প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

নৃপেন চক্রবর্তী সংখ্যা | আবেগ ও বিবেক

বাতায়ন/নৃপেন চক্রবর্তী সংখ্যা/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২৮ সংখ্যা/১৪ই কার্ত্তিক , ১৪৩২ নৃপেন চক্রবর্তী সংখ্যা | সম্পাদকীয়   আবেগ ও বিবেক "যা-...

Saturday, November 1, 2025

রহস্যের গভীরে: ডাউহিলের পথে | মণিজিঞ্জির সান্যাল

বাতায়ন/নৃপেন চক্রবর্তী সংখ্যা/ভ্রমণ/৩য় বর্ষ/২৮ সংখ্যা/১ই কার্ত্তিক, ১৪৩২
নৃপেন চক্রবর্তী সংখ্যা | ভ্রমণ
মণিজিঞ্জির সান্যাল
 
রহস্যের গভীরে: ডাউহিলের পথে

"শীতের মিষ্টি রোদ্দুরের মধ্যে এক অসাধারণ অনুভূতিকনকনে ঠান্ডা কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য যেন অন্য রূপে প্রকাশ পায়। আবার বর্ষাকালে পাহাড়ের রূপ যেন আরও আলাদা। পাহাড় যেন অবিশ্রান্ত জলধারায় সিক্ত হয়ে ওঠে।"

 
চলো যাওয়া যাক কার্শিয়াং-এর পথে...
 
অবহেলার পাহাড়ে সুন্দর হাসি, শহরের লোকের ভিড়ে যা দেখা যায় না। অল্পতেই সেখানকার মানুষের জীবন ভরপুর, জীবন দিয়ে জীবনের দাম। বিশাল উপত্যকায় ছোট ছোট ঘরবাড়ি, ছোট ছোট ক্ষেতখামার। নিচে পাহাড়ি নদী, খাদের শেষাশেষি দিনের অফুরান রোদ।
 
সত্যিই পাহাড়ের মানুষের অনেক কিছুর অভাব কিন্তু মুখের হাসি সব অভাবকে মুছে দিয়েছে। আসলে মানুষের সুখ-দুঃখ সবটাই তো নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের এই মন। মাথার ওপর খোলা আকাশ, এই বিশাল পাহাড়, পাহাড়ি নদীর মিষ্টি ছন্দ মনকে করে তুলেছে এক অনন্য অসাধারণ। পৃথিবীর সবটুকু সারল্য এই পাহাড়ি মানুষগুলোর হৃদয়ে এবং মুখের হাসিতে।
 
মনটা যেহেতু ভ্রম পিপাসু, তাই মাঝে মাঝেই মন চলে যায় সেই সূদুরের পথে। প্রকৃতি যেন দুহাত তুলে ডাকে, আর সে কারণেই রাতের গহিন ভালবাসার প্রেমে পড়তে হয় মঝে মাঝেই, তাই তো সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি মেঘ পাহাড়ের গ্রামে, যেখানে পাহাড় আর মেঘ-রোদ্দুরের খেলা চলে অবিরাম।

 
পাহাড়ে বেড়াতে গেলে শীত আর বর্ষাকে বেছে নিলেই ভাল হয়। শীতের মিষ্টি রোদ্দুরের মধ্যে এক অসাধারণ অনুভূতি, কনকনে ঠান্ডা কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য যেন অন্য রূপে প্রকাশ পায়। আবার বর্ষাকালে পাহাড়ের রূপ যেন আরও আলাদা। পাহাড় যেন অবিশ্রান্ত জলধারায় সিক্ত হয়ে ওঠে। পাহাড়ি ঝর্ণা তখন আপনবেগে বিপুল কলরবে বইতে থাকে। নদী তখন দিশেহারা, এত উচ্ছ্বাস-এত প্রাণাবেগ, সে যেন নৃত্যরতা তরুণী। তাই তো পাহাড়ি নদী, পাহাড়ি রূপকে প্রত্যক্ষ করতে শীত বা বর্ষাকেই বেছে নিতে হয়। সেক্ষেত্রে খুব কাছেই যে পাহাড়, যার সৌন্দর্য পৃথিবী বিখ্যাত, সেখানে অনায়াসে চলে যাওয়াই যায়। তাই তো চলে এলাম সেই অসাধারণ সৌন্দর্যের অধিকারী কার্শিয়াং'এ।
 
