প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

প্রথম ভালবাসা | অমল চ্যাটার্জী

বাতায়ন/ মাসিক / ছোটগল্প /২য় বর্ষ/২ ৮ তম সংখ্যা/ ২রা ফাল্গুন,   ১৪৩১ অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ছোটগল্প অমল চ্যাটার্জী   প্রথম ভালবাসা ...

Wednesday, February 12, 2025

ঝিঙাফুল সিরিজ— ৮ | প্রদীপ কুমার দে

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/রম্যরচনা/২য় বর্ষ/৩০তম সংখ্যা/১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১
রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার দে
 
বুধে পা, যেথা ইচ্ছা সেথা যা!
ঝিঙাফুল সিরিজ— ৮

"ভাবছি তাহলে কী আরো সুন্দরীরা এখানে আছেআরো একটা কথা লুকিয়ে বলি যা আমার মনের খুব ইচ্ছেকিন্তু ঝিঙাফুলকে বলা যায় নাতাহল ওই গ্রামের শেষেখুড়শ্বশুর যেখানে যেতসেই গ্রাম্য বেশ্যালয়ের হদিস পেতে চেয়েছিলাম।"


অনেক হাসি অনেক আনন্দ নিয়ে বুধবার আমাদের স্বামী-স্ত্রীর দুজনার স্বগৃহে ফেরার অনুমতি মিলল।
পাড়ার এক বুড়ি যেচে এসে নিদান দিল,
-বুধবার শুভ। সোম মঙ্গল ছেড়ে বুধে পা, যেথা খুশি সেথা যা!
আমি হাসছি। কী কেলোর কীর্তি। আশি বছরের বাসিবুড়ি দৌড়ে এসে আমার গালে চুমু খেয়ে নিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরল,
-কী সুন্দর জামাই! বয়স থাকলে আমি ফ্রি-তে দিতাম!


সবাই হেসে খুন। আমারও নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে। ঝিঙাফুল খিল্লি খাচ্ছে বটে কিন্ত ঠিক টাইমে এর ফায়দা তুলে নিজেকে সরিয়ে নেবে।
অতশত ভেবে লাভ নেই। তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া সেরে রেডি হতেই বুঝলাম গ্রামের এই পাড়া পুরোটাই আমাদের সাথে হেঁটে পাঁড়ি জমাবে, কারণ এই আনন্দ নাকি সবাই ভাগ করে নিতে চায় তারা।
 
প্রথম দলে কিশোর-কিশোরী, মধ্যে আমরা আর পিছনে মহিলাবৃন্দ। সবার হাতেই গাছের ভাঙা ডাল। মার মার! কাট কাট! ভেঁপুর আওয়াজে আর হাততালিতে কন্ঠ থেকে নিঃসৃত সংগীতে জামাই বিসর্জন শোভাযাত্রা গ্রাম্যমাঠ অতিক্রম করে ছোট লাইন পর্যন্ত এগিয়ে চলেছে।
 
আমি একাই লজ্জায় আর সবাই উপভোগে। শাশুড়ি, খুড়শাশুড়ি বয়স্কাদের গন্ডি থেমে গেছে, পিছন দিয়ে তাদের হাতনাড়া শুধু দেখতে পাচ্ছি। আমি অনেকজনের সাথেই গ্রামের কথা আলোচনা করছি আর হাঁটছি, এমন সময় ঝিঙাফুল একবার কানের কাছে এসে সাবধান করে গেল,
-বেশি বেশি মেয়েদের সাথে আলাপ করো না, ভেবো না গ্রামের মেয়েরা বোকা, সব রস নিঙড়ে খেয়ে নেবে কিন্তু!
 
ভাবুন কী অবস্থা আমার? স্বাধীনতা একেবারেই নেই, নিজের মতো কিছু করার নেই। ইচ্ছে ছিল গ্রামটা পুরো ঘুরে দেখব, কিন্তু উপায় নেই, সবাই ঘিরে রেখেছে। মহিলাদের সঙ্গ নেব উপায় নেই, এখানেও বউ আমায় লেপ্টে রেখেছে, পুরো উল্টো কে! ভাবছি তাহলে কী আরো সুন্দরীরা এখানে আছে? আরো একটা কথা লুকিয়ে বলি যা আমার মনের খুব ইচ্ছে, কিন্তু ঝিঙাফুলকে বলা যায় না, তাহল ওই গ্রামের শেষে, খুড়শ্বশুর যেখানে যেত, সেই গ্রাম্য বেশ্যালয়ের হদিস পেতে চেয়েছিলাম।
 
মনটা খারাপ, তবুও বউকে বলেছি, খুব খুশি। হেঁটে হেঁটে পা ফুলে গেল। সবাই আনন্দে স্টেশনে ঢুকিয়ে দিল। ফাজিল মেয়েরা কয়েকজন পাশে এসে গায়ে ঢলে পড়ল, তারাও ফেরার সময় পুরো গ্রামের উষ্ণতা আমার গায়ে ঢেলে টের পাওয়াতে চাইল। দুজন তো বারবার চোখ মারল,
-আমরাও কিন্তু কম নই, হয়তো বেশিই।
 
ঝিঙাফুল হাসছিল। বিদায়বেলায় অনেক নাটক অভিনীত হলো কিন্তু ছোট লাইনের ট্রেন সব কাটিয়ে অবলীলায় গড়িয়ে চলল তার লাইনে। ট্রেনে ভিড় ছিল না। ঝিঙাফুল গায়ের কাছে এসে বসল,
-খুব মজা না? ভাবছ এই মেয়েগুলি কত সুখের, তাই না?
-ছি! ছি! এসব কী ভাবছ?
-বাজে কথা আর মিথ্যা কথা একদম বলবে না। আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না! তবে শোনো তোমাদের শহুরে আদবকায়দার থেকে গ্রাম কিন্তু কোন অংশে কম যায় না। এখানকার মেয়েরাও অনেক এগিয়ে, খারাপ ভালয় মিলে আছে। গ্রামের উন্মুক্ত পরিবেশ গ্রামের ছেলেমেয়েদের অবৈধ মেলামেশার এক প্রশস্ত অঞ্চল। তোমরা শহুরে লোকেরা ভাবো গ্রামে গেলেই খাঁটি মহিলা পাবে, এটা সর্বৈব ভুল ধারণা। কপালে থাকলে সবই ঘরে বসেই পাবে সেখানে গ্রাম শহরের ফারাক আসবে না।
আমি অবাক! সত্যি আমি কী বোকা! ঝিঙাফুল এত জানে? আমার ভুল ভেঙে দিল। আমি হাসছি আমার কপালে হাত চালিয়ে। বউ বুঝে গেল, ও হাসছে। আমার খুব ইচ্ছে হল এখুনি ওকে জড়িয়ে একবার আদর করি। ও চোখ বুজে নিল।
 
সমাপ্ত

2 comments:

  1. অকুণ্ঠ ধন্যবাদ সম্পাদক মহাশয়কে আমার এই ধারাবাহিকটি প্রকাশ করে যাওয়ার জন্য। সকল বন্ধুদের সাথে থাকার জন্য অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

    ReplyDelete
  2. অকুণ্ঠ ধন্যবাদ সম্পাদক মহাশয়কে আমার এই ধারাবাহিকটি প্রকাশ করে যাওয়ার জন্য। সকল বন্ধুদের সাথে থাকার জন্য অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)