প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ডিভোর্স | স্বপ্ন ও বাস্তব

বাতায়ন/ডিভোর্স/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ , ১৪৩২ ডিভোর্স | সম্পাদকীয় "কম্প্রোমাইজ করে কোনক্রমে কাটত সুখের খোলসের আড়ালে অত...

Friday, May 16, 2025

শেষ থেকে শুরু [পর্ব— ৩০] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক উপন্যাস/৩য় বর্ষ/৯ম সংখ্যা/২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব— ৩০]

"জানিস বাবা নাকি শুধু মাকে খুঁজছিলকিন্তু মা একবার দেখতে যেতেও রাজি নন। ইতিহাস বোধহয় এমনিভাবে বদলে যায়যে মা বাবার মুখের দিকে চেয়ে কথা বলতে পারত নাসেই মা এখন বাবার ডাককে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে না বলে দিল।"


পূর্বানুবৃত্তি অতীতে রাহুলের আাসা যাওয়ার পথে, ফর্সা রঙের কোঁকড়াচুল, বড় বড় চোখের সুচরিতা হাঁ করে রাহুলের দিকে তাকিয়ে থাকত। রাহুল কোনদিন বোঝেনি, ওর চোখদুটো কী বলতে চায়! রাহুলের মনে তখন মনকলি। এদিকে সজলের মেইল, মনকলির অসুখটা বেড়ে গেছে, ডাক্তা টাইম দিয়েছে খুব বেশি হলে তিন মাস আর বেঁচে থাকতে পারে। তারপর…
 

সজলের চিঠিটা পড়ে রাহুলের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। সেই ছোট্ট থেকে দেখে আসছে। ঝলমলে ছটপটে মেয়েটা, সে এখন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে।