শহরের হই-হট্টগোল থেকে একশো ভাগ দূষণহীন, স্বাস্থ্যকর স্থান বলেই এখানে আসা আর চিরকালীন ভালবাসার কাঞ্চনজঙ্ঘা, তাই তো আবারও বেছে নিয়েছি কার্শিয়াং। আসলে কার্শিয়াং-এর একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। রাস্তার বাঁকের একই ভিউপয়েন্ট থেকে ঝরঝরে মেঘমুক্ত আকাশে এক দিকে মাউন্ট এভারেস্ট আর অন্য দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখলে সারা জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসাবে বুকের মধ্যে জমে থাকে।

 
ডাউহিলের শান্ত নিবিঢ় পরিবেশ মনটাকে কেমন করে দেয়। ডাউহিলের আকাশ, বাতাস, মাটি, জল, পাহাড় সবই যেন এক স্বর্গীয় সুন্দর। এখানেই ঘন সবুজ ধুপি গাছের আশ্চর্য কোলাজ। স্থানীয় অধিবাসীরা বলেন ধুপি গাছের আধিক্যই মেঘমহলে নাকি গোপন খবর পাঠায়। তাই তো, ডাউহিলে মেঘবালিকাদের অত ঘন ঘন অভিসারে আসা। সঙ্গে উপরি পাওনা প্রচুর লাল-গোলাপি রডোডেনড্রন। হাতছানি দিয়ে ডেকে নেয় প্রতি মুহূর্তে।
 
ফরেস্ট রেস্টহাউস পায়ে পায়ে পেরিয়ে, বাঁক ঘুরলেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ফরেস্ট স্কুল। স্কুল বিভিন্ন রঙের ফুলে ভরা, পরিপাটি করে সাজানো বাগান। সেখানে সুন্দর সাজানো, গোছানো কাঠের দোতলা বাড়িতে ফরেস্ট মিউজিয়ম। ১৯০৭ সালের ইংরেজ সাহেবদের হাতে সাজানো এই মিউজিয়ম। কত যে গাছের ফসিল ও কাঠের নমুনা এখানে। আছে বেশ কিছু লুপ্তপ্রায় প্রাণী ও পাখির দেহ, দেখে অবাক হতে হয়।

 
একটু এগিয়েই পাহাড়ের ঢালকে কাজে লাগিয়ে এক প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা তৈরি হয়েছে। পোশাকি নাম ‘স্যাটেলাইট জু’। এই অদ্ভুত নাম দেওয়ার কারণ হয়তো উপগ্রহের মতো, পাহাড় থেকে বিরল পশুপাখিদের পর্যবেক্ষণ করা যায় বলে। নতুন করে ফিজ্যান্ট ব্রিডিং সেন্টার তৈরি হচ্ছে পাহাড়ের ঢালে ঢালে। ডিয়ার পার্কও আছে। হিমালয়ের নানারকমের বনচর ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে-সেখানে।
 
কিছু দূরে একই রাস্তার উলটো দিকে একটা পাহাড় জুড়ে তৈরি হচ্ছে ‘আরবোরেটম’। কত বিচিত্র ধরনের গাছ রডোডেনড্রন, ম্যাপল, ওক, ম্যাগনোলিয়া, সিলভার ফার, ট্রি-ফার্ন-এর দু’তিন রকম প্রজাতি। অর্কিডের জন্য সম্পূর্ণ একটা আলাদা অঞ্চলই রয়েছে। সেখানে নিপুণ ভাবে, যত্ন করে, সহায়ক দূষণমুক্ত আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে অর্কিডগুলোকে রক্ষা করা হচ্ছে। ডাউহিলের গর্ব করার মতো বিষয় হল ওষধি গাছ। গাড়োয়াল, কুমায়ুন ছাড়া এত রকমের ওষধি হিমালয়ের আর কোত্থাও মেলে না। তাই বুঝি এখানে ডাক্তার বা ডাক্তারখানার দেখা নেই।
 
ফুলে প্রজাপতিতে বিভোর হয়ে উঠে আসা যায় পাহাড়ের চূড়োয়। সেখানে একটা গোল টিনের টোং-এর ঘর। ক’টা চেয়ারও পাতা, ক্লান্তি কাটানোর জন্য। আসলে এটি-ই  ভিউ পয়েন্ট। হাত বাড়ালেই  কাঞ্চনজঙ্ঘা ঠায় দাঁড়িয়ে দেখা দেবে বলে। আসলে ডাউহিল হল চিরযৌবন ও তারুণ্যের প্রতীক।

