বাতায়ন/প্রেমের
Rush-লীলা/ধারাবাহিক গল্প/২য় বর্ষ/২৫তম সংখ্যা/০৬ই মাঘ, ১৪৩১
প্রেমের
Rush-লীলা | ধারাবাহিক গল্প
ডরোথী
ভট্টাচার্য
স্বর্গ
[১ম পর্ব]
"অরুন্ধতি চমকে উঠল, কে ডাকল ওকে? ওই নামে তো একজনই ওকে ডাকত, সে হল সুগত, তাও কলেজে পড়বার সময়। চমকে তাকিয়ে দেখল, একজন মাঝবয়সি ভদ্রলোক তার দিকে তাকিয়ে হাসছে, বুঝতে দেরি হয় না অরুন্ধতির এই সেই সুগত।"
পাহাড় কেটে
কেটে রাস্তা তৈরি করেছে মানুষ। তারই উপর দিয়ে জিপ এগিয়ে চলেছে। দুইপাশে সুউচ্চ গিরিশৃঙ্গ। বছরের পর বছর নির্বাক হয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা হিমাদ্রীশিখরের কী দুর্নিবার হাতছানি।
তারই টানে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের কাজকর্ম ফেলে ছুটে যায়, ছুটে যায়
নিজেদের রুক্ষ মরুভূমির মতো মনটাকে একটু সজীব করে তোলার আশায়।
জিপের মধ্যে বসে আছে অরুন্ধতী। তার মন চার দেওয়ালের ঘেরাটোপের মধ্যে বেশিদিন থাকতে পারে না। তার মন ছুটে যায় প্রকৃতির কাছে। পাহাড়, সমুদ্র, অরণ্য তাকে
কাছে টানে। একথা অনুপম জানে আর জানে বলেই অফিস ছুটি নিয়ে সেও অরুন্ধতির যাত্রাসঙ্গী হয়েছে।
জিপ এগিয়ে চলেছে। দুইপাশে পাহাড়ের পর পাহাড়। পাহাড়ের উপর অসংখ্য নাম না জানা গাছ এলোপাথাড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে
কোথাও কোথাও কালো মেঘ জমে আছে। রাস্তার বাঁক ঘুরে কিছুদূর যেতে না যেতেই পাহাড়ের
মাথার উপর এসে পড়ছে সোনালী রোদ। যেখানে মেঘ জমে রয়েছে, কখনো কখনো
সেখানে দু-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে জানলার কাচ ভিজে যাচ্ছে। জিপের অন্যান্য যাত্রীরা জানালা বন্ধ করে দিতে চাইলেও অরুন্ধতির এই বৃষ্টিটুকু উপভোগ করতে ভাল লাগছে। অনুপম জোর করে কাচ তুলে দিল ঠান্ডা
লাগার ভয়ে।
বেশিরভাগ সময়েই এখানে পাহাড়ের গায়ে মেঘ জমে থাকে, তাই রোদ্দুর
এখানে ভীষণ আকাঙ্ক্ষিত। কিছুদূর গিয়ে একটি সুন্দর ঝরনা পড়ল। জিপ তার কাছে গিয়ে থামল। অরুন্ধতি ছোটবেলায় ঝরনা দেখেছে, অনেকদিন
বাদে আবার দেখছে। এক নাগাড়ে ওপর থেকে তীব্র গতিতে জল পড়েই চলেছে। অরুন্ধতির খুব ইচ্ছে করছে ঝরনার খুব কাছে গিয়ে জলকে স্পর্শ
করার, অনুপমকে
তাই সে ডাকল তাকে ঝরনার কাছে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। ওখানে
বড় বড় পাথর আছে,
একজন হাত না ধরলে ওগুলো ডিঙিয়ে যাওয়া বেশ শক্ত।
অনুপমের
কোল্ড অ্যালার্জি আছে। ঠান্ডা লাগলেই বড্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই
ভয়ে সে জিপ থেকে
নামলই না। অরুন্ধতি অন্য যাত্রীদের সঙ্গে ঝরনার কাছে এগিয়ে যেতে লাগল।
"আরে ফ্যানি না?"
অরুন্ধতি
চমকে উঠল, কে
ডাকল ওকে? ওই
নামে তো একজনই ওকে ডাকত,
সে হল সুগত, তাও
কলেজে পড়বার সময়। চমকে তাকিয়ে দেখল, একজন মাঝবয়সি ভদ্রলোক তার দিকে তাকিয়ে হাসছে, বুঝতে দেরি হয় না অরুন্ধতির এই সেই সুগত।
সুগত বলে, "চলো ফ্যানি, তোমাকে ঝরনার একদম কাছে নিয়ে যাই।"
কী আশ্চর্য এতটুকু স্বভাব পরিবর্তন হয়নি সুগতর। একটু দূরেই জিপের ভিতর বসে আছে অনুপম, অরুন্ধতি
জড়তা বোধ করল।
"না না আমি একাই যেতে পারব"।
"তা তোমার স্বামী দেবতাটিই বা কোথায়?"
"ওই তো জিপে বসে আছে।"
"ঝরনার এত কাছে
এসে জিপে বসে থাকে? ষ্ট্রেঞ্জ! মানুষ পারে কী করে?
আমি তো বুঝতে পারছি না"।
“বা-রে, তোমার মতো ফিট বডি বুঝি সবার হয়? বয়স বেড়েছে ঠিকই কিন্তু তোমার শরীরের গড়নের কোন পরিবর্তন হয়নি।
"যাও যাও দেখে এস, এখুনি গাড়ি হর্ন দেবে"
"আর তোমারই বা স্ত্রী রত্নটি কোথায়?"
