বাতায়ন/ডিভোর্স/কবিতাগুচ্ছ/৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ডিভোর্স | কবিতাগুচ্ছ | অমিতাভ দাশগুপ্ত | আমার নীরবতা আমার ভাষা
কবি-পরিচিতিসহ
কবিতাগুচ্ছ
অমিতাভ দাশগুপ্ত
আমার
নীরবতা আমার ভাষা
আর ওই বিশাল পাথুরে অবরোধ-ই
যে আড়াল করে রেখেছিল
হার্মাদের মত এক খ্যাপা নদী,
এতকাল
তা আমি জানতেও পারিনি।
সেই অর্গলহীন সজল
সারাদিন, সারারাত আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে।
ওই ভেসে যাচ্ছে আমার অঙ্গদ, শিরস্ত্রাণ,
আবরণহীন ভাসতে ভাসতে
আমি চড়তে পারছি
গাঢ় দীঘিকার চেয়ে সজল তোমার দু চোখের ভাষা,
আমি শুনতে পাচ্ছি
সমুদ্রের নাভি থেকে উঠে আসা
মারমেইডস-এর গলায় তোমার গান,
দিশেহারা, ওলোট-পালোট ঢেউয়ে
ধুয়ে যাচ্ছে আমার গার্হস্থ্য-সন্ন্যাস,
জোয়ারে জোয়ারে
এ তোমাকে কোথায় নিয়ে চলেছে
আমার নীরবতা আমার ভাষা।
সংক্ষিপ্ত
কবি-পরিচিতি
অমিতাভ দাশগুপ্ত
কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত
(২৫.১১.১৯৩৫ - ৩০.১১.২০০৭)
তিনি জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত
বাংলার ফরিদপুরে।
ফরিদপুরের ঈশান স্কুলে তাঁর
শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯৪৪ সালে কবিকে কলকাতার "টাউন স্কুলে” ভর্তি করে দেওয়া
হয়। ১৯৫৩ সালে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন এবং ১৯৫৪ সালে সিটি কলেজে
ভর্তি হন। এই সময়ে তিনি, কলকাতায়, ক্রিকেটার হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। তিনি বরানগর
স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে কলকাতার ফার্স্ট ডিভিশন সিএবি লীগ ট্যুর্নামেন্টে ন্যাটা
(বাঁহাতি) স্পিনার হিসেবে খেলেছেন।
১৯৫৬ সালে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন
বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এই সময়ে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পাটির সদস্যতা
গ্রহণ করেন এবং কারাবরণ করেন। আজীবন তিনি এই পাটিরই (C.P.I.) সদস্য থেকে গিযেছিলেন।
"দেশ" পত্রিকায় তাঁর কবিতা সর্বপ্রথম ছাপা
হয়। তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর শেষ উপন্যাস "হলুদ নদী সবুজ বন"
লিখতে সাহায্য করেছিলেন। এই সমযে মানিকবাবুর শারীরিক অবস্থা এমন ছিল যে তিনি নিজে
লিখতে পারছিলেন না।
১৯৫৭ সালে তিনি কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন এবং অনুরাধা দেবীর সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন।
এরপর তিনি জলপাইগুড়িতে গিয়ে আনন্দচন্দ্র কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং সেখানকার
চা-শ্রমিকদের বামপন্থী আন্দোলনে যোগদান করতে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৬৮ সালে আবার তাঁকে
কারাবরণ করতে হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি কলকাতার সেন্ট পল কলেজে অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হন
এবং কমিউনিস্ট পাটির মুখপত্র "কালান্তর" পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীতে যোগ
দিয়ে কাজ করা শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি "পরিচয়" পত্রিকার সম্পাদক
হিসেবে নিযুক্ত হন।
তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের
মধ্যে রয়েছে "একশো প্রেমের কবিতা",
"মৃত্যুর
অধিক খেলা" (১৯৮২), "নীল সরস্বতী", "জলে লেখা কবিতার নাম", "সমুদ্র থেকে আকাশ" (১৯৫৭), "ক্ষমা?
কাকে
ক্ষমা?", "প্রেম পদাবলী", "মৃত শিশুদের জন্য টফি” (১৯৬৪), “এসো রাত্রি এসো হোম", "অমিতাভ দাশগুপ্তের নির্বাচিত কবিতা” (১৯৭৪), "আগুনের আলপনা" (১৯৮৫), “সাম্প্রতিক কবিতা", "মধ্য রাত ছুঁতে আর সাত মাইল” (১৯৬৭), “স্বনির্বাচিত কবিতা", "কাছে দূরে কলকাতা", "কলকাতার মুখ",
"অমিতাভ
দাশগুপ্তর শ্রেষ্ঠ কবিতা” (১৯৮৬),
"ছড়িয়ে
ছিটিয়ে সাতকাহন", "এসো স্পর্শ করো", "ভালো আছো,
কলকাতা?", "বারুদ বালিকা” (১৯৮৮), "আমাকে সম্পূর্ণ করে নাও", "কমলালেবুর অশ্রু এসো" (১৯৯০), বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে "মুখোমুখি দুই
কবি", "ছিন্নপত্র নয় ছেঁড়া
পাতা", "এত যে পাতাল খুঁজছি”
প্রভৃতি।
তাঁর অনুদিত কাব্যগ্রন্থের
মধ্যে রয়েছে "মাওসেতুং-এর কবিতা",
উইলিয়াম
শেক্সপিয়রের Venus and Adonis গদ্যের রূপান্তর
"ভেনাস ও অ্যাডোনিস"। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনুবাদ করেছেন স্পেন-এর কবি Federico García Lorca-র কবিতা "লোরকার কবিতা"।
"কবিতিবাসর" ও "শিলীন্ধ্র" পত্রিকা
তাঁর উপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত করে। কবি নিজে সম্পাদনা করেছেন "পরিচয়", "কবিতার পুরুষ", "সরণি" (?) প্রভৃতি পত্রিকা। আজকাল পত্রিকার তিনি একজন নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন।
সংগৃহীত; সৌজন্যে জয়িতা বসাক
ডিভোর্স | কবিতাগুচ্ছ | অমিতাভ দাশগুপ্ত | আমার নীরবতা আমার ভাষা
কবি-পরিচিতিসহ
কবিতাগুচ্ছ
অমিতাভ দাশগুপ্ত
"দেশ" পত্রিকায় তাঁর কবিতা সর্বপ্রথম ছাপা হয়। তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর শেষ উপন্যাস "হলুদ নদী সবুজ বন" লিখতে সাহায্য করেছিলেন। এই সমযে মানিকবাবুর শারীরিক অবস্থা এমন ছিল যে তিনি নিজে লিখতে পারছিলেন না।"
আমার হাতে কোনও শাবল ছিল না,
এক দুপুরের বৃষ্টিতে কীভাবে
ধুয়ে গেল।
হার্মাদের মত এক খ্যাপা নদী,
তা আমি জানতেও পারিনি।
সারাদিন, সারারাত আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে।
ওই ভেসে যাচ্ছে আমার অঙ্গদ, শিরস্ত্রাণ,
আমি চড়তে পারছি
গাঢ় দীঘিকার চেয়ে সজল তোমার দু চোখের ভাষা,
সমুদ্রের নাভি থেকে উঠে আসা
মারমেইডস-এর গলায় তোমার গান,
ধুয়ে যাচ্ছে আমার গার্হস্থ্য-সন্ন্যাস,
এ তোমাকে কোথায় নিয়ে চলেছে
আমার নীরবতা আমার ভাষা।
অমিতাভ দাশগুপ্ত
(২৫.১১.১৯৩৫ - ৩০.১১.২০০৭)
No comments:
Post a Comment