প্রবীর অনেক আশা করে গিয়েছিল ওদেশে নিয়ে গেলে মনকলি তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যাবে কিন্তু বিধির বিধান, ভাল হবার বদলে আও খারা হয়ে গেল। হয়তো এইটুকুই ওর পরমায়ু ছিল। এরচেয়ে মুম্বাইয়ে টাটা মেমোরিয়ালে নিয়ে গেলে হয়তো ভাল হত। জানিনা কিসে ভাল হত! কত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে থাকে তারা দিব্বি বেঁচে থাকে আর যাদের বেঁচে থাকার কথা তারা সাততাড়াতাড়ি পাত্তারি গোটায়। সুচিকে মনকলির কথা একদম বলা যাবে না, কান্নাকাটি করবে, ওরই সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, কাল রাতেই বলছিল,
-মনকলির কোন খবর পেযেছ? রাহুল বলেছিল,
-না পাইনি
সে আরও সুচরিতাকে বলেছিল,
-স্বার্থপরের মতোই বলছি সুচি তুমি এখন মনকলির কথাটা ভাবা বন্ধ কর, জানি তোমার খুব প্রিয় বন্ধু, তবুও এখন যে আসছে তার কথা তো ভাবতে হবে তাই না?
সুচরিতা বুঝেছিল, নিজের অজান্তেই নিজের পেটে হাত বুলিয়ে নিল, রাহুলের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
-তোমার-আমার ভালবাসা দিয়ে সৃষ্টি আমাদের আগত সন্তান।
রাহুল সুচির কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
-তাকে ভালভাবে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমাদের দুজনের।
প্রমোদবাবুর স্ত্রী মাঝে মাঝেই এটা-ওটা করে খাওয়ান, আবার এক শিশি কুলের আচার করে দিয়েছেন।
সজলের পরের মেইলে জানতে পারল, মনকলির রেডিয়েশনে আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে তাই আবার কেমো দিয়ে দেখবে ডাক্তার, কিন্তু মনকলির ভীষণ আপত্তি, কারণ তার আবার সব চুল উঠে যাবে।
রাহুল ভাবল, মানুষের জীবন সত্যি ভগবান নিয়ন্ত্রণ করেন, যে রূপ মাথা ভর্তি চুলের জন্য ওর এত গর্ব ছিল সেই  চুলও উঠে গেল, রাহুলের মনে হল লেখে থাক-না বাঁচার হলে এমনি বাঁচবে, বেচারা চাইছে ওর চুলগুল থাকুক কেন আর ধরে বেঁধে কেমো দেওয়া! কিন্তু ও লিখল না, শুধু লিখল ওর মনের ইচ্ছেটার প্রাধান্য পাওয়াই উচিৎ। প্রবীর বারবার বলছে তোমার আবার মাথা ভর্তি চুল হবে মনকলি এখন চিকিৎসাটা করাতে দাও, মনকলি বলেছিল,
-কেমো তো করিয়েছিলে, কী লাভ হল তাতে?
-তাতে তুমি বেশ কিছুদিন ভাল ছিলে, মনে আছে তোমার? বেশ কয়েক মাস, প্রায় একবছরের কাছাকাছি
-ওতে কী লাভ হবে বল?
-একবছরটা যে আমার কাছে কতটা, সে তুমি বুঝবে না—
পরের মেইলে সজল আবার লিখল,
-মনকলি শেষপর্যন্ত কেমো নিতে রাজি হয়েছে, একটা কেমো দেওয়া হয়েও গেছে, এখন আর কেমো দেওয়া হবে না, একটা কেমোতেই বেশ ইমপ্রুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে। জানিস লিসার সাথে আমার সম্পর্কটা ভেঙে গেছে, ভেবে দেখলাম বাঙালি মেয়েই বিয়ে করাটা ভাল তবে একটু পরে। লিসার সাথে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়াটা এত আচম্বিতে হল, যে এখুনি আর নতুন সম্পর্কে যেতে ইচ্ছে করছে না। তোর কী খবর বল? কেমন সংসার করছিস সুচরিতাকে নিয়ে? নতুন কোন সংবাদ আছে না কি?
রাহুল ইউটিউব দেখে সুচরিতার জন্য নতুন খাবার বানিয়ে দেয়। খারাপ হয়না, সুচরিতার বেশ ভালই লাগে। রাহুল উৎসুক চোখ নিয়ে তার সুচির দিকে চেয়ে থাকে কেমন হয়েছে শোনার জন্য? সুচু চোখ নাচিয়ে বলে,
-খুব বাহ্ দারুণ হয়েছে
তারপর হেসে রাহুলকে বলে,
-আমার করিস্মা আছে বল? উদাস বাউলকে পুরোপুরি সংসারী বানিয়ে দিলাম
-তা আর বলতে? রান্নার র জানতাম না এখন রান্না করে বউকে খাওয়াচ্ছি। সত্যি মানুষের জীবনটা কেমন বদলে যায়, আগে বাড়িতে রতেই ইচ্ছে করত না, ক্লাসের পর আমি আর প্রিন্সিপাল স্যার কত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করতাম, সঙ্গে থাকত শুধু চা আর বেকারির বিস্কুট। বাড়িতে ফিরে লাখিয়া হাতে থকথকে সেদ্ধ ডাল বেগুল ভাজা আর টলটলে মাছের ঝোল। এখন বাড়িতে আসার জন্য মন ছটপট করে, তুমি আর আমি একসাথে বাড়ি ফিরি। মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক বাইরে যেতাম, তুমি আবার সব নোটস লিখে আনতে, বিশ্বভারতীকে খুব মিস করি
