প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ভিক্ষুক গাছ | তৈমুর খান

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা তৈমুর খান ভিক্ষুক গাছ দু - একটি ভিক্...

Tuesday, October 3, 2023

শারদ | স্মৃতির চুনিপান্না | অঞ্জনা রেজ ভট্টাচার্য

বাতায়ন/শারদ/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১৯শে আশ্বিন, ১৪৩০

শারদ | ছোটগল্প
অঞ্জনা রেজ ভট্টাচার্য

স্মৃতির চুনিপান্না


এইমাত্র অতসী এই মঞ্চ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ডাকবেন না কেন-না ও সাড়া দেবে না। আমিও ডাকতে পারছি না, কেন-না আমি গতকাল থেকে ওই নামে ডাকার অধিকার হারিয়েছি।

অতসী খ্যাতিনামা গায়িকা। স্বনামধন্যা। যেমন কণ্ঠ তেমন তাল-লয়-ছন্দ। অরূপ বছর দশেক আগে এক অনুষ্ঠানে ওর গান প্রথম শোনে। সেই দিনই গানের পর আলাপ জমায়। অরূপ বেসরকারি এক মস্ত বড় ফার্মের মস্ত বড় পোস্টে কাজ করে। সুদর্শন শিক্ষিত স্মার্ট হ্যান্ডসাম। ফলে যা হয়। লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। ক্রমে পরিচয়ের রং বদলায়। অবশেষে ছাদনাতলায় সম্পর্কের স্থান হয়। অরূপের আর একটা বাড়তি গুণ। ভাল তবলাবাদক। গানের তালে মিলেমিশে ভালই চলছিল দশ-দশটা বছর। কিন্তু হঠাৎ বিধি বাম। আখ রোড দুর্ঘটনায় অরূপের ডান হাতটা জখম হয়। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল থেকে ঘোর জটিল হয়ে ওঠে। একসময় পরিত্রাণের জন্য বাদ যায় ডান হাতটা। সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গতকারীর জীবনটাও। বাঁয়া-তবলা যেমন একা বাজে না তেমন এক হাতেও তবলা বাজানো যায় না।

এই পরিস্থিতিতে অনায়াসে ঢুকে পড়ে ইমন। নতুন তবলাবাদক। লোভের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোয়। অতসীর চোখ পড়ে। ছেলেটা তো বেশ। ভাল সংগীত-বিচারী। শিক্ষিত স্মার্ট। তবে তো… ঝোপ বুঝে কোপ মারে। সঙ্গে সঙ্গে ইমন রাজি। দ্রুত সব ঠিকঠাক।

অরূপ দেখে আর ভাবে ঠিকই করেছে অতসী। ভঙ্গুর স্বামীকে কে কতদিন… এই তো গতকাল রাত দু’টোয় বাড়ি ফেরে অতসী। সঙ্গে ইমন। খুব জলি মুড। আমতা আমতা করে অরূপ জিজ্ঞেস করে— এত রাত।

শান্ত স্বরে অতসীর জবাব— জলসায় এটা আবার রাত। সবে দু’টো। সারারাত থাকতে হতে পারত। ইমন তো বাড়ি ফিরতে পারবে না। ওর গাড়িটা… তারপর নিচু স্বরে বলে— থাক যেতে হবে না, আজ রাত এখানেই… যা তো হরি গেস্টরুমটা খুলে দে। রাতে ওখানে আমরা খেয়ে এসেছি।

ঝলমলে সাজগোজ, কলকলে কথাবার্তা এই লাস্যময়ী অতসীকে বড্ড অচেনা লাগে। আর ক্রমশ রাগের পারদ বৃদ্ধি পায়। এমনি করেই একদিন সহ্যের পারদ সীমা ছাড়ায়। আর আচমকা অতসী বিয়ের কার্ড এগিয়ে ধরে। অরূপ নির্লিপ্ত ভাবে কার্ডটা তুলে নেয়। বিয়েটা তো জানা। তবু প্রশ্ন জাগে। ডিভোর্সের আগে বিয়ে! ঘোর না কাটতেই এক ঝটকায় খুলে হতবাক— এ কী! এ যে সত্যি সত্যি বিয়ে। অতসীকে মুখে যা আসে তাই বলে গালমন্দ করে। ফলস্বরূপ অতসী পরেরদিনই ডিভোর্সের সই করিয়ে নেয়। প্রতিশোধ নিয়ে শান্ত হয়ে চোখ রাখে।

অরূপ কার্ডটা খুলে— পাত্র-পাত্রী আশা আর ইমন। অতসীর একমাত্র ছোট বোন।

আজ অনেক বছর পর এক মঞ্চে অতসীর সঙ্গে দেখা। এতদিন অতসীকে অনেক অনেক খুঁজেছে। কিন্তু পায়নি। একরোখা জেদি মেয়ে অতসী। আজ যখন আরেকটা গানের জন্য অনুরোধের ঝড় উঠল। তখন অরূপের এই কথাগুলো মনে হল।

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)