বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম
বর্ষ/২৪তম সংখ্যা/২৪শে কার্তিক, ১৪৩০
ছোটগল্প
প্রদীপ কুমার দে
হিসাবে গরমিল
আজ সেই বৌদি মারা গেল।
আজীবন ধরে গোপাল পুজো করত। কৃষ্ণ ভক্ত। স্বামীর অভিযোগ ছিল তার স্ত্রীর নাকি
সংসারে মতি ছিল না। সবসময়ই ঠাকুর-দেবতা-মন্দির এইসব করেই দিন কাটাত। অথচ বউ ছিল
রূপসী এবং যুবতী। একেবারে বিয়ের পর কিছুদিন দাদা তাকে খুব কাছে পেয়েছিল, তাও নাকি
জোর করে। বৌদির নাকি যৌন ইচ্ছা একদম ছিল না।
তাও একটি ছেলে আর একটি মেয়ে জন্ম দেয়।
ব্যস ওখানেই শেষ। সেই যে সংসারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেল সাধুসন্তদের সংমিশ্রণে আর গৃহে
মন রইল না। বাচ্ছাদের জন্যও কোন টান রইল না। সবকিছুতেই ছাড়া ছাড়া ভাব দাদার ঘৃণার
কারণ হয়ে গেল।
অগাধ বিশ্বাস নিয়ে
নিজের মতন চলা। আমার সঙ্গে গল্প করত
মোবাইলে। সবই ঈশ্বরীয় কথা বলত। আমি বিরুদ্ধে কথা বললে এবং শক্ত যুক্তি দিয়ে লঙ্ঘন
করলে ও আরো কঠিন যুক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করত, যার শেষ পরিণতি হত আমায় ওর যুক্তি
মেনে নেওয়ায়।
বেশ কয়েক বছর বাদ একদিন
বৌদি কথা বলল,
- তোমার সাথে একটা কথা
ছিল। কথা দাও এ কথা কাউকে বলবে না।
এই ঘটনাটা ঘটে বছর
খানেক আগে। কাউকেই বলতে পারিনি। গোপাল ছাড়া আর বদমাশ দুজন জানে। অনেক ভেবে দেখেছি
পরিবারের অন্তত একজনকে এই কথাটি জানিয়ে দেওয়া ভাল। নাহলে আমার প্রায়শ্চিত্ত হবে
না।
- কী এমন কথা, যা
দাদাকেও বলোনি!
- মন্দির থেকে ফেরার পথে আমার দুই ভক্তবন্ধু আমাকে নিয়ে ওদের বাড়িতে
চা খাওয়াতে নিয়ে যায়। উদ্দেশ্য খারাপ ছিল বুঝিনি, কারণ বহুদিনের পরিচিত ছিল ওরা।
ওরা আমাকে কোন সুযোগ না দিয়ে দুজনে পর পর ধর্ষণ করে। আমার অগাধ বিশ্বাস ছিল কৃষ্ণ
বুঝি-বা ঠিক বাঁচাবেন। কেবলই ডাকছিলাম, কিন্তু…
কান-মাথা গরম হয়ে গেল
আমার। হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ হল,
- কোথায় গেল তোমার বিশ্বাস? তুমি কেন দ্রৌপদী হতে পারোনি? নাকি
পুরোটাই মিথ্যা?
- হয়তো আমার কর্মফলের…
- বাহ্ বাহ্ বেশ অজুহাত!
- আমার কিন্তু এখনও অগাধ বিশ্বাস। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে
বহুদূর।
আমি ভীষণ রাগী। রাগের
চোটে ফোনটা কেটে দিয়েছিলাম। আর কোনদিন যোগাযোগ করিনি। খবরাখবর পেতাম ছেলেমেয়ে কেউ
দেখে না। দাদাই সহায়। পরে মিলমিশও হয়েছিল। যেহেতু আমি সারাজীবন ধরে হিসাব মিলকরণের
কাজ করে এসেছি তাই এই বিশ্বাসের হিসাবটা আমার কাছে অমিলই থেকে গেছে।
সমাপ্ত
ধন্যবাদ পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলী সহ সকলজনকে।
ReplyDelete