 
কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আষ্টেপৃষ্ঠে উপভোগ করে সাবধানে নামতে হবে  কারণ, চড়াই ভেঙে উঠতে কষ্ট হলেও উৎরাইয়ের সময় ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। রাস্তার এক পাশে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত রেঞ্জার্স ট্রেনিং কলেজ। এখানে সারা ভারত থেকে কর্মীরা আসেন বন ও বন সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে।
 
এই শান্ত এবং পাহাড়ি স্টেশন একটি বিখ্যাত শিক্ষা কেন্দ্র যেখানে ডাউহিল গার্লস স্কুল এবং ভিক্টোরিয়া বয়েজ স্কুলের মতো বিখ্যাত স্কুল রয়েছে ব্রিটিশদের সময় থেকে। ডাউহিলের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসের পাশে ভিক্টোরিয়া স্কুল। লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার অ্যাশলে ইডেন ১৮৭৯ সালে মাত্র ষোলো জন শিক্ষার্থী নিয়ে ডাউহিলের সবুজ সমুদ্রে এই স্কুলটি স্থাপন করেন। ফুলের বাগানের মধ্যে স্কুলবাড়ির স্থাপত্য মুহূর্তে ইউরোপে পৌঁছে দেয়।
 
ডাউহিলের ফরেস্ট স্কুল, রেঞ্জার্স ট্রেনিং কলেজ সবকিছু দেখলেও, জঙ্গলে ট্রেক যারা করেছেন তারাই জানেন এর আসল মজা আর যদি সঙ্গে থাকে মনের মতো ওষধিগাছ-বিশেষজ্ঞ কোনো গাইড তাহলে তো সোজা পৌঁছে যাওয়া যায় এক মনোরম গ্রামে। ডাউহিল থেকে একটা গিরিসংকট ধরে এগিয়ে গেলেই ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম। সেখান থেকে উঁচু-নিচু পথ ধরে গ্রামের পথ ছাড়িয়ে ঢুকে যাওয়া যায় ঘন জঙ্গলে। মেঘ-কুয়াশায় জড়াজড়ি আবহাওয়ায় অনুভব করা যায় সব দৃশ্য ভ্যানিশ। পথ বলে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। পাহাড়ি ছেলে যদি সঙ্গে নেওয়া যায়তবে সে অক্লান্ত কৌরবের মতো সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবেই যাবে। এটা-ওটা, গাছ-পাতা-ফুল সে সুন্দর ভাবে চিনিয়ে দেবে। ওষধিগাছের স্থানীয় ও বোটানিক্যাল নামও বলে দেবে অনায়াসে। গাছের কোন অংশ, কোন ঋতুতে ওষুধ হিসেবে সংগ্রহ করা হয় সবকিছু সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করে দেবে।
 
মেঘের অন্ধকারে হঠাৎ আবিষ্কার করা যায় পথ হারানোর গল্প। বনের মধ্যে পথ হারায়নি এমন কখনো হয় নাকি?
খানিক গোলকধাঁধার মতো একই জায়গায় ছোটবেলার কানামাছি খেলার মতো ঘুরপাক খেতে খেতে সহজেই সেই শৈশবে পৌঁছে যাওয়ার মজা অনুভব করা যায়। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে কয়েকটি প্রাণী যেন পৃথিবীর কোনও আদিম রহস্য উন্মোচনের আশায় ঘরদোর ছেড়ে পথ হারাবার জন্যেই যেন পথে নেমেছে। আর এক প্রান্তে ততক্ষণে একটানা ঝিঁঝি পোকার কোন্দল। হঠাৎ একটা কাঁটা ঝোপের মধ্যে জীবন যেন বন্দি। সঙ্গে যদি থাকে কোনো পাহাড়ি গাইড, প্রাণপণে সে নিশ্চয়ই কোমরে গোঁজা কুকরি দিয়ে ডাল কাটতেই উদ্যত হবে রাস্তার সন্ধানে এবং অবশ্যই পথ ফিরে পেয়ে এক বুক নিশ্বাস নেওয়া যাবে।
 
