বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/ছোটগল্প/২য়
বর্ষ/৬ষ্ঠ/যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা/২১শে আষাঢ়, ১৪৩১
যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা | ছোটগল্প
তপতী রায়
পথে হলো দেরি
"উত্তম এখন ইন্দ্রের সভায়। একেবারে স্বর্গে। আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার স্বর্ণ জয়ন্তী উদযাপন হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, ওনার মতো নায়ক আর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। জন্ম নেবে না কোন মায়ের কোলে।
অনুরাধা সামনের সিটে বসে পড়ল।"
লোকাল ট্রেন। চলতে শুরু করলো। চাকা ধীর গতিতে খসখস শব্দে এগিয়ে চলেছে।
অনুরাধা ছুটে চলেছে। সাহায্যের হাত অনেকে বাড়িয়েছে ‘না’ অনুরাধার
হবে না। তার পছন্দের মানুষটিকে দেখে ফেলেছে,
স্টেশনে প্রবেশ করা মাত্র।
হাতে বই। অর্ধেক পড়া হয়েছে। দাদু দিয়েছে পড়তে। জোর করেই। কিছুটা পড়েই
হাবুডুবু খাচ্ছে নায়কের এর প্রেমে। উত্তমকুমারের জীবনী। কত রঙের চরিত্র। দাদুর
লেখা। নায়কের কাছে একটি মাত্র ঋতু। ভরা বসন্ত। দাদুর অনুরোধ,— একবার পড়ে দেখ, জীবনের চলার পথের নায়ক
খুঁজে পাবি। সেই যে পড়তে শুরু করেছি, হাত
থেকে একদিনের জন্য ছাড়িনি। বাংলা নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। বাবা-মা হতবাক! ঘর
ভর্তি বাংলা বই। দাদুর সাথে বাংলা নিয়ে দিবারাত্র আলোচনা। তিন মাসে তিন বার
শান্তিনিকেতন ঘুরে এলাম। চারখানা কবি বন্ধু জুটিয়ে ফেলেছি। চারজন স্যুটে বুটে বন্ধু
দিনরাত ঘরে আনাগোনা। নানা ধরনের বন্ধু। দেখতে তো হবে। গল্পের নায়কের সঙ্গে মিলছে
কিনা।
মা-বাবার অশান্তির শেষ নেই। চলন্ত ট্রেনে হাত ধরে ফেলল তার পছন্দের মানুষটির। ট্রেনে উঠেই প্রথম প্রশ্ন,
— আপনার নাম?
— কেন বলুন তো? আপনি
কাকে খুঁজছেন, উত্তমকুমারকে? হাতে
বইখানা দেখেই বুঝতে পেরেছি।
— হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন!
— আপনার সাথে বেশ মিল। তাই তো প্রানের ভয় ত্যাগ করে লাফিয়ে উঠে পড়লাম।
— ভুল করলেন। আমার নাম গোবিন্দ শেঠ। যতই কাটাকাটি করুন উত্তমকুমার হতে পারব না। কাজ করি বড়বাজার। বাপের গুদাম। আপনার নাম?
— অনুরাধা মিত্র। দুদিকেই
মিল নেই। দেখলেন তো! আপনাকে দেখতে একেবারে উত্তমকুমারের মতো।
— ঐ রূপটুকু আছে।
— আপনি তো বেশ সুন্দর বাংলা বলছেন।
— আমার মা বাঙালি। ঠাকুমা বাঙালি।
— যদি পছন্দ হয়ে থাকে বই দাদুকে ফেরত দিয়ে বিয়ে করতে পারেন। দাদুর লেখা কেউ
পড়ছে না। আপনাকে গছিয়েছে। উত্তম এখন ইন্দ্রের সভায়। একেবারে স্বর্গে। আর খুঁজে
পাওয়া যাবে না। তার স্বর্ণ জয়ন্তী উদযাপন হচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, ওনার
মতো নায়ক আর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। জন্ম নেবে না কোন মায়ের কোলে।
অনুরাধা সামনের সিটে বসে পড়ল।
— অর্ধেকটা অনেক কষ্টে পড়েছি। বাংলা তো পড়তে পারি না। কদিন হলো দাদুর কাছে শিখছি। আপনি পড়ুন!
ম— আমি বাংলা? ছেলেবেলায় একবার “তালগাছ
এক পায়ে দাঁড়িয়ে, না বলে বট গাছ এক পায়ে
দাঁড়িয়ে” বলে ফেলেছিলাম। কান ধরে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেয়।
— আসলে, ‘পথে হোলো দেরি’ দেখে ওনার প্রেমে পড়ে
গেছি। তার ওপর দাদুর রোমান্টিক বই। আমি পাগল হয়ে গেছি।
— এক কাজ করুন, কোর্টে গিয়ে নামটা পাল্টে
ফেলুন।
— ওরে বাপ! বাবার সব
সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবো।
— ঠিক বড়বাজারের লোক!
সুন্দর একটা মেয়ে পাচ্ছেন; কেবল টাকার হিসেব।
— তুমিও চিন্তা করে দেখ; দেখতে
উত্তমকুমার, বাড়ি, গাড়ি, কেবল নাম গোবিন্দ! একেই বলে বাঙালির ব্যবসায়ী বুদ্ধি জিরো। তার চেয়ে বরং
আমরা রাধাগোবিন্দ জুটি বেঁধে ঘর করি। প্রেম করার সময় উত্তমসুচিত্রা। আর একবার
ভেবে দেখ! দুদিন সময় দিলাম।
— আবার দুদিন? ‘সেই পথে হলো দেরি।’
মা-বাবার অশান্তির শেষ নেই। চলন্ত ট্রেনে হাত ধরে ফেলল তার পছন্দের মানুষটির। ট্রেনে উঠেই প্রথম প্রশ্ন,
— আপনার নাম?
— ভুল করলেন। আমার নাম গোবিন্দ শেঠ। যতই কাটাকাটি করুন উত্তমকুমার হতে পারব না। কাজ করি বড়বাজার। বাপের গুদাম। আপনার নাম?
— আপনি তো বেশ সুন্দর বাংলা বলছেন।
— আমার মা বাঙালি। ঠাকুমা বাঙালি।
— অর্ধেকটা অনেক কষ্টে পড়েছি। বাংলা তো পড়তে পারি না। কদিন হলো দাদুর কাছে শিখছি। আপনি পড়ুন!
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment