প্রেম অপ্রেম | ভুবনেশ্বর মন্ডল

বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২৭তম সংখ্যা/১৩ই পৌষ, ১৪৩০

ছোটগল্প

ভুবনেশ্বর মন্ডল

প্রেম অপ্রেম

ইদানিং সংসারে বিতৃষ্ণা এসে গেছে সমরেশের। বিশেষত স্ত্রী সোমাকে কেন্দ্র করে। সোমা এখন কট্টর বাস্তববাদী। ওর মধ্যে এখন আর কোন রোমান্টিসিজম নেই। সম্পর্কে একটু রোমান্স না থাকলে ভাল লাগে না সমরেশের। সমরেশ চায় ওর বউ একটু সেজেগুজে থাকবে মুচকি হাসবে কটাক্ষ করবে কখনো গলা জড়িয়ে ধরবে চুলে বিলি কেটে দেবে। সোমার মধ্যে এসব আর কিচ্ছু নেই। দিনরাত কাজ আর কাজ ওকে কাজে কামড় দিচ্ছে। আর সমরেশকে চড়কির মতো ঘোরাচ্ছে। বাজার করো, ঝুল ঝাড়ো, জল তোল, সবজি কাটো, দুধ আনো, ছেলেকে পড়াও। একটার পর একটা কাজ দিয়ে যাচ্ছে। হাঁফ ছাড়বার উপায় নেই। কিছু বলতে গেলে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করে বলে, "বুড়ো দামড়া ২০ বছর সংসার করছে এখনো রস গেলো না। এই বয়সে বউয়ের সাথে রোমান্স করবে! ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, তবু নির্লজ্জ বেহায়াটার ভীমরতি গেল না!"

২০ বছর আগের সোমা আর আজকের সোমাকে চিনতে পারে না সমরেশ। তাদের প্রেম করে বিয়ে। লুকিয়ে দেখা, হাত স্পর্শ করা, চোখের সম্মোহন, লুকিয়ে সিনেমা যাওয়া, পার্কে বসে গল্প করা, সে সব আজ কোথায় গেল! সমরেশের এখন মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠিকই লিখেছিলেন ‘শেষের কবিতা’তে। যাকে প্রেম করবে, তাকে বিয়ে করবে না। আর করলেই দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবনের আঁচে প্রেম বাষ্প হয়ে যাবে। সমরেশ সেটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এক একবার মনে হয়, দূর শালা, কে আর সংসার করে! সন্ন্যাস নিয়ে পালিয়ে যাওয়াই ভাল। অষ্ট প্রহর ঘ্যানঘ্যান, মুখঝামটা, কথার খোঁচা, অসহ্য। সমরেশের মনে হয় পাশের বাড়ির অভীকদা ভাগ্যবান। ওরা স্বামী-স্ত্রীতে বড় ভাল আছে। কখনো তো ওদের ঝামেলা, ঝঞ্ঝাট, ঝগড়ার আওয়াজ পাওয়া যায় না। বরং ভোরবেলা মিতা বউদির গানের সুরে তার ঘুম ভাঙে। মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। মিতা বউদি যেমন দেখতে সুন্দরী, তেমনি তার গানের গলা। বয়স কম করে ৪২ তো হবেই। কিন্তু দেখে মনে হয়, এখনো যেন ২৫ বছর। একেবারে বিয়ের কনে। দেখা হলে মুচকি হাসে। ইয়ার্কি করে। চা খেতে ডাকে। সোমার সঙ্গে নীতা বউদির যেন কোন তুলনাই হয় না। সোমার কণ্ঠ থেকে শুধু বিষ ঝরছে। সমরেশ কত আর নীলকণ্ঠ হবে!

 

সমাপ্ত