"বিয়েই
করিনি"
"সে কী? এখনও কুমার
আছ?"
"হ্যাঁ, চিরকুমারই
থাকব ঠিক করেছি।"
"কিন্তু কেন?
"কলেজ থেকে বেরিয়ে আসার পর এমনকি চাকরি-জীবনেও একটাও মনের মতো মেয়ে খুঁজে পাইনি" একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুগত। অরুন্ধতির বুকের
ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।
ওদিকে গাড়ি তাড়াতাড়ি যাবার জন্য হর্ন দিচ্ছে। ঝরনার এত কাছে এসেও জল-স্পর্শ করা হল না ওর। অনেক দিনের ইচ্ছেটা মনের ভিতর চাপা পড়ে রইল।
"আগামীকাল
কোথায় যাচ্ছ?” সুগত
অরুন্ধতিকে জিজ্ঞাসা করে।
"কালকে আমরা লাচুং যাব। সেখান থেকে কাটাও আর ইয়ংথাম।"
"আমাদের প্রোগ্রামও তাই ঠিক আছে, গেলে দেখা হবে।"
ওদিকে অনুপম উদ্বিগ্ন হয়ে জানালা দিয়ে মুখ বাড়াচ্ছে অরুন্ধতির জন্য। তাই ও দ্রুত পায়ে জিপে এসে উঠল।
অনুপম খানিকটা কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করল "কে কথা বলছিল তোমার সঙ্গে?"
"আমাদের সাথে
কলেজে পড়ত একটা ছেলে,
তার সাথে দেখা হল তাই গল্প করছিলাম।"
এখন গভীর
রাত্রি। হোটেলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন অনুপম। কিছুতেই ঘুম আসছে না অরুন্ধতির কেবলই
পুরোনো স্মৃতিগুলো মাথার মধ্যে কিলবিল করছে। ইংরেজি অনার্সের
ক্লাসে স্যার যখন কিট্সের কবিতা পড়তেন তখন সুগত একদৃষ্টিতে
অরুন্ধতির দিকে তাকিয়ে থাকত। বলত তোমার চোখদুটো খুব সুন্দর
অরুন্ধতি। তুমি ঠিক কিট্স প্রেমিকা ফ্যানি ব্রাউনের মতো দেখতে। আমি তোমাকে ফ্যানি বলেই ডাকব।
মনে পড়ছে সত্তর দশকের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা। এক ঝাঁক দামাল ছেলেমেয়ে। সবার মধ্যেই বাঁধভাঙার নেশা। সুগত সবাইকে নেতৃত্ব দিত। মাঝে মাঝেই অফ টাইমে দরজা বন্ধ করে ক্লাসের মধ্যে মিটিং চলত। মাঝে মাঝে গণসংগীত হত। সুগতর খুব দরাজ গলা ছিল। তার সাথে গলা মেলাত তপন, সুমন, কবিতা এমনকি অরুন্ধতি নিজেও।
নামলই না। অরুন্ধতি অন্য যাত্রীদের সঙ্গে ঝরনার কাছে এগিয়ে যেতে লাগল।
সুগত বলে, "চলো ফ্যানি, তোমাকে ঝরনার একদম কাছে নিয়ে যাই।"
কী আশ্চর্য এতটুকু স্বভাব পরিবর্তন হয়নি সুগতর। একটু দূরেই জিপের ভিতর বসে আছে অনুপম, অরুন্ধতি
জড়তা বোধ করল।
"না না আমি একাই যেতে পারব"।
"তা তোমার স্বামী দেবতাটিই বা কোথায়?"
“বা-রে, তোমার মতো ফিট বডি বুঝি সবার হয়? বয়স বেড়েছে ঠিকই কিন্তু তোমার শরীরের গড়নের কোন পরিবর্তন হয়নি।
"যাও যাও দেখে এস, এখুনি গাড়ি হর্ন দেবে"
"আর তোমারই বা স্ত্রী রত্নটি কোথায়?"
"কিন্তু কেন?
ওদিকে গাড়ি তাড়াতাড়ি যাবার জন্য হর্ন দিচ্ছে। ঝরনার এত কাছে এসেও জল-স্পর্শ করা হল না ওর। অনেক দিনের ইচ্ছেটা মনের ভিতর চাপা পড়ে রইল।
"কালকে আমরা লাচুং যাব। সেখান থেকে কাটাও আর ইয়ংথাম।"
"আমাদের প্রোগ্রামও তাই ঠিক আছে, গেলে দেখা হবে।"
ওদিকে অনুপম উদ্বিগ্ন হয়ে জানালা দিয়ে মুখ বাড়াচ্ছে অরুন্ধতির জন্য। তাই ও দ্রুত পায়ে জিপে এসে উঠল।
অনুপম খানিকটা কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করল "কে কথা বলছিল তোমার সঙ্গে?"
মনে পড়ছে সত্তর দশকের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা। এক ঝাঁক দামাল ছেলেমেয়ে। সবার মধ্যেই বাঁধভাঙার নেশা। সুগত সবাইকে নেতৃত্ব দিত। মাঝে মাঝেই অফ টাইমে দরজা বন্ধ করে ক্লাসের মধ্যে মিটিং চলত। মাঝে মাঝে গণসংগীত হত। সুগতর খুব দরাজ গলা ছিল। তার সাথে গলা মেলাত তপন, সুমন, কবিতা এমনকি অরুন্ধতি নিজেও।
ক্রমশ…
বেশ লাগল। শেষ বেলায় কমেন্ট।
ReplyDelete