প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ডিভোর্স | স্বপ্ন ও বাস্তব

বাতায়ন/ডিভোর্স/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ , ১৪৩২ ডিভোর্স | সম্পাদকীয় "কম্প্রোমাইজ করে কোনক্রমে কাটত সুখের খোলসের আড়ালে অত...

Saturday, July 26, 2025

বৃষ্টি ভেজা ভোর | সঙ্ঘমিত্রা দাস

বাতায়ন/ডিভোর্স/ভ্রমণ/৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ডিভোর্স | ভ্রমণ
সঙ্ঘমিত্রা দাস
 
বৃষ্টি ভেজা ভোর

"পা ধুয়ে যাচ্ছে ঝরনার মতো বয়ে যাওয়া জলে। খুব ভাল লাগছে আমার। পাহাড়ি হাওয়ায় চোখ বুজে আসছে। সজীব সতেজ ঠান্ডা হাওয়া। দু ধারে সবুজ যেন আরো গাঢ় রং নিয়েছে। দূরে যতদূরে চোখ যাচ্ছে লম্বা পাইনের গাছগুলো প্রাণভরে বৃষ্টিতে ভিজছে।"


জুন মাসের মাঝামাঝি সময়টা, হঠাৎ অফিসের কাজে কার্শিয়াং যাবার প্রয়োজন হয়ে পড়ল কর্তামশাইয়ের। আমিও সঙ্গে যাবার বায়না ধরলাম। দার্জিলিং আমার ভীষণ প্রিয় শৈল শহরের মধ্যে একটা। এর আগে দীর্ঘ কয়েকবছর শিলিগুড়ি পোষ্টিং থাকায় প্রায়ই ছুটি কাটাতে চলে যেতাম। পাহাড়ি রাস্তায় কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার যে অনুভূতি সেটা আবার একবার ফিরে পাবার ইচ্ছে জেগে উঠল। 


বাতাসিয়া লুপ

যদিও এখন ওখানে ভরা বর্ষা, বাইরে বেরোনো মুশকিল কিন্তু হোটেলের জানলায় বসে দূরে পাহাড়ের গায়ে জলের ধারাভেজা ওই পাহাড়ের মাথা উঁচু করে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা, মনকে ব্যাকুল করে তুলল। প্রথমে রাজি না হলেও    শেষপর্যন্ত আমাকে সঙ্গে নিলেন উনি। ঠিক হলো তিন দিনের কাজের শেষে আরো দুটো দিন হাতে নিয়ে দার্জিলিং ঘুরে আসব।
 
মনে মনে কল্পনা করলাম দার্জিলিং ম্যালে "গ্লেনারিসে" এক কাপ চা আর গরম ক্রসেন্ট নিয়ে বসে থাকব দীর্ঘক্ষণ। তাকিয়ে থাকব মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ধূসর পাহাড় কখন উঁকি দেবে সেই আশায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে যাবে আড়ালে। আমাকে প্রতীক্ষায় দেখে মুচকি হাসবে।
 
বুধ থেকে শুক্র কাজ সেরে বিকেল বিকেল রওনা দিলাম দার্জিলিং। পথে টুং স্টেশনের কাছে "মার্গারেট ডেকে" বসলাম চা আর জিন্জার কেক নিয়ে।


চা বাগান
চা বাগানের মাঝে এই সুন্দর ছোট অভিজাত চা বাড়িটি আলাদাই এক মাধুর্য্য বহন করে চলেছে দীর্ঘ বছর ধরে। এখানকার চায়ের স্বাদ ও গন্ধ মোহিত করে রাখে। সামনে ভ্যালিতে থাকে থাকে পাহাড়ে সবুজ চা গাছ। কিছুটা সময় কেটে গেল এভাবেই। আবার রওনা দিলাম। দার্জিলিং পৌঁছলাম তখন সন্ধে পেরিয়ে রাত। হোটেল ঠিক করাই ছিল। ম্যাল পেরিয়ে আরো কিছুটা উপরে উঠে রাজভবনের পাশে হোটেল ডলফিন। ওর চারশো দুই নম্বর ঘরটি আমার প্রিয়। আগে যতবার এসেছি ওখানেই উঠেছি। জানলা খুললেই পাইন গাছের সারি। ভ্যালি ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ধূসর পাহাড় আর সব ছাড়িয়ে দূরে ধবল কেশ কাঞ্চনজঙ্ঘা। যদিও এই মরসুমে তার দেখা পাওয়া যাবে না। তবু ওই যে মেঘেদের সাথে পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা, বসে দেখতে দেখতে সময় কেটে যাবে।
 
শনিবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। হোটেলের ছেলেটি বলল বেলা বাড়লে নাকি মেঘ কেটে যাবে। কর্তামশাই চা খেতে খেতে কাল রাতের গাড়িকেই ফোন করে দশটায় আসতে বলে দিলেন। তারপর বেরোবো। আমার মন তখন পাহাড়ের ডাকে আকুল। উনি আর এক দফা চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে নিতে একাই বেরিয়ে পড়লাম কুয়াশা ঢাকা শহরের পথে। এইসময় বের হওয়া ঠিক নয়, যখনতখন বর্ষা নামবে। কিন্তু বন্ধ ঘরে থাকতে তো মন চাইছে না। বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ি হাওয়া প্রাণভরে নেব বলে শুরু করলাম হাঁটা ম্যালের পথে।

রাজভবন থেকে দার্জিলিং ম্যালের পথ
কর্শিয়াং থেকে একটা আকাশী নীল রঙের ট্রান্সপারেন্ট ছাতা কিনেছি, সেই সঙ্গী এখন। একটু এগোতে শুরু হল ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। আকাশ যেন রুমঝুম ঝুমঝুম গান গাইছে। হাঁটতে হাঁটতে সেই গানের সাথে আমিও মৃদুস্বরে গলা মেলালাম। মাথার ওপর নীল ট্রান্সপারেন্ট ছাতাটা মেলে ধরেছি, উপরে আকাশ দেখা যাচ্ছে। ছাতাটা ওই আকাশের সাথে মিশে যাচ্ছে। মুখে জলের ছিটে লাগছে, পা ধুয়ে যাচ্ছে ঝরনার মতো বয়ে যাওয়া জলে। খুব ভাল লাগছে আমার। পাহাড়ি হাওয়ায় চোখ বুজে আসছে। সজীব সতেজ ঠান্ডা হাওয়া। দু ধারে সবুজ যেন আরো গাঢ় রং নিয়েছে। দূরে যতদূরে চোখ যাচ্ছে লম্বা পাইনের গাছগুলো প্রাণভরে বৃষ্টিতে ভিজছে। বিবর্ণ দেওয়াল নানা রঙের ফুলে সাজানো। সবুজ গাছে গাছে ফুটে আছে সাদা, নীল, বেগুনী, লাল, কমলা কত জংলা ফুল।
 
ম্যালে ঢোকার মুখে রাস্তা যেখানে খাদের কিনারে মিশেছে সেখানে একটা বড় গাছ। চারপাশে বাঁধানো বেদি। এসে দাঁড়ালাম তার পাশেই। বেদিতে সিঁদুরের টিকা। একটা ছোট পাথরের সিংহাসনে নাম না জানা এক দেবী মুর্তি। সামনের রেকাবিতে সকালে কেউ এসে জল বাতাসা দিয়ে গেছে। ধূপ জ্বলছিল বোধহয়! খুব মিষ্টি একটা গন্ধ চারদিকে। পাহাড়ের গা বেয়ে, গাছের ফাঁক গলে বৃষ্টির জল পড়ছে। সুরের সে কী অপূর্ব মূর্ছনা। সৃষ্টি করেছে এক ঝংকার।
 
শান্ত হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেক্ষণ। মনে এক অপূর্ব প্রশান্তি। মেঘেরা আমাকে ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে দূরান্তে। ধীরে ধীরে আকাশে সোনালী রোদ্দুর পাইন গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল। মুহূর্তে অজস্র ফুটে থাকা বনফুল খিলখিলিয়ে হেসে উঠল যেন। 

পথের পাশে জঙ্গলে জংলা গাছ ফুল
সে এক রূপকথার দেশের গল্প। পায়ে পায়ে ফেরবার পথ ধরলাম। জলখাবার খেয়ে আবার একপ্রস্থ ঘোরাঘুরি। দশটায় গাড়ি আসবে যে।
 
 


No comments:

Post a Comment

সে কি তৃপ্ত— ?


Popular Top 10 (Last 7 days)