বিরহ | প্রবন্ধ
বিরহের বেলা
"সচ্চিদানন্দময়
ব্রহ্মের স্বরূপ।"
সৎ- মানে সত্য বা নিত্য,
চিৎ- হল জ্ঞান বা চেতনার দ্যোতক আর আনন্দ হল- প্রেম, পূর্ণতা, পুলক, আহ্লাদ
ইত্যাদি অনুভূতির সম্মিলিত রূপ। এই তিন রূপে কল্পনা করা হয়- ব্রহ্মকে।
এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট
যে প্রেম-প্রণয় শুধুমাত্র একটি মানবিক অনুভূতিরই ব্যাপার নয়, এর মধ্যেই প্রকাশ পায়
পরমেশ্বরের তুষ্ট হওয়ার ব্যাপারটিও - জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনের প্রবল
আকাঙ্ক্ষাও। তাই প্রেমের এই বিরহ অংশটিও গভীর ভাবে চিন্তনীয় বিষয়।
মানব মনে উত্থিত
যৌন-চেতনার শারীর ধর্ম ঊর্ধ্বগামী হয়ে ঐশ্বরিক রূপ নেয। মানব প্রীতি তখন ঈশ্বর
প্রেমে পরিণত হয়। তাই বৈষ্ণব শাস্ত্রে বলা হয়েছে - "আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি
বাঞ্ছা তারে বলি কাম, কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা ধরে প্রেম নাম।"
প্রেমের এই ঊর্ধ্বায়নই
হল বৈষ্ণব ধর্মের মূল কথা। প্রেমের বিরহ অংশের পূর্ণ প্রকাশ দেখি রবীন্দ্রনাথের
বিরহের গানে - "কেটেছে একেলা বিরহের বেলা…"
বিরহ ভাবে ভাবিত মানব
মনে একাকিত্ব বোধ এসে চেপে বসে - তখন - "জগৎ সংসার মিছে সব মিছে এ জীবনের কলরব…"-
হয়ে ওঠে। তখন আশঙ্কা, সুখ-স্বপ্ন, দুঃখ-বেদনা প্রভৃতি নানা ভাবনার আকাশকুসুম
কল্পনায় ভরে থাকে মন।
"দেখিতে দেখিতে
নূতন আলোকে কে দিল রচিয়া ধ্যানের পুলকে…"
পার্থিব প্রেম ধীরে
ধীরে ঈশ্বর প্রেমের রূপ নেয়। তখন প্রেমিক-প্রেমিকার চোখে নূতন ভুবন এসে ধরা দেয়।
তখন ব্যক্তি জীবনের কথা
অনন্তকালের বাণী হয়ে দাঁড়ায়। মানব মনের বিরহের ভাব তখন চিরকালের বিরহ-মধুর ভাবে
পরিণত হয়।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment