মিষ্টি মুখে
এই যে এত নাড়ু, মিষ্টি, তার একটিও রজতের কপালে জুটবে নাকি? যেদিন থেকে রক্তে চিনির মাত্রা বেশি ধরা পড়েছে তার জীবনটাও পুরো নিমপাতা হয়ে গেছে। তনিমা দারোগার মতো নজর রাখে, একদানা চিনিও জিভে ফেলার যো নেই, মিষ্টি তো দূরের কথা। দোকানে গিয়ে সাঁটিয়ে আসারও উপায় নেই, পাড়াভর্তি বউয়ের স্পাই। এমন কপাল যে পাড়ার স্কুলেই শিক্ষকতা করার সুবাদে তার গণ্ডিটাও খুব ছোট্ট।
আহা এমন বিজয়া দশমীর দিনগুলোতে কী যে আনন্দ হত! পাড়ায় সব বাড়িতে ঘুরে ঘুরে বড়দের প্রণাম করার প্রধান আকর্ষণ ছিল কাকিমা জেঠিমাদের দেওয়া প্লেটভরা নাড়ু, মোয়া, মিষ্টি। ঠাকুমা তো এক শিশি নাড়ু আলাদা করে রাখতেন তার আদরের নাতির জন্য। মায়ের তৈরি করা প্রথম নাড়ুটা চেখে দেখতেও সেই রজতেরই ডাক পড়ত। মিষ্টি হীন এই তেতো জীবনে এই সব স্মৃতিগুলোই ক্ষণিকের আনন্দ দেয়। বিজয়াও এখন করলা আর নিমপাতার মতো হয়ে গেছে রজতের কাছে।
সারা বাড়ি নারকেল আর গুড়ের পাক দেওয়া মিষ্টি গন্ধে ম ম করছে, নাহ্ এ সহ্য করার থেকে পাড়ার মণ্ডপে গিয়ে বসে থাকা ঢের ভাল।
উঠে বেরোতে যাবে, এমন সময়ে সামনে তনিমা, ঘামে ভেজা মুখ, বলে উঠল, "কী গো, কতক্ষণ ধরে ডাকছি, একবার সাড়াও দিচ্ছ না, নিশ্চয়ই ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে ডুবে আছ..." রজতের উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার বলে উঠল... "নাও তো এটা চেখে দেখো..." রজতকে চমকে দিয়ে তনিমা একটা সদ্য বানানো নাড়ু রজতের মুখে পুরে দেয়। "আজ বিজয়া দশমী, একদিন মিষ্টি খেলে কিচ্ছু হবে না, সুগারের ওষুধটা তো রেগুলার খাচ্ছোই..."
নরমগরম নাড়ুর স্বাদ রজতের মুখ থেকে মনে ছড়িয়ে পড়ছিল, আর সেই মুহূর্তটা কেমন মিষ্টি হয়ে ছড়িয়ে পড়ল তনিমার মুখের হাসিতে, জানলা গলে মেঝেতে পড়া একফালি রোদে, হঠাৎ দমকা হাওয়ায় বেজে ওঠা জানলাঘন্টির টুংটাং শব্দে।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment