প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ভিক্ষুক গাছ | তৈমুর খান

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা তৈমুর খান ভিক্ষুক গাছ দু - একটি ভিক্...

Saturday, June 10, 2023

ইউক্রেন | ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মন্ডল

বাতায়ন/ধারাবাহিক গল্প/১ম বর্ষ/৯ম সংখ্যা/২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০

ধারাবাহিক গল্প
ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মন্ডল

ইউক্রেন

১ম পর্ব

তিতির ছোট থেকে ভূগোল পড়তে খুব ভালবাসে। অন্য বিষয়ের প্রতি ওর যেন একটুও আগ্রহ নেই। মনে পড়ে স্কুলে গেলেও ও অপেক্ষা করে থাকত কখন ওর প্রিয় সাবজেষ্ট ভূগোল ক্লাসটা আসবে।
 
তিতির যে পড়াশোনায় খুব খারাপ তা নয়। তবে অঙ্ক, ইংরেজি বা সায়েন্স গ্রুপের প্রতি ও একদম আকর্ষণ বোধ করত না। ওর যত আগ্রহ ভালবাসা সব ছিল ঐ ভূগোলকেই কেন্দ্র করে। ক্লাসে ম্যাম যখন ম্যাপ নিয়ে পড়াতেন তিতির তখন যেন ম্যাপের মধ্যে হারিয়ে যেত। ও ওর মন এবং চোখে হাজার স্বপ্ন নিয়ে উড়ে যেত পর্বত থেকে পর্বতমালায়। মনে মনে ও ককেশাস, ইউরাল পর্বতের গভীর অরণ্যের মধ্যে মেষপালক দলের সঙ্গী হত।
 
আবার কখনো মনে মনে তিতির ভারত মহাসাগর থেকে এক ডুব দিয়ে এডেন হয়ে লোহিত সাগর হয়ে সুয়েজ খালের মধ্যে দিয়ে ভূমধ্য সাগরের পাড়ে, সেখান থেকে জিব্রাল্টার প্রণালীতে সাঁতারু বুলা চৌধুরীর মতো সাঁতরে আটলান্টিক মহাসাগরে অতি অনায়াসেই চলে যেত, তিতিরের ম্যাপের মধ্যে দিয়ে। এই নিয়ে ওর বন্ধুরা কী মজাই না পেত তখন ভূগোল ক্লাসে!
 
এই কথা মনে পড়লে তিতির এখনো গর্ব অনুভব করে যখন ওর বন্ধুরা ভূগোল ক্লাসটা এলেই বলে উঠত, “এবার তো তিতির একাই ক্লাস করবে। আমরা সবাই সিট ভরাতে বসে থাকব ক্লাসে।” আজ ও অস্বীকার করতে পারে না বন্ধুদের থেকে এই কথা শুনতে তিতিরের কী ভাল লাগত! বন্ধুদের মতো তিতিরও ভেবেছিল ভবিষ্যতে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করবে। কিন্তু তিতিরের জীবনে সেটা হয়নি। তবে সে বিষয়টা পড়তে না পারলেও ভূগোলের প্রতি ভালবাসা ওর আজও রয়ে গেছে। ম্যাপ দেখা, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নিয়ে পড়াশোনা করা, সেই সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো তিতিরের এখন প্রধান নেশা।
 
বড় হয়ে কলেজে পড়ার সময়ে পড়াশোনার ফাঁকে রাশিয়ার ম্যাপ দেখতে দেখতে তিতিরের মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় ওদের বাড়িতে ‘সোভিয়েত দেশ’ নামে একটি ম্যাগাজিন আসত। আর বছরের শেষে আসত একটি ক্যালেন্ডার। ঐ দেশের সুন্দর সুন্দর মেয়েদের ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার কী যে ভাল লাগত তখন। সোভিয়েত দেশটা তিতির এই ভাবেই ভালবেসে ফেলেছিল। কত বড় দেশ ছিল সোভিয়েত রাশিয়া। যাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন-ও বলা হত। কত বড় প্রদেশ এর সঙ্গে যুক্ত ছিল তখন। সোভিয়েতের এই বিশালতা তিতিরের মনে বিস্ময়ের জন্ম দিত।
 
ক্লাসে ভূগোল ম্যামের পড়ানো আজও তিতিরের মনে পড়ে। ম্যাম বলতেন, সোভিয়েত দেশটাকে বলা হয় ইউরেশিয়া। ওর বেশির ভাগ অংশ পড়েছে এশিয়া মহাদেশে আর কিছুটা অংশ পড়েছে ইউরোপ মহাদেশে। ইউরোপের অংশ ছোট হলেও ওখানেই মানুষজন বেশি বাস করে। আর এশিয়ার অংশ বড় হলেও ঐ অংশে বাস করে কম সংখ্যক মানুষ। কারণ সেখানে আছে সাইবেরিয়ার মতো অত্যন্ত শীতপ্রধান অঞ্চল। ওখানে তাই মানুষ বেশি বাস করে না। তুলনামূলক ভাবে ইউরোপ অংশে লোক বাস করে বেশি। কারণ ঐ দিকেই বেশি সুযোগসুবিধে। আধুনিক মনোভাবাপন্ন মানুষজনের বাস। তাছাড়া ওদের রাজধানী মস্কো ওখানে অবস্থিত।
 
বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে তিতির জেনেছে সোভিয়েত দেশের মধ্যে রাশিয়া হল প্রধান রাজ্য। আর ওর ছোটবেলায় ‘সোভিয়েত দেশ’ ম্যাগাজিনের মধ্যে দেখা সেই সোভিয়েত দেশ এখন আর আগের মতো নেই। দেশটা ১৯৯১-এ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। এতে খুব কষ্ট পায় তিতির। ও কেমন যেন টান অনুভব করে। তিতির ওর ছোটকাকে মনের কথা খুলে বলে। ছোটকা ওর বাবার থেকে অনেক ছোট। ছোটকা ওদের সঙ্গেই থাকে। ওর যত প্রশ্ন, আবদার সব ঐ ছোটকার কাছে। ছোটকাও তিতিরের সব অজানার সমাধান করে দিয়ে আনন্দ পায়। যে-দিন তিতির ও ছোটকার ছুটি থাকে সেদিন তিতির ম্যাপ নিয়ে বসে ছোটকার সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয়। কখনো আবার চূর্ণী নদীর ধারে ঘুরতে গিয়ে তিতির ভলগা নদীর কথা মনে করে রাশিয়ার গল্প করতে থাকে ছোটকার সঙ্গে। ছোটকা তখন তিতিরকে খ্যাপায়, “তিতির তুই যদি রাশিয়া নিয়ে ডায়েরি লিখতিস তাহলে রবীন্দ্রনাথের রাশিয়ার চিঠি-ও ফেল পড়ে যেত।”
 
এখন তিতির রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও খোঁজখবর রাখে। ও ভাবে, তখন সোভিয়েত দেশ ম্যাগাজিনে লেখা বিষয়েগুলোতে কি ভুল লিখত ওদের দেশের লোকেরা? ম্যাগাজিনটি পড়তে পড়তে কখনো তো মনে হত না ঐ দেশের মানুষের মনে এত ক্রোধ, বঞ্চনা জমে ছিল। ওদের দেশে যে দারিদ্র্য ছিল তা তো কখনোই ম্যাগাজিনগুলোতে লেখা হত না, তখন তিতিরের কাছে সোভিয়েত দেশ মানে এক ছবির শহর। সুন্দর সুন্দর বাড়ি ঘর। কোন গরিব নেই। সবাই খেতে পায়। ওদের দেশের মেয়েরা কী সুন্দর দেখতে। কী সুন্দর ওদের পোশাক-আশাক, কত বড় বড় একান্নবর্তী সব পরিবার! যেন পরিবারগুলোতে কোনো দুঃখ বা অভাব নেই। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই কেমন হাসি-হাসি মুখে ছবি তোলে। ওদের এই পারিবারিক ছবিগুলো তিতিরকে খুব আনন্দ দিত।
ঐ থেকেই তিতির খুব ছোট থেকেই ওদের দেশের প্রদেশগুলোর নাম জানত। যা ওর ক্লাসের ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়া বন্ধুরাও জানত না। আজারবাইজান, উজবেকিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, ক্রিমিয়া, রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন ইত্যাদি কত নাম ছোট থেকে ওর জানা। ঐ-সব দেশের আঙুরের ক্ষেতে আঙুর তোলা মেয়েদের ছবির মধ্যে তিতির মনে মনে নিজেকে বসিয়ে দিত। আর পাইন গাছের ঘন সবুজ অরণ্যের মধ্যে দিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যবান ঘোড়া ওয়ারিদের পিছনে তিতির মনে মনে উঠে বসত।
 
সোভিয়েত দেশকে ভালবাসতে গিয়ে তিতির ভালবেসে ফেলেছিল উৎসবদাকে। বাবার বন্ধুর ছেলে উৎসবদা।

ক্রমশ

1 comment:

  1. শুরুটা ভালোই লাগল।

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)