প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Friday, December 29, 2023

মার | দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়

বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২৭তম সংখ্যা/১৩ই পৌষ, ১৪৩০

ছোটগল্প
দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়

মার


আধুনিক যুগে সবাই সবাইকে এত মারতে ব্যস্ত হাতে-ভাতে, বলার কথা নয়। একদিন পাঁচু ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকে— পাঁচু একজন খেতাবি ব্যারিস্টার। তার বাবা একজন গোরুর গাড়ির কোচোয়ান ছিলেন। তিনি গোরুকে জোরে জোরে পেটাতেন, গোরু যন্ত্রণায় ছটফট করে ছুটে পালাতে চাইত, গোরুর গাড়ি তত দ্রুত ছুটত। এভাবেই তিনি মাইলের পর মাইল ভারী জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করে টাকা রোজগার করতেন। ঘরে ফিরে গোরুদের খাবার দিতেন, আদর করতেন, ফাঁকা মাঠে ছেড়ে আসতেন, সন্ধেবেলা সময় মতো ঘরে তুলতেন, স্নান করাতেন, পরিচ্ছন্ন জায়গায় থাকতে দিতেন, কিন্তু গাড়ি চালানোর সময় মানুষটা এমন আচরণ করতেন।

আমি ছোটবেলায় পড়াশোনা করতে চাইতাম না। পড়া মুখস্থ হোতো না। উনি সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে পড়া ধরতেন। না পারলে প্রচুর মার পিঠে পড়ত। খাওয়া বন্ধ, অবশেষে পড়া দিয়ে তবেই মুক্তি। এভাবেই উনি আমার লেখাপড়ার নেগেটিভিটি কাটিয়ে পজিটিভিটি এনে মানুষ তৈরি করে গেছেন।

আমি ভয়ের চোটে ওই গোরুগুলোর মতন পালাতে চেয়ে ব্যারিস্টার হয়েছি এবং গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে বিশাল একখানা বাড়ি হাঁকিয়ে ঝি-চাকর ছেলে-বউ নিয়ে বসবাস করি। আজ হঠাৎ আমার নাতি যখন কিছুতেই লেখাপড়া করতে রাজি নয় ওর মা মানে বউমা চিৎকারে বাড়ি মাথায় তুলছে তখন হালটা ধরতে আমি অগ্রসর হলাম। অপর পক্ষে মারার পর সেই মার সহ্য করার ক্ষমতা তার আছে কিনা, সে অন্য পথ অবলম্বন করবে কিনা, তা নিয়ে আমার স্ত্রী বেশ চিন্তিত কিন্তু আমি নাছোড়। আদরের নাতি গোপালকে সকালে নিজেই পড়াতে বসলাম আর শাস্তি দিয়ে একই কথা বলতে বললাম, কেঁদে কেঁদে বলে যেতেই লাগল তারপর ঘুম আসছে দেখে, এক ঘা কষিয়ে দিলাম! তারপর খাতা-পেন্সিল দিয়ে বললাম লিখে যাও, থামবে না থামলেই আবার— প্রথমবারেই গোপাল না দেখে লিখে ফেলল। যা দেখে বউমা অবাক হয়ে গেল!

হায়-রে পোড়া কপাল! এসব মিথ্যে স্বপ্ন! বাস্তবে এমনটা কিছুই হোলো না, যৎপরোনাস্তি সকালে উঠেই টিফিন খেয়ে কাঁধে ব্যাগ তুলে স্কুলের দিকে হাঁটা দেবে গোপাল, এমন সময় বললাম ব্যাগটাই ভারী। লেখাপড়াটা বড় হালকা হয়ে গেছে। গোপাল উত্তরে বলল, “তুমি আমার বয়সে কত কী পারতে? হাউ টু ডেল ইউ! স্পিক অ্যাবাউট মি!” বউমা নিরুত্তর, ছেলেও নিরুত্তর, গিন্নি বললে, “আজকালকার ছেলে, কেন ওদের সঙ্গে মুখ লাগাতে যাও--” আমি গুটিয়ে কাঁচুমাচু হয়ে লজ্জিত অপমানিত হয়ে নীরব হলাম। তারপর ঘরে চলে গেলাম! এইটাই কী শিক্ষা! এটাই কী সংস্কৃতি!

 

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)