প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

নাম নয় মানই বিবেচ্য

মুনিয়াকে বিজিত | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী

  বাতায়ন/মাসিক/ যুগলবন্দি /৩য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/১৩ই ভাদ্র , ১৪৩২ যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী অজয় দেবনাথ   মুনিয়াকে বিজিত ...

Thursday, August 7, 2025

শ্রাবণের দিনগুলি [৪র্থ পর্ব] | ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য

বাতায়ন/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১তম সংখ্যা/১ ভাদ্র, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য
 
শ্রাবণের দিনগুলি
[৪র্থ পর্ব]

"নিধুকে ভাল বেসেছিল সুখী। কাজ-পাগল নিধুর সময় হয়নি সেইদিন সুখীর ভালবাসাকে আপন করে নেবার। তারপর বিয়ে হয়েছে সুখীর। সময় লাগেনি সে ঘর ভাঙতে।"


পূর্বানুবৃত্তি যে প্রেম তাকে পুড়িয়ে দগ্ধ করে সেই প্রেমের পরশে দহন জুড়ানোর সুতীব্র ইচ্ছেয় উদগ্রীব হয়ে ওঠে মন। মুখ ফেরায় নিধু। তারপর…
 

নিধু দাঁড়িয়ে থাকে চুপটি করে। সুখীর সামনে মুখে তার কথার অনটন নেমে আসে হঠাৎ করে। সুখীকে বলবার মতো কিছু শব্দ খুঁজে পেতে কাঙালের মতো মনের দুয়ারে মাথা কুঁড়ে মরে। অপলক হয়ে তাকিয়ে থাকে নিধু সুখীর দিকে। সিঁথির

