প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

শেষ থেকে শুরু [৫ম পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/১ ৯ তম সংখ্যা/ ৩০শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ ধারাবাহিক উপন্যাস পারমিতা চ্যাটার্জি শেষ থেকে শুরু [৫ম পর্ব...

Tuesday, October 3, 2023

শারদ | মাতৃপক্ষ | দেবশ্রী রায় দে সরকার

বাতায়ন/শারদ/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১৯শে আশ্বিন, ১৪৩০

শারদ | ছোটগল্প
দেবশ্রী রায় দে সরকার

মাতৃপক্ষ


আজ মহালয়া। সৌভিক অফিসের কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে আজ সস্ত্রীক আসতে বলেছে। এমন পার্টি মাঝে মাঝেই হয় তার বাড়িতে। সৌভিক আর রুমকির একমাত্র মেয়ে ব্যাঙ্গালোরে থেকে পড়াশোনা করে। তাই ঘনঘন পার্টিতে তার স্ত্রী রুমকির কোনো আপত্তি থাকে না। বিলাসবহুল জীবন তাদের। উচ্চবিত্ত বাঙালি সংস্কৃতিতে পার্টি এখন part of status… সৌভিকের পরিবারের আভিজাত্য এখন অনেকটাই আধুনিকতার মোড়কে মোড়া। এই উচ্চবিত্ত জীবনের অন্তঃসার শূন্যতাও কখনো কখনো স্পর্শ করে তাকে। কিন্তু জীবিকা স্ট্যাটাস, সামাজিক প্রতিষ্ঠার পরেও - ব্যক্তি সৌভিক নিজের ভেতর নিজে যেন হারিয়ে থাকে। সৌভিকের বাড়ির একতলায় গ্যারেজের পাশে দু’টো ঘর নিয়ে থাকে তার ড্রাইভার দীপক আর তার স্ত্রী মাধুরী, আর তাদের একটি মাত্র কন্যা সন্তান, তার নাম স্বচ্ছতোয়া।

ড্রাইভারের মেয়ের এ হেন নামকরণ সৌভিককে মাঝে মাঝে বিব্রত করে। ড্রাইভার দীপককে গাড়ি বার করতে বলল সৌভিক। পুজোর জন্য কিছু শেষ কেনাকাটা করবে রুমকি আর সৌভিক। আর সন্ধেবেলার পার্টি তো আছেই। গাড়িতে যেতে যেতে হঠাৎ রুমকির মনে হল আজ হয়তো বাবা-মার ছবিতে মালা দেওয়া উচিত। হঠাৎ বলে উঠল, "সৌভিক দু’টো মালা কিনো। আজ কী সব যেন পিতৃপক্ষের শেষ মাতৃপক্ষের শুরু। যাইহোক বন্ধুবান্ধব আসবে। বাবা-মা’র গলায় দু’টো মালা থাকলে ভাল লাগবে।" সৌভিক মজা করে বলল, "বাবা-মা’র ছবিকে কি তুমি শো-পিস ভাবো? যে বন্ধুবান্ধব আসবে বলে সাজাবে?" প্রাণোচ্ছল রুমকি হা হা করে হাসতে থাকে। রাত্রির আটটার সময় সৌভিকের বাড়িতে পার্টি শুরু হয়। চারজন বন্ধু সস্ত্রীক আসে। স্টার্টার ড্রিঙ্কসে এবং গালগল্পে সৌভিকের ড্রয়িং রুম গমগম করতে থাকে। সবার মুখেই খালি নিজেদের স্ট্যাটাস জাহির করার গল্প। সৌভিকের স্ত্রীর সঙ্গে সৌভিকের বন্ধু পত্নীরা গল্প করে, অধিকাংশ বিষয় জুড়ে থাকে পুজোর কেনাকাটা। ড্রিঙ্কস হাতে সৌভিকের বন্ধুরা গল্প করতে থাকে, দেশের অর্থনীতি আর কীভাবে আরো বেশি উপার্জন করা যায়। ড্রয়িং রুমের উচ্ছ্বাস ও সেই গমগম ভাবের মধ্যেও সৌভিকের কানে একটা সুন্দর গান ভেসে আসে। ড্রিংকসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে সৌভিক বারান্দায় দাঁড়ায়। ড্রাইভার দীপকের ঘর থেকে থেকে গানটা ভেসে আসছে... গাইছে স্বচ্ছতোয়া, দীপকের মেয়ে,.. 'বাজলো তোমার আলোর বেণু'... ঠিক যেভাবে সৌভিকের মা মহালয়ার দিন গাইতেন তাদের বাড়ির ঠাকুরদালানের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে।

আজ মাতৃপক্ষ। মায়ের গলায় দুলছে একটা সরু জুঁইয়ের মালা। হঠাৎ মনে হল সৌভিকের কোথায় যেন সে হেরে যাচ্ছে… স্বচ্ছতোয়ার ওই গানের কাছে... নিজের বৈভব বিলাসব্যসন তার কাছে অসহ্য ঠেকছে। রুমকি এল বারান্দায় সৌভিককে বলল, "চলো... কয়েকটা ড্রিংকস বানাও সকলের জন্য"... মৃদু হেসে এগিয়ে চলে সৌভিক তার ড্রয়িং রুমের দিকে... মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ… আবার বসে পড়ে বন্ধুদের মজলিশে।

 

সমাপ্ত

1 comment:

  1. Vision valo laga.. tor lekhoni te bastabotar bohi Prakash...

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)