প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ডিভোর্স | স্বপ্ন ও বাস্তব

বাতায়ন/ডিভোর্স/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ , ১৪৩২ ডিভোর্স | সম্পাদকীয় "কম্প্রোমাইজ করে কোনক্রমে কাটত সুখের খোলসের আড়ালে অত...

Saturday, July 26, 2025

হেই সামালো | সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়

বাতায়ন/ডিভোর্স/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ডিভোর্স | ছোটগল্প
সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
 
হেই সামালো

"মহিলা নিশ্চই ওপার থেকে গঙ্গায় ঝাপ দিয়েছিল। মাউথ টু মাউথ রেসপিরেসনে কোনো কাজ না হওয়ায় মহিলাকে উল্টো করে শুইয়ে পিঠের দু দিকে চাপ দিতেই মুখ থেকে গল গল করে জল বেরিয়ে আসে।"


নদীর এপাশে এই সময় কেউ আসে না। এখন রাত সাড়ে দশটা। বাস্তবের রাতে বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করে না। গত তিন মাস আগে ঠিক এই সময়েই স্বেতা চলে গিয়েছিল। দু-চারটে কথা কাটাকাটি কোন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হয় না। তার জন্য গলায় দড়ি দিতে হবে? তারপর পুলিশের হাঙ্গামা কম হয়নি। নদীর ঠিক ওপাশেই নীল মাধবের ঘাট। ওখানেই স্বেতাকে দাহ করা হয়। বাস্তব জন্মান্তরবাদ মানে না। তবুও রাতে ঘুম না এলে এখানে এসে বসে।

 
দিন পনেরো হাজত বাসের পর বাড়ি ফিরে আসে। ইদানীং ছাত্র পড়িয়ে সংসার চালাত। স্বেতার ওভাবে মৃত্যুর পর ছাত্র সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। তবে টাকার দরকারও সেরকম নেই। একটাই তো পেট। ঠিকই চলে যাবে। এই টাকার কারণেই তো স্বেতা আত্মহত্যা করেছে। একটা দামী সাউথ ইন্ডিয়ান শাড়ি চেয়েছিল। বাস্তব সোজাসুজি বলে দেয়,
-অত টাকা আমি রোজগার করি না। কোথা থেকে দেব?
সেটাই শুরু। একথা সেকথায় বেলা গড়িয়ে যায়। বাস্তবের তো স্কুল মাস্টারের চাকরিটা কোর্টের রায়ে চলে গেছে। তবুও ধর্মতলার অবস্থান মঞ্চে রোজ গিয়ে বসতে হয়। ডাল-ভাত যাহোক কিছু মুখে দিয়ে যেত। কিন্তু আজ স্বেতা কিছুই রান্না করেনি। বাধ্য হয়েই অভুক্ত অবস্থায় বাস্তবকে বেরিয়ে যেতে হয়। সেদিন রাতে ট্রেনের গোলমাল ছিল। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে দশটা। বাড়ি ফিরেই বাস্তব দেখে ফ্যানের সঙ্গে দোপাট্টা জড়িয়ে...
স্বেতার বাবা-মা ওকে দায়ী করে পুলিশে কমপ্লেন করেছিল। সে কারণেই হাজত বাস। তবে ওর বন্ধুরা ওর হয়ে লড়ে গিয়েছিল। ওরাই উকিল ঠিক করে। তার ফলে পনেরো দিন বাদে ও জামিন পায়।
আজ ভরা কোটাল। জলে থইথই করছে নদী। পাড়ে কী একটা ভেসে এসেছে! দেখে তো মহিলার শরীর বলে মনে হয়। কোমর জলে ডুবে প্রথমে শাড়ির আঁচল তারপর হাত ধরে টানতে টানতে ঘাটে নিয়ে আসে। নাকের নিচে হাত দিয়ে দেখে শ্বাস পড়ছে। তবে খুবই আস্তে আস্তে। একে কীভাবে বাঁচানো যায়? একটা লোকের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। কোনোক্রমে মহিলাকে ডাঙায় তুলে মাউথ টু মাউথ রেসপিরেসন দেবার চেষ্টা করে। তখনই ওর খেয়াল হয়। এ মহিলা তো ওদের মতোই। একজন সরকারি স্কুলের টিচার। আদালতের নির্দেশে ওরও চাকরি গেছে। নাম, রেখা বারুই। নীলমাধবের ঘাটের কাছে থাকে। ধর্মতলার অবস্থান মঞ্চে গান গাইত। "কারার ঐ লৌহকপাট" আরও কত গান। ওদের সময়টা কেটে যেত। তবে বাস্তবের সবচেয়ে ভাল লাগত- "আর দেবনা আর দেবনা রক্তে বোনা ধান" গানটা। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত।
মহিলা নিশ্চই ওপার থেকে গঙ্গায় ঝাপ দিয়েছিল। মাউথ টু মাউথ রেসপিরেসনে কোনো কাজ না হওয়ায় মহিলাকে উল্টো করে শুইয়ে পিঠের দু দিকে চাপ দিতেই মুখ থেকে গল গল করে জল বেরিয়ে আসে। বাস্তব উত্তেজনায় গেয়ে ঠে- আর দেবনা আর দেবনা রক্তে বোনা ধান... কান পেতে বাস্তব শোনে রেখা বারুই মিন মিন করে বলছে- "মোদের প্রাণ গো।"
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

সে কি তৃপ্ত— ?


Popular Top 10 (Last 7 days)