প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Tuesday, January 21, 2025

ছিল নিধিবন এলো কামবন | প্রদীপ কুমার দে

বাতায়ন/প্রেমের Rush-লীলা/প্রবন্ধ/২য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/০৬ই মাঘ, ১৪৩১

প্রেমের Rush-লীলা | প্রবন্ধ

প্রদীপ কুমার দে

ছিল নিধিবন এলো কামবন


"শর্টকাট ফর্মুলা। সব সহজলব্য। প্রেম আর প্রেম মনে প্রেমে প্রেমে প্রেমময়। যুব সমাজ ব্যস্ত। যুবতীরা ব্যতিব্যস্ত। কার কাঁধে চড়বেবাপ মা অবিবেচক। যাক জলাঞ্জলি। তারা তাদের ফুর্তি নিয়েই আমাদের জীবন।"


কথাটা শুনে শুনে কান পচে গেছে তবুও কান পাতলেই শোনা যায়, সেই ব্যঙ্গ বিদ্রুপ সহ টিপ্পনি, "কৃষ্ণ করলে লীলা আর আমরা করোলেই বিলা?" সত্যি বেশ মজার কথা! ধর্ম অধর্মে রেষারেষি। ধার্মিক মানুষ যে আচার আচরণ করে। সেটাকে আধুনিক সমাজ নানান চোখে দেখে, সেই বিষয় নিয়ে আলোকপাত করার জন্য এই কলম ধরা
 
নিধিবন ~
উত্তর প্রদেশের মথুরা জেলার বৃন্দাবনে অবস্থিত নিধিবন। যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার কথামতো প্রতিরাতে এবং বিশেষ দিনে তার কথামতো কার্ত্তিক মাসের রাসপূর্ণিমায় এই নিধিবনে এসে রাধাসহ গোপিনিদের সাথে রাসলীলায় মেতে ওঠেন
 
প্রতি সন্ধ্যায় এই নিধিবনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার আগে সেখানে খাদ্যদ্রব্য পানীয় জল রেখে আসা হয়। সেখানে একটি শয়নকক্ষ আছে। সেটিকেও পরিষ্কার করে শয্যারচিত হয়। 
 
জানা গেছে প্রতিরাতে কৃষ্ণ এখানে এসে রাধার সাথে মিলন করে। অন্য গোপিনিরাও তার সঙ্গে নৃত্য গীতাদিতে মেতে ওঠেন। খাদ্য পানীয় গ্রহণ করেন। তাঁদের ওই সংরক্ষিত বিছানা ব্যবহারেরও বহু নিদর্শন পাওয়া যায়। যদিও এ দৃশ্য কেউ দেখতে পায় না। কেউ জোর করে দেখলে সে অন্ধ অথবা পাগল হয়ে যায়। এই সময়ে ওখানে পাখিরাও ওই স্থান ত্যাগ করে
 
এই বনের সকল গাছের শাখাপ্রশাখা বাঁকা এবং একটি শাখা অন্য শাখাকে জড়িয়ে থাকে। তুলসী গাছেরও ওই রূপ দেখা যায়। প্রত্যেকটি গাছেরও শাখাপ্রশাখা বিভঙ্গ আকৃতিতে একে অন্যকে জড়িয়ে এক প্রেমাতুর আকাঙ্ক্ষার প্রতিমূর্তি হিসাবে দণ্ডয়ামান যেন
 
কৃষ্ণর এই নারীদের নিয়ে লীলা, নৃত্য, গীত এক আকর্ষণীয় এবং রোমাঞ্চকর মুহূর্ত যা আমাদের শ্রবণেন্দ্রীয়কে আনন্দে ভরপুর করে রাখে। বহিঃচোখে দৃশ্যায়ন অসম্ভব হওয়ায় আমরা তা মনের চোখে অন্তর দিয়ে অবলোকন করি মাত্র
 