দার্জিলিং জেলার আড়ম্বর পূর্ণ পাহাড়ি শহর ও স্টেশন কার্শিয়াং, দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়া বেশিরভাগ সময় আনন্দদায়ক এবং পাহাড়ি স্টেশন তার সুদৃশ্য সবুজ পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং তাজা চা এস্টেটগুলির জন্য পরিচিত। কার্শিয়াং শহরের নাম লেপচা শব্দ "খারসং" থেকে এসেছে যার অর্থ জমি যেখানে সাদা অর্কিড প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। এখানে বড় হয়ে আসা অর্কিডগুলি মুক্তোর মতো সাদা এবং "কুর্সন রুপ" নামে পরিচিত। যদি কেউ দুঃসাহসী কাজ ভালবেসে থাকেন বা প্রকৃতিপ্রেমিক হয়ে থাকেন তবে কার্শিয়াং-এ তাঁকে আসতেই হবে, কারণ কার্শিয়াং-এ এই সবকিছু আছে যা সহজেই মনকে কোথায় যেন ভাসিয়ে নিয়ে চলে।
 
দর্শনীয় স্থান :
কার্শিয়াং-এর আশেপাশে অনেক পর্যটন স্থান রয়েছেউল্লেখযোগ্য স্থানগুলি হল:
 
১) ঈগল ক্র্যাগ ভিউ পয়েন্ট:
এই জায়গাটি টয় ট্রেন স্টেশন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে, এখানে কার্শিয়াং রাস্তা, ক্যাফেটোরিয়া এবং ফুলবাগান আছে। দূর থেকে এটি খাড়া মনে হয়। এইখান থেকে মাউন্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং নেপালের পাহাড়, শিলিগুড়ির সমভূমি এবং এই পাহাড়ের নীচে যে আভাস আছে সেখান থেকে নদী এবং চা বাগান দেখা যায়।
 
২ সালামান্দার লেক:
এই সুন্দর প্রাকৃতিক জলাধারটি প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কার্শিয়াং শহর থেকে এবং এখানে সালামান্দারের দুর্বল এবং বিপন্ন প্রজাতিগুলিকে আশ্রয় দেয়, জলের সরীসৃপ হ্রদের সবুজ রং বজায় রাখে।
 
৩ ডাউনহিল এলাকা:
এই এলাকায় একটি হরিণ পার্ক, বন জাদুঘর এবং একটি ইকো পার্ক রয়েছে।
 
মাকিবাড়ি চা এস্টেট:
দার্জিলিং-এর আশেপাশের বিখ্যাত এস্টেটগুলির মধ্যে এটি টেকসই এবং ইকো বান্ধব চা বাগানের জন্য পরিচিত। এই চায়ের রপ্তানি অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশেও হয়ে থাকে। এখানে পর্যটকদের জন্য চা পর্যটন কেন্দ্র একটি দুর্দান্ত বিকল্প।
 
কার্শিয়ং-এর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সূর্যাস্ত  পৃথিবী বিখ্যাত। পাহাড়ের কোলের এই এলাকায় রয়েছে মনমাতানো প্রকৃতির রূপ। আশপাশের শান্ত সুস্থিরতার মাঝেই গোটা এলাকাকে কুয়াশার মতো করেই আগলে রাখে মায়াবী রহস্যময়তা। বলা হয় গা ছমছমে কিছু ঘটনা এই জায়গাকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। অর্কিডের প্রাচুর্যের জন্য এই জায়গাকে বলা হয়, 'ল্যান্ড অব অর্কিডস'
 
কার্শিয়াং-এর মায়াবী প্রকৃতির মধ্যেই অবস্থান ডাউহিলের। দার্জিলিং-এর কাছের এই হিল স্টেশনে বেশ কিছু ঘটনা শুনলে অবাক হতে হয়।
ডাউহিল থেকে ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত রাস্তাকে ডেথ রোড বা মৃত্যু সড়ক বলা হয়। এই রাস্তায় প্রায়ই চলাচল করেন বহু কাঠুরে। জঙ্গলের ধারের এই রাস্তাতেই অনেকে বহু ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন তারা।
এখানে অনেক রহস্যময় সত্যি ঘটনা শোনা যায়। ডাউহিলের এই ডেথ রোড দিয়ে চলার সময়ে অনেক কাঠুরিই দেখতে পেয়েছেন এক মুণ্ডবিহীন বাচ্চা ছেলেকে, যে রাস্তার মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে হঠাৎই অদৃশ্য হয়ে যায়। শুধু এক-আধবার নয়, একাধিকবার দেখা গিয়েছে এই দৃশ্য। সেখানে নাকি দেখা যায় এক মহিলাকেও। অনেকেই কার্শিয়াং-এর এই জঙ্গলের রাস্তার ধারে দেখেছেন এক ধূসরকেশী বৃদ্ধাকে। কিন্তু পরক্ষণেই সেই বৃদ্ধা কোথায় গিয়েছেন তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। কখনো গাড়ি চালাতে চালাতে গাড়ির চালক দেখেছেন মাঝ রাস্তায় একজন সাদা পোশাকের মহিলা হাত উঁচু করে গাড়ি থামাতে বলছেন। তারপর হঠাৎ করে উধাও।
 