 সিঁদুর আর কপালে লাল টিপ সুখীকে আজ কত অচেনা করে তুলেছে। শ্রাবণের সেই দুরন্ত লাস্যময়ী সুখী যেন এই মেয়েটি নয়। দুই চোখের দৃষ্টিতে হাজার কথা আজ আর নেই, মৌন বিলাসী যেন। সুপ্রাচীন বটবৃক্ষের গাম্ভীর্য আঁকড়ে ধরেছে সুখীকে। এই কমাসে সুখীর বয়স যেন কয়েক বছর এগিয়ে গেছে। বাকহীন নিধু। সদ্য অতীত হওয়া দিনগুলি কেমন যেন ফিকে হয়ে সামনে থেকে সরে যেতে চায়। ভাবতে বাধ্য করে শ্রাবণের দিনগুলি যেন অলীক কল্পনা। সময়ের মুহূর্তগুলি নীরবে ছুঁয়ে যায় নিধুকে। চরণ মাঝি বলে,
-গিন্নি মায়ের বাতের ব্যথা, তাই নিধু এসেছিল।
নিধুকে যে জোর করে নিয়ে এসেছে সে কথা শোনায় চরণ।
-ভালই করেছ, নয়তো আর দেখতেই পেতাম না নিধুবাবুকে।
বলে সুখী।
-বেলা গড়িয়েছে সুখী। নিধুকে ফিরতে হবে আবার। তুই খাবার ব্যবস্থা কর। আমি ডুব দিয়ে আসি।
গামছা কাঁধে বাড়ির বাইরে যায় চরণ। মাটির দুয়ারে বসে থাকে নিধু। রান্না চালায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে সুখী। পরিস্থিতির আকস্মিকতায় জর্জরিত নিধু। ফাগুনের ডাকে সাড়া দিয়ে পলাশ ফুটেছে বনে-বনে, তাকিয়ে থাকে নিধু সেই দিকে।
-নিধুবাবু!
সুখী ডাকে।
-বল
কেমন একটা আড়ষ্টতার মধ্যেও কথাটা বলতে পারল নিধু।
-মামা হয়তো সবই বলেছে তোমাকে।
বলে সুখী।
-হ্যাঁ, শুনেছি।
-কিছু কথা আমি বলি নিধুবাবু। শোনো...
সুখী বলে চলে। নিধুর দৃষ্টি উঠানে আঁকিবুঁকি কেটে চলে। নিধুকে ভাল বেসেছিল সুখী। কাজ-পাগল নিধুর সময় হয়নি সেইদিন সুখীর ভালবাসাকে আপন করে নেবার। তারপর বিয়ে হয়েছে সুখীর। সময় লাগেনি সে ঘর ভাঙতে। লোকজন দুয়ো দেয় এখন। নীরব থাকে সুখী। ইদানীং চরণ মাঝি সুখীকে বলে,
-নিধু তোকে ভালবাসে সুখী। তাকে বিয়ে করে সুখে থাক।
কথাটা সুখীও ভেবেছে বহুবার।
-নিধুবাবুর মতো ছেলে লাখে একটা মেলে। তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে হলে...
সুখীর মুখে এমন কথা শুনে কেঁপে ওঠে নিধু। মুহুর্তের জন্য বধির হয়ে গেছে নিধু। সুখীকে নিজের করে পাবার পুরানো ইচ্ছেটা আকাশের বিদ্যুৎ বিকাশের মতো ভাস্বর হয়ে ওঠে মনে। সুখীর মুখে এমন কথা যে শুনবে ভাবেনি নিধু। সত্যি জীবন বড় বিচিত্র! মনে-মনে ভীষ খুশি হয় নিধু। মনের দু কূল ছাপিয়ে আনন্দের বান আসে। কিছু একটা বলতে চেয়ে সুখীর দিকে তাকায় নিধু। সুখী বলে,
-কিন্তু তা আজ আর হয় না নিধুবাবু।
এমন অপ্রত্যাশিত আঘাতে ভেঙে খানখান হয়ে যায় নিধুর গড়া কাচের স্বর্গ। এতক্ষণ সুখীর কথা বোঝার ভুলে ঢেউয়ের উপর মিনার গড়েছিল নিধু!
-কেন হয় না সুখী?
প্রশ্নটা নিধুর কন্ঠেই ঝুলে থাকে। বাইরে আসে না আর। আবার শুরু করে সুখী,
-আজ আমার এই অবস্থা দেখে...
সুখীকে এমন অবস্থায় দেখে নিধুর মনে করুণার শীতল বাতাস বয়ে চলে। এই ভাব চিরদিনের নয় সে কথা জানে সুখী। একদিন আবেগের স্রোত বন্ধ হয়ে আসবে। ভালবাসা মলিন হবে। জীবনের ওঠা-পড়ায় ব্যস্ত হবে জীবন। সংসারের নানান ঘাতপ্রতিঘাত বাধ্য করবে নিধুকে বাস্তবের মাটিতে পা ফেলতে।
-সেদিন কী হবে নিধুবাবু? পারবে মেনে নিতে তোমার সিঁদুর দেওয়ার আগে আমার সিঁথি লাল হয়েছিল অন্যের দেওয়া সিঁদুরে! সেদিন তুমি বদলে যাবে নিধুবাবু, যাবেই। মানুষের মন তো আর লোহার তৈরি নয়!
ভিতরে-ভিতরে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে নিধু। সুখীর কথাগুলি তার হৃদয়কে ফালাফালা করে দিয়েছে এই মুহূর্তে।
-কষ্ট পেও-না নিধুবাবু। যা সত্যি তাই বললাম। আমিও ভেবেছিলাম এই বছর অঘ্রাণ মাসে তোমার গ্রামে যাব। আমার মনের কথা মন খুলে শোনাব তোমায়। সে অঘ্রাণ আর এল কই নিধুবাবু!
দু চোখে জল নিয়ে রান্নাচালার দিকে চলে যায় সুখী। নির্বাক, নিথর নিধু বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে থাকে। দেহে যেন শক্তি আর অবশিষ্ট নেই। বেলা গড়িয়েছে। এইবার রওনা দেবে নিধু। চরণ মাঝি বলে,
-আবার আসবে নিধু। বাবুকে বল।
সামনে পা ফেলে নিধু। পিছন থেকে সুখী বলে,
-সাবধানে এস নিধুবাবু। গিন্নিমাকে বলবে ভালই আছি।
মেঠো পথে এগিয়ে চলে নিধু। অবসন্ন মন। দিগন্ত রেখায় গা এলিয়ে দিয়েছে দিবাকর। লালচে আলোয় আগুন লেগেছে পলাশের বনে। অপরাহ্নের অপার্থিব ফাগুন শোভায় শ্রাবণের সুখীকে মনে পড়ে নিধুর। খুব মনে পড়ে।
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)