বাতায়ন/মাসিক/ধারাবাহিক
গল্প/৩য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/১৩ই ভাদ্র,
১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা
চ্যাটার্জি
প্রতারক
[১ম পর্ব]
"এই প্রথম রূপার স্বামীর কথা ভাল লাগল, তবুও একটা অজানা আনন্দ মনকে শিহরিত করছিল। অনেকদিন পর সৌরভের সাথে দেখা হবে কাল যদি ও ফ্রি থাকে তবে একটা সিনেমাও দেখব আর বাইরেও খেয়ে আসব।"
আনমনে বসে রূপা ভাবে যৌবনের সেই আনন্দ আর খুশিতে ভরা দিনগুলির কথা কলেজ পালিয়ে সৌরভের সাথে সিনেমা, সিনেমা হলের আধো অন্ধকারে ওর স্পর্শ এখনও যেন গায়ে লেগে আছে।
কলেজ শেষ হতে না হতেই বাবা-মা
কী যে এক উদাসীন প্রফেসরের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দিল লোকটার না আছে কোনও উত্তাপ না
কোনও উচ্ছলতা খালি গোমরা মুখে বসে বই পড়ে
অনেক রাত অবধি, নয়তো কলেজের খাতা দেখে- যখন
শুতে আসে তখন রূপা ঘুমের ভান করে পরে থাকে। লেকটার শারীরিক উন্মাদনা যেন কেমন
রসহীন লাগে।
রূপার মনটা খারাপ থাকে।
এমনিতে শ্বশুর-শাশুড়ি ভালই, রূপাকে কোনও ব্যপারে
কোনও জোর করে না। রূপা ইচ্ছে হলে করে,
না হলে
করে না, শুয়ে শুয়েই কাটিয়ে দেয়।
একদিন শ্বশুরমশাই রূপাকে বলেন,
-বউমা তুমি ইচ্ছে করলে আবার পড়াশোনা শুরু করতে পার।
রূপা শুনে তো খুব খুশি সে বলল, সে যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পড়তে চায় ওখানে তার অনেক বন্ধুবান্ধবরা পড়ে। শ্বশুরমশাই বলেন,
-ঠিক আছে তাই হবে এখন তো ফর্ম
দেওয়া শুরু হয়েছে তুমি বরং কালই চলে যাও।
যাদবপুরে ভর্তি হবার অন্যতম
কারণ হল ওখানে সৌরভ পড়ে তার এখন দ্বিতীয় বর্ষ চলছে। রূপা তক্ষুনি সৌরভকে ফোন
দিয়ে বলে,
-আমি আবার পড়ব, শ্বশুরমশাই বলেছেন পড়া শুরু করতে কালই যাচ্ছি।
সৌরভ যেন কেমন নিরুত্তাপ গলায়
বলল,
-হ্যাঁ এস দেখ চান্স পাও কিনা?
রূপার সম্মানে লাগল এই কথায়, সে বলল,
-আমি তো খারাপ স্টুডেন্ট নই, চান্স না
পাবার কী আছে?
সৌরভ বলল,
-এখানকার
স্টুডেন্টরা খুবই মেধাবী।
-তুমি তো পড়ছ? হ্যাঁ পড়ছি নিজের ট্যালেন্টে পড়ছি। অবশ্য তোমার
অসুবিধা হবে না প্রফেসর বর, গাইড লাইন ভালই পাবে।
-ভুল করছ
প্রথমত ওর সাবজেক্ট আর আমার সাবজেক্ট সম্পূর্ণ বিপরীত তাছাড়া ও আমার ব্যাপারে খুবই
উদাসীন।
সেদিন রাতে রূপার স্বামী উদয়ন
খুবই উচ্ছসিত হয়ে ঘরে ঢুকে বলল,
-তোমার এত পড়ার
ইচ্ছে ছিল আমায় বলনি কেন? যাক তুমি কাল যাবে
জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমিও চাইছিলাম তুমি আর একটু পড়াশোনা কর।
যদি বল আমিও তোমার সাথে কাল যেতে পারি।
-না না আমি
একাই যেতে পারব। আমি কি পারব?
-কেন পারবে না! পারব না এটা কখনওই ভাববে না সবসময় মনে করবে আমি
পারব। পারতে আমায় হবেই
এই মনের জোরটাই তোমায় সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই প্রথম রূপার স্বামীর কথা
ভাল লাগল, তবুও একটা অজানা আনন্দ মনকে শিহরিত করছিল। অনেকদিন
পর সৌরভের সাথে দেখা হবে কাল যদি ও ফ্রি থাকে তবে একটা সিনেমাও দেখব আর বাইরেও
খেয়ে আসব।
এইসব ভেবে খুব আনন্দের সাথে
পরদিন গেল ফর্ম তুলতে একেবারে ফিলাপ করে জমাও দিয়ে দিল। সেদিন ক্লাস শেষে সৌরভ এল। বহুদিন পর
দুজনে খুব আনন্দ করল। সিনেমা হলে সৌরভের স্পর্শে সে
রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল।
ক্রমশ
No comments:
Post a Comment