প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Tuesday, October 3, 2023

শারদ | মিষ্টি মুখে | অপর্ণা শীল ভট্টাচার্য

বাতায়ন/শারদ/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১৯শে আশ্বিন, ১৪৩০

শারদ | ছোটগল্প
অপর্ণা শীল ভট্টাচার্য

মিষ্টি মুখে


আজ বিজয়া দশমীর পুজো হয়ে গেল, রজতের মনে এক আকাশ মেঘ, মুখ তেলো হাঁড়ি করে বসে আছে।

রজতের বউ তনিমার নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই, সকালসকাল পুজো দিয়ে নারকোলনাড়ু আর চন্দ্রপুলি বানাতে বসে গেছে, আজকাল এসব বিশেষ কেউ বাড়িতে বানায় না ঠিকই, কিন্তু শাশুড়ির আমলের এইসব নিয়ম ভাঙতে তনিমার মন চায় না যে....

গতকাল থেকে নারকেল কুরিয়ে কুরিয়ে রজতের হাতে ব্যথা, অথচ টুঁ শব্দটিও করার উপায় নেই, তাহলেই বউ ঝুলি খুলে বসে যাবে, গত বিশ বচ্ছরের উপাখ্যান। নতুন বিয়ে হয়ে আসা ইস্তক যা যা অপছন্দের ঘটনা, সালতারিখ ধরে গরগর করে শোনার চেয়ে নিজের মুখে তালা মেরে থাকা ঢের ভাল। আবার বিকেল হতে না হতেই সাজুগুজু করে সিঁদুর খেলতে বেরোতে হবে না, তাই এত তাড়া।

এই যে এত নাড়ু, মিষ্টি, তার একটিও রজতের কপালে জুটবে নাকি? যেদিন থেকে রক্তে চিনির মাত্রা বেশি ধরা পড়েছে তার জীবনটাও পুরো নিমপাতা হয়ে গেছে। তনিমা দারোগার মতো নজর রাখে, একদানা চিনিও জিভে ফেলার যো নেই, মিষ্টি তো দূরের কথা। দোকানে গিয়ে সাঁটিয়ে আসারও উপায় নেই, পাড়াভর্তি বউয়ের স্পাই। এমন কপাল যে পাড়ার স্কুলেই শিক্ষকতা করার সুবাদে তার গণ্ডিটাও খুব ছোট্ট।

আহা এমন বিজয়া দশমীর দিনগুলোতে কী যে আনন্দ হত! পাড়ায় সব বাড়িতে ঘুরে ঘুরে বড়দের প্রণাম করার প্রধান আকর্ষণ ছিল কাকিমা জেঠিমাদের দেওয়া প্লেটভরা নাড়ু, মোয়া, মিষ্টি। ঠাকুমা তো এক শিশি নাড়ু আলাদা করে রাখতেন তার আদরের নাতির জন্য। মায়ের তৈরি করা প্রথম নাড়ুটা চেখে দেখতেও সেই রজতেরই ডাক পড়ত। মিষ্টি হীন এই তেতো জীবনে এই সব স্মৃতিগুলোই ক্ষণিকের আনন্দ দেয়। বিজয়াও এখন করলা আর নিমপাতার মতো হয়ে গেছে রজতের কাছে।

সারা বাড়ি নারকেল আর গুড়ের পাক দেওয়া মিষ্টি গন্ধে ম ম করছে, নাহ্‌ এ সহ্য করার থেকে পাড়ার মণ্ডপে গিয়ে বসে থাকা ঢের ভাল।

উঠে বেরোতে যাবে, এমন সময়ে সামনে তনিমা, ঘামে ভেজা মুখ, বলে উঠল, "কী গো, কতক্ষণ ধরে ডাকছি, একবার সাড়াও দিচ্ছ না, নিশ্চয়ই ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপে ডুবে আছ..." রজতের উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার বলে উঠল... "নাও তো এটা চেখে দেখো..." রজতকে চমকে দিয়ে তনিমা একটা সদ্য বানানো নাড়ু রজতের মুখে পুরে দেয়। "আজ বিজয়া দশমী, একদিন মিষ্টি খেলে কিচ্ছু হবে না, সুগারের ওষুধটা তো রেগুলার খাচ্ছোই..."

নরমগরম নাড়ুর স্বাদ রজতের মুখ থেকে মনে ছড়িয়ে পড়ছিল, আর সেই মুহূর্তটা কেমন মিষ্টি হয়ে ছড়িয়ে পড়ল তনিমার মুখের হাসিতে, জানলা গলে মেঝেতে পড়া একফালি রোদে, হঠাৎ দমকা হাওয়ায় বেজে ওঠা জানলাঘন্টির টুংটাং শব্দে।

 

সমাপ্ত                          

 

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)