাতটা মাঝপথে ছেড়ে দেয়, তাকে কৃতঘ্ন ছাড়া কীইইই বা বলা যায় তুহিন! বলছিলি না আমি সত্যবাদী যুধিষ্ঠির! হ্যাঁ, আমি এমনই। সাহস থাকলে, তোর প্রথম প্রেমকে আবার দেখতে ইচ্ছে করছে, এই সত্যিটা বাড়িতে বলেই আমার কাছে আসতিস। লুকিয়ে নয়।
এটা ভালবাসার অপমান। আমার কাছে আত্মসম্মান আর ভালবাসার সম্মান দুটোর একই অর্থ। নিজেকে বিকিয়ে দিতে আমি পারিনি কখনও মিথ্যের কাছে আর পারবোও না। তুহিন, তোর কাপুরুষ মানসিকতার কল্পনার সঙ্গী আর হতে পারলাম না বলে আমার নিজের প্রতি গর্ব হচ্ছে, বিশ্বাস কর। কষ্টও হচ্ছে ভীষণ এটা ভেবেই যে, আমার মতো এক হৃদয়হীনার হৃদয় তোর মতো একজন বহুরূপীর জন্যে কেঁদে উঠেছে বারবার আর আরোও যন্ত্রণা কোথায় জানিস? আমার ঘটনা দুর্ঘটনা - আমার কল্পনা আবেগ- আমার ভাল লাগা মন্দ লাগা- আমার ভালবাসার সহবাস পরবাস সবটাই এক কুৎসিত অপাত্রে দান করেছিলাম। ফিরিয়ে নিলাম আজ এই মুহূর্তে। আমাদের জীবনের রাসলীলা আমি অন্তত তোর মতো শুধু নিজের স্বার্থের জন্যে, কেবলমাত্র কয়েক মুহূর্তের জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্যে কালিমালিপ্ত করতে দিতে পারি না।
আমি নিজেকে সম্মান করি, প্রতিটা সম্পর্ককে সম্মান করি। তোর মতো করে ভাবতে আমার ঘৃণা বোধ হয়।
ভাল থাকিস তুহিন। ভালবাসার মতো মহার্ঘ উপহার অন্তত আমার কাছ থেকে তোর মতো প্রতারকের প্রাপ্য নয়। তুই তো নিজের স্ত্রী পরিবারকেও প্রতারণা করছিস তুহিন। ছি! বলেছিলি না বিয়ের কথা! বিয়ে তো তুই করেছিস, আমি তো অবিবাহিতা আজও, বিয়ের মর্যাদাটুকু রেখেছিস? তোর দ্বারা কাউকে দেওয়া কোন কথাই রাখা সম্ভব নয় তুহিন। মেরুদন্ডহীন তুই।”
তুহিনকে স্তব্ধ করে দিয়ে গর্বিত অথচ শান্ত পদক্ষেপে হেঁটে চলে গেল এক সাধারণ চাকুরিরতা রমণী, যার নিজেকে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির বলতেও ইচ্ছে করে না, আর অপ্রয়োজনে মিথ্যে বলে নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিতেও ভীষণ অনীহা তাতে যদি কারুর কারুর কাছে হৃদয়হীনা তকমা জোটে তাও সই।
হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে দেয়াসিনীর প্রথম প্রেমিক তুহিনের মাঝের দূরত্বও এখন আমরণের। ভালবাসে সে আজও তুহিনকেই এটা যেমন সত্যি, আবার ঘৃণা করে সবথেকে বেশি ওকেই এটাও সত্যি।
জীবনের রাসলীলা কখনও কখনও নিজেকেই নতুন করে চিনিয়ে দেয় এক ঝলক কান্না মেশা আলোর মতো।
সমাপ্ত
বেশ হয়েছে
ReplyDelete