শারদ | ছোটগল্প
অঞ্জনা
মজুমদার
শিউলি
ফুল আর দুর্গা
"ফুলের গন্ধে আর এত ফুল দেখে ওদের মন ভাল হয়ে গেল। আর ওকি? কোঁচড় ভরা ফুল নিয়ে গাছে হেলান দিয়ে ছোট্ট দুর্গা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। ওরা নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এত সহজে ওরা দুর্গাকে খুঁজে পেল।"
মননের দেশের বাড়ির
দুর্গাপুজোয় প্রতি বছর বাবা-মায়ের সাথে মনন আর বোন তিন্নি যাবেই। ওখানে একচালা মাতৃমূর্তি
দেখে মনে হয় মা দুর্গার পরিবার একসাথে আছে। যেমন গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে মননের মনে
হয় কাকা-কাম্মা, ভাই সতু আর বোন মিনি
দাদু-ঠাম্মা সবাই মিলে একই পরিবার।
চার ভাইবোন পুজোর কদিন কেউ
কারও সঙ্গ ছাড়ে না। পুজোয় গ্রামে নবমীর রাতে যাত্রা হয়। আর স্কুলের মাঠে বেশ
বড় মেলা বসে। বাচ্চাদের খেলনা,
কাচের
চুড়ি, খেলনা বন্দুক ছাড়াও রংবেরংয়ের
পোশাক, মাটির তৈরি টব, পোড়ামাটির ঘোড়া কী নেই সেই মেলায়? সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয় এবার মেলায় এসেছে পুতুল নাচের তাঁবু। বায়না করে মিনি আর তিন্নি
দুদিন পুতুল নাচের শো দেখেছে। অগত্যা মনন আর সতুকেও যেতে হয়েছে। আজ একটা ঘটনা ঘটেছে। গ্রামে হইচই পড়ে গেছে।
একটা ছোট্ট মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বছর চারেক বয়স। নাম দুর্গা। সবাই দুর্গা
দুর্গা বলে ডাকছে, তিন্নি বলল,
-দাদামনি, ঠাকুরদালানের দুর্গা মা কি ডাকলে সাড়া দেয়?
মনন বলল,
-দুর পাগলি এই দুর্গা একটা ছোট্ট মেয়ের নাম।
-তাই বলো। ওর
বাড়ি তো এখানেই। ও কি রাস্তা চেনে না?
মননের কাছে এর কোনও উত্তর
নেই। দুর্গার দাদা রমিত শুকন মুখে ওদের কাছে দাঁড়িয়ে। মনন বলল,
-বড়রা খুঁজুক ওদের মতো। চলো রমিত আমরাও খুজতে শুরু করি। তুমি
কি জানো দুর্গা একা একা কোথায় যেতে পারে?
রমিত বলল,
-একা একা তো কোথাও যায় না। তবে কদিন ধরে খুব পুতুল নাচের
পুতুল দেখার জন্য বায়না করছিল।
চলো তবে আমরা ওই পুতুল নাচের
আসরের দিকে যাই।
মাঠের ধারে একটা শিউলি গাছের
নীচে যেখানে পুতুল নাচের আসর বসে সেখানে তাঁবুটি যেন শিউলি ফুলে ঢেকে গেছে। ঠাম্মা
বলেন, ‘শিউলি ফুল মাটি থেকে তুলেও
পুজোর কাজে লাগানো যায়।’ ফুলের গন্ধে আর এত ফুল দেখে ওদের মন ভাল হয়ে গেল। আর ওকি? কোঁচড় ভরা ফুল নিয়ে গাছে হেলান দিয়ে ছোট্ট দুর্গা
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। ওরা নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এত সহজে ওরা
দুর্গাকে খুঁজে পেল। রমিত দৌড়ে বোনের কাছে গিয়ে কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে চিৎকার
করে দুর্গা দুর্গা বলে ডাকতে লাগল। দুর্গা চমকে ঘুম ভেঙে উঠে পড়ল। ওর মুখের কাছে
চারজনের উদ্বিগ্ন মুখ দেখে কেঁদে ফেলল,
-কী হয়েছে দাদা? তোমরা এত জোরে জোরে ডাকছ কেন?
ওরা কোনও উত্তর দেবার আগেই
পেছনে বাবা-কাকাদের ভিড় জমে গেছে। পুতুল নাচের অধিকারী মশাইও আছেন। দুর্গাকে সুস্থ
দেখে সবাই নিশ্চিন্ত। দুর্গা দৌড়ে বাবার কোলে উঠে গলা জড়িয়ে ধরল। বড় পিসিমা কপালে
হাত ঠেকিয়ে বললেন,
-শিউলি তলায় দুর্গা মায়ের দেখা পেলাম মায়ের কৃপায়।
ঠাকুর দালানের ঢাকিরা কিছু না
জেনেই জোর তালে ঢাক বাজাতে শুরু করলেন। শারদ আনন্দে গ্রামের সবাই মেতে উঠলেন।
সমাপ্ত

No comments:
Post a Comment