সারারাত ধরে  নৃত্যগীত আর মিলন উৎসব চলে যা ভোর হওয়ার সাথে সাথে সব কালের গর্ভে তলিয়ে যায়। কিন্তু তার রেশ রয়ে যায়। আমরা অনুভব করি মাত্র তারই ইচ্ছা-অনিচ্ছা। এ সব আমাদের হাতের বাইরে কারণ আমরা হলাম গিয়ে তারই হাতের ক্রীড়নক
 
বাইরে থেকে দেখে না বুঝে আমরা তার কার্জক্রিয়া করে ফেলি আসলে ভিতরে না প্রবেশিলে আমাদের মধ্যে অনেক অন্তর্দ্বন্দ্ব জন্মদিন নেয়। ভুল বুঝি অন্যরে বোঝাই। 
 
যার কর্ম সেই করে। অন্যের বোঝা দায়। যিনি কৃষ্ণ তিনি যে দায়ভার গ্রহণ করেন, অবতার রূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়ে অন্যকে তার যে লীলার রূপ দেখান, মায়ার জাল যে বিস্তার করেন মোহে আবদ্ধ করেন তার থেকে বেরিয়ে আসা অত সহজ নয়। পৃথিবী প্রবঞ্চময়, মায়ায় ভরা জগৎ আর আমরা তার মধ্যেই তার সৃষ্টির চক্রেই আবর্তিত
 
কামবন ~
আধুনিক সমাজ। লারেলাপ্পার যুগ। শর্টকাট ফর্মুলা। সব সহজলব্য। প্রেম আর প্রেম মনে প্রেমে প্রেমে প্রেমময়। যুব সমাজ ব্যস্ত। যুবতীরা ব্যতিব্যস্ত। কার কাঁধে চড়বে? বাপ মা অবিবেচক। যাক জলাঞ্জলি। তারা তাদের ফুর্তি নিয়েই আমাদের জীবন। বিরক্তিকর তাঁদের ভাষণ
 
বাইরে বেরিয়ে একা থেকে দোকা হয়।  যুবক যুবতীর পিছু নেয়। ধাক্কা খায় গালি মানে রাম খিস্তি খায়। যুবতীর আড়চোখের চাওনি লক্ষ্য করে, টানাটানি, মারামারি করে পাবলিক শো হয়ে শেষে হলেই পরের দিনে দেখে যায় ওই যুবক যুবতী হাত ধরাধরি করে একেবারে মসৃণ পথ ধরে হেঁটে চলেছেহাঁটাহাঁটি, রেস্টুরেন্ট, গাড়ি কেনাকাটা করে একেবারে পার্কের নির্জনতায়
 
শেষে প্রেম ঢুকে যায় কামবনেআগে ছিল নির্জন মাঠ আর এখন একেবারে হোটেলরুমে। '-ওয়াই-' ঘন্টায় ভাড়া নিয়ে রাসলীলা সেরে বেরিয়ে আসা। গোপনীয়তার বেড়াজাল, সাজানো বিছানা একেবারে পাকাপোক্ত ব্যবস্থায় সাফসুতরোর জন্য বাথরুমও তৈরি। একবার পরিষ্কার হলেই আবার নতুন
 
বেশি দিনে নয়। এ অবস্থা সাময়িক। ভুল বললাম, অবস্থা ব্যবস্থা সব ঠিক থাকবে, পাল্টে যাবে শুধু নরনারী, যুগলের বদল। মুখ পাল্টানো যাকে বলে। ধরো, খেলো, ছেড়ে দাও। ইউজ এন্ড থ্রো!
 
যুগে যুগে প্রেম বাঁচে। কৃষ্ণলীলা শুনেছি। নিধিবন ছিল আজও আছে। আমরা সেটাই বিলা বলে কামবনে আছি। সহজ সুখ। সহজলভ্য। তাতক্ষনিক প্রাপ্তি, মাথায় রাখি ইউজ এন্ড থ্রো!
 

সমাপ্ত

2 comments:

  1. শুভেচ্ছা পত্রিকার সম্পাদক সহ সকল গুনীজনে।

    ReplyDelete
  2. খুব ভাল লাগল। 🌹🌹🌹

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)