-জানি আমিও করি, প্রমোদ স্যার আর একবছর আছে তারপর আবার আমরা শান্তিনিকেতন চলে যাব।
এরমধ্যে আবার সজল এল,
-আমি কলকাতা গিয়েই বিয়ে করব, তোরা আসতে পারবি তো?
রাহুল ভাবল সুচির এই অবস্থায় ট্রেনে ওঠা উচিৎ কি না সেটা ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করতে হবে, দেখতে দেখতে সুচরিতার সাতমাস হয়ে গেল, প্রমোদবাবুর স্ত্রী ওকে সাতমাসের ভাজা সাধ খাইয়ে দিলেন, সঙ্গে দিলেন সুন্দর একটা শাড়ি আর নিজের কানের কানপাশা।
সজলের মেইল এলে রাহুলের খুব ভাল লাগে, বহু পুরানো বন্ধুকে এতদিন পর ফিরে পাওয়ার আনন্দ। সম্প্রতি সজল লিখেছে,
-একা বাড়িতে শুধু কাজের লোকের ভরসায় বাবাকে রেখে আসা হয়েছিল, একা গুমরোতে গুমরতে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করেছে, ওর মা নাকি খুব নির্লিপ্তভাবে বড়ছেলেকে বলেছে যাও তুমি তোমার ছেলের কর্তব্য করে এস ওর দাদা জিজ্ঞেস করেছিল,
-তুমি যাবে না
-না আমি একেবারেই সব ছেড়ে এসেছি, অনেকদিনের অনেক যন্ত্রণা সব শেষ করে এসেছি।
-জানিস বাবা নাকি শুধু মাকে খুঁজছিল, কিন্তু মা একবার দেখতে যেতেও রাজি নন। ইতিহাস বোধহয় এমনিভাবে বদলে যায়, যে মা বাবার মুখের দিকে চেয়ে কথা বলতে পারত না, সেই মা এখন বাবার ডাককে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে না বলে দিল।
রাহুল উত্তর দিল,
-তুই এবার বিয়ের কথা ভাব, আমাদের পাড়ায় অনেক মিষ্টি মেয়ে ছিল, শুনেছি সব কটার বিয়ে হয়ে গেছে।
সজল বলল,
-হ্যাঁ বাবা একটু সমলালে এবার বিয়ে করব, বাবাকে বাড়ি আনা হয়েছে, দুবেলা দুটো আয়া আর সিস্টার রাখা হয়েছে, দাদাকে বলেছি টাকাপয়সার খরচের ভার আমার, তুই তো হাতেকলমে সব দায়িত্ব নিয়ে করছিস।
প্রমোদবাবুর স্ত্রী বললেন,
-এবার কলকাতা নিয়ে যাও বাড়ির লোকেরা তো একটু সাধ দেবে, নয়তো বাড়িতে জানাও এবার
রাহুল বলেছিল,
-কী হবে যদি সাধ না হয় আর আপনি তো দিলেন
-তুমি কি এখানেই ডেলিভারির ব্যবস্থা করছ?
-হ্যাঁ এখানে ডাঃ আদিক বেশ ভাল গায়নো উনিই প্রথম থেকে দেখে আসছেন
-তাহলে বাড়িতে একটা চিঠি দাও অন্তত সুসংবাদটা জানিয়ে
-হ্যাঁ তা দিয়ে দিচ্ছি।
রাহুল সজলকে প্রথম চিঠি দিল সুসংবাদ দিয়ে, আরও লিখল,
-তোর জন্যে এখানে ভারত ম্যট্রিমনিতে অ্যাড দেব?
-দাদা অলরেডি দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু কী বল তো? চোখে লাগে তো মনে লাগে না, মনে লাগে তো চোখে লাগে নাযাক তোর বেবী হলে তখন যাব, দেখি এরমধ্যে বাবার কী হয়। ভাল থাকিস।
রাহুল দাদাকে চিঠি লিখে জানাল যে সুচরিতা প্রেগন্যান্ট
চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে রাহুলদের বাড়ির সবাই হই হই করে উঠল, সঙ্গে সঙ্গে রাহুলকে চিঠি লিখল,
-তুই চিরকাল ছোটই রয়ে গেলি বড় আর হলি না, একদম শেষ মুহূর্তে জানাচ্ছিস, ওকে কলকাতায় নিয়ে আসতে হবে, আমি আর তোর বউদি খুব শিগগির আসছি, ওর তো এখন যত্নের দরকার, তুই কি অত পারিস না কিআমরা গিয়ে ওকে নিয়ে আসব, কলকাতার ডাক্তার দেখাব, একেবারে বাচ্চার অন্নপ্রাশন হয়ে গেলে তবে যাবি।
রাহুল সুচরিতাকে বলল,
-দেখেছ কাণ্ড এইজন্য চিঠি লিখতে চাইছিলাম না, তাছাড়া এত তাড়াতাড়ি কি ছুটি পাওয়া যায় না কি? তুমি দাদাকে গুছিয়ে লিখে দাও এখনি আসার দরকার নেই ন মাস পড়লে এলেই হবে।
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

সে কি তৃপ্ত— ?


Popular Top 10 (Last 7 days)