আরো এমন কাহিনি নিয়ে রহস্যময় কার্শিয়াংএ, যেমন  হন্টেড স্কুল। ডাউহিলের জঙ্গলের কাছেই রয়েছে একটি বয়েজ স্কুল। সেখানে প্রায়ই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার পায়ের শব্দ শোনা যায়। শীতের রাতে চিৎকারও শুনতে পাওয়া গিয়েছে মাঝে-সাঝে। গা ছমছমে এমন পরিবেশের সাক্ষী হতে হলে যেতেই হবে কার্শিয়াং যারা এখন অবধি যাননি।
 
এবারে আসি একটু অন্য কথায়, এর ভৌগোলিক অবস্থানটি একটু জেনে নেওয়া যাক। কার্শিয়াং দার্জিলিং জেলার একটি শৈল শহর এবং মহকুমা। এটি ১৪৫৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। কার্শিয়াং দার্জিলিং থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে। এখানকার আবহাওয়া সারা বছরই আরামদায়ক, শীতকালের ঠাণ্ডা দার্জিলিঙের মতো তীব্র নয়। কার্শিয়াং-এর স্থানীয় নাম খার্সাং, লেপচা ভাষায় এই কথার অর্থ ‘সাদা অর্কিডের দেশ’। কার্শিয়াং শিলিগুড়ি থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি শিলিগুড়ির সঙ্গে সড়ক পথ ও হিমালয়ান রেলওয়ে দ্বারা যুক্ত। নিকটতম বিমানবন্দর বাগডোগরা। নিকটতম রেল স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি যা  কার্শিয়াং থেকে ৫৩ কিলোমিটার দূরে। শহরের অর্থনীতির ভিত্তি স্কুল ও পর্যটন।
 
যারা শীত এবং বর্ষাকালে পাহাড়ে আসতে অনিচ্ছুক, তাদের জন্যে কার্শিয়াং বেড়ানোর সেরা সময় মার্চ থেকে মে মাস এবং আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবর। ব্রিটিশরা সিকিমের সম্রাটের থেকে ১৮৩৫ সালে কার্শিয়াং দখল করে নেয়। পরবর্তী কালে ১৮৮০ সাল থেকে এটি ব্রিটিশ শাসকদের বেড়ানোর জায়গায় পরিণত হয় এবং অসুস্থদের স্বাস্থ্য ফেরানোর জায়গা হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। কার্শিয়া-এর উচ্চতম স্থান ডাউহিল – কয়েকটা দিন বিশ্রামের পক্ষে অতি মনোরম স্থান। কার্শিয়াং দার্জিলিং জেলার একটি পাহাড়ি শহর যাকে বলা হয় Land Of White Orchid.
 
কার্শিয়াং- এর দর্শনীয় স্থান প্রচুর, যেমন- মাকাইবাড়ি টি এস্টেট, ডিয়ার পার্ক, নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু মিউজিয়াম, দার্জিলিং হিমালয়ান মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া বয়ে স্কুল, ডাউহিল গার্লস স্কুল, ঈগল’স ক্রাগ, ডাউহিল এবং ডো হিল পার্ক, গিদ্দা পাহাড়, ভিউ পয়েন্ট, কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত টয় ট্রেন রাইড।
 
বেড়ানোর উপযুক্ত সময়:
কার্শিয়াং বেড়ানোর সেরা সময় মার্চ থেকে মে মাস এবং আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবর।
 
কীভাবে যাবেন:
শিলিগুড়ি থেকে ভাড়া বা শেয়ারড জিপে যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে বাস বা ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি, প্লেনে গেলে বাগডোগরা। এরপর ভাড়া বা শেয়ারড জিপে। যাদের গন্তব্য স্থান দার্জিলিং, তাঁরা দার্জিলিং যাওয়ার পথে কার্শিয়াং নেমে ঘুরে দেখতে পারেন। এছাড়া মিরিক বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে কিংবা শেয়ারড জিপে কার্শিয়ং যেতে পারবেন।
 
সমাপ্ত

1 comment:

  1. অনেক তথ্য সহ সুন্দর লেখা

    ReplyDelete

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 10 (Last 7 days)