প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ডিভোর্স | স্বপ্ন ও বাস্তব

বাতায়ন/ডিভোর্স/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ , ১৪৩২ ডিভোর্স | সম্পাদকীয় "কম্প্রোমাইজ করে কোনক্রমে কাটত সুখের খোলসের আড়ালে অত...

Saturday, July 26, 2025

ওগো শুনছো | বন্দনা সেনগুপ্ত

বাতায়ন/ডিভোর্স/হলদে খাম/৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ডিভোর্স | হলদে খাম
বন্দনা সেনগুপ্ত
 
ওগো শুনছো

"এই মেল শভিনিষ্টিক সমাজে যাতে আমার অপমান হয়সেই জন্যএকটা মেয়ে যখন তার বরকে রিজেক্ট করে বাতিল করে দেয়তখন সমাজে তার কী অবস্থা হয়তার কি কোন ধারণা আছে তোমার?"



ওগো শুনছো!
 

ভাল আছ তো? তোমার মনে আছে তো আমাকে? নাকি জীবন থেকে বাদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মন থেকেও মুছে ফেলেছ?
কত দশক হয়ে গেল “ওগো শুনছো” বলে ডাকিনি। “কোথায় গেলে গো” বলে হাঁক দিইনি! অথচ, বেঁচে আছি। কী আশ্চর্য, তাই না!


আজ আমার আটান্ন বছর পূর্ণ হল। আমি আজ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের চাকরি থেকে রিটায়ার করলাম। জেনে খুশি হলে কি? সব তোমারই অবদান। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
আমার সঙ্গে সহকর্মী ও অধস্তনরা এসেছিল। বসার ঘর ভরা ফুল আর উপহার। রেস্তোরাঁ থেকে আনানো খাবার দিয়ে কাজের মেয়েটি ভালই আপ্যায়ন করেছে। কেউ খুঁত ধরতে পারবে না। কিন্তু, যদি তুমি থাকতে!
তুমি থাকবে কী করে?
আমি বেসরকারি চাকুরে জেনেই তোমার বাবা আমার সঙ্গে তোমার বিয়ে দিয়েছিলেন। তুমিও জানতে। আমি বিয়ের আগেই জানিয়েছিলাম যে আমি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। আমি যেখানে ভাল অফার পাব, আমি সেখানেই কাজ করব। তুমি এসব জেনেই বিয়েতে রাজি হয়েছিলে। বলেছিলে সব জায়গায় সব অবস্থায় আমার সঙ্গে থাকবে। কিন্তু, কাজে করে দেখাতে পারলে না। আমি ট্রান্সফার নিলে বা চাকরি বদল করলে তুমি সেটা মানাতে পারতে না বা মানাতে চাইতে না। অন্য অফিস। অন্য রাজ্য। অন্য ভাষা। অন্য কালচার। তোমার অসহায়, অসহ্য লাগত। চিৎকার চেঁচামেচি। চোখের জল।
তার সঙ্গে আমারও একটু দোষ ছিল। বেসরকারি চাকরির স্থিরতার অভাবের কথা তো আমিও জানতাম। যে কোনও দিন এক মাসের মাইনে হাতে ধরিয়ে ছুটি করে দিতে পারে। তাই, আমি খরচের ব্যাপারে একটু হলেও সতর্ক থাকতাম। আর, তোমার মনে হত আমি কৃপণ। আমি তোমাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিচ্ছি না।
শেষে যখন আমি পুণাতে কাজ নিলাম, তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে! বেসরকারি চাকরিতে ছুটি পাওয়া কত সমস্যা, তবু আমি ছুটে ছুটে তোমার বাপের বাড়ি গিয়েছি তোমাকে ফিরিয়ে আনার জন্য! যাব নাই বা কেন? তুমি তো শুধু আমার প্রয়োজন ছিলে না, নিজ গুণে তুমি আমার প্রিয়জন হয়ে উঠেছিলে। তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার কষ্ট হয়। হ্যাঁ, এখনও কষ্ট হয়।
শেষে তুমি নিজে একটা ছোট চাকরি জোগাড় করে মিউচুয়াল ডিভোর্সের কাগজ সই করে পাঠিয়ে দিলে। কোথায় পাঠালে? না, আমার অফিসে। কেন গো? এই মেল শভিনিষ্টিক সমাজে যাতে আমার অপমান হয়, সেই জন্য? একটা মেয়ে যখন তার বরকে রিজেক্ট করে বাতিল করে দেয়, তখন সমাজে তার কী অবস্থা হয়, তার কি কোন ধারণা আছে তোমার? মিউচুয়াল হলেও তো আইনি ব্যবস্থা করতে হয়! আর, সেটা তো একদিনে হয় না। বার বার ছুটি নিতে হত। সবাই জেনে গেছিল। কেউ করুণা করত তো কেউ ব্যঙ্গ। সামনে পিছনে হাসাহাসি আর নিতে পারছিলাম না। কাজে মন দিতে পারতাম না। গাফিলতি ও দেরির জন্য আমার চাকরিও গেল। শুধুই তোমার জন্য আমি সেদিন আমার চাকরি, সম্মান, মানসিক স্থিরতা, সব হারিয়েছিলাম।
আস্তে আস্তে মানসিক চাপের অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিলাম। বাবা, বিশেষ করে মা না থাকলে কী হত কে জানে! ডাক্তার ওষুধের সাথে সাথে মায়ের ভোকাল টনিকও আমার আরোগ্যের জন্য কাজ করছিল। অবশ্য, তোমাকেও ধন্যবাদ। তুমি মন স্থির করে ডিভোর্স দিতে সময় নাওনি। তাই তো চেষ্টা করে করে বয়স পেরিয়ে যাওয়ার আগেই এই চাকরিটা পেলাম।
এখানে আসার পর নিশ্চিন্ত স্থায়িত্বের আশ্বাসে মা-বাবার হাসিমুখ দেখে রাতে ঘুমাতে পারতাম না। ওদের দেখে বুঝতে পারতাম যে তুমি কী চাইছিলে। আর, কষ্টে বুক ফেটে যেত! আগে চেষ্টা করলেই হয়তো তোমাকে আটকানো যেত! আসলে কী জানো, সরকারি চাকরি পেতে পারি এই আত্মবিশ্বাসই ছিল না। জীবনে স্থায়িত্ব থাকলে কী হয়, তার আভাসও ছিল না।
আজ এখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। সুখে দুঃখে বিপদে আপদে হাঁক দিলেই পাশে এসে দাঁড়াবে। এই যে রিটায়ার করেছি, কাল থেকেই কিন্তু সিনিয়র বন্ধুদের সঙ্গে তাদের স্টার্টআপে যোগ দিচ্ছি, বসে থাকা নেই। অন্য বন্ধু আছে, যাঁদের সঙ্গে বেড়াতে যাই। স্বাস্থ্যচর্চার জন্য আলাদা আরও গ্রুপ আছে। এই সবই সম্ভব হয়েছে এক জায়গায় থিতু হয়ে আছি বলে। এসব কিছুই আমি তখন বুঝতাম না গো!
নতুন করে আবার যোগাযোগ করে তোমাকে বিব্রত করতে চাই না বলে চিঠিটা তোমাকে না পাঠিয়ে একটা পত্রিকায় পাঠাচ্ছি। যদি চোখে পড়ে, আমাকে চিনতে পারবে তো?
 
ইতি
এখনও তোমারই গুণমুগ্ধ…
 
 
 
 

No comments:

Post a Comment

সে কি তৃপ্ত— ?


Popular Top 10 (Last 7 days)