বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/৬ষ্ঠ/যশোধরা রায়চৌধুরী
সংখ্যা/২১শে আষাঢ়, ১৪৩১
যশোধরা রায়চৌধুরী সংখ্যা | ধারাবাহিক গল্প
সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়
ঘড়ির ঘটনা
[১ম পর্ব]
"জুলি বিশ্বাস। ওরা খ্রিস্টান। বনিবনা হোল না। বছর তিনেক আমরা একসঙ্গে থাকার পর আইন মেনে বিচ্ছেদ হয়। শুনেছি, জুলি এবার একজন খ্রিস্টান ছেলেকেই বিয়ে করেছে।"
শিনা সব শুনে বলে- পুলিশে খবর
দেননি?
- দিয়েছি। কিন্তু ওদের কাজের
ধরণ তো জানেন। আঠেরো মাসে বছর। একটা সাধারণ ডায়েরি লিখে নিয়েছিল। একজন সাব ইন্সপেক্টর
আমাদের অফিসে ঘুরে গেছে। ব্যস। ওই অবধি।
- হাতঘড়িটা কি খুব দামী?
- হাতঘড়িটা কি খুব দামী?
- অবশ্যই। আমার পিতৃদেব জিনেভা
থেকে নিয়ে আসেন। যতদিন বাবা বেঁচে ছিলেন, বাবা পড়তেন। বাবা মারা যাওয়ার পর উত্তরাধিকার
সূত্রে আমি ঘড়িটা পাই। এবং শ্রাদ্ধকর্ম মিটে যেতেই আমি নিয়মিত ব্যবসা দেখতে
শুরু
করি। যদিও আমি কখনও বাবা যেই চেয়ারটায় বসতেন সেটায় বসিনি। সেটাকে একপাশে সরিয়ে রেখে অন্য একটা চেয়ারে বসি। সেও প্রায় দশ বছর হয়ে গেল। বাবা বেঁচে থাকলে এখন তার পঁচাত্তর বছর বয়স হতো।
- আর আপনার এখন কত বয়স হলো?
টিনা প্রশ্ন করে। ও ডায়েরিতে সব নোট করে নিচ্ছে।
- আমার পঁয়তাল্লিশ চলছে। আগামী ডিসেম্বরে ছেচল্লিশে পড়ব।
- শেষ কখন ঘড়িটা আপনার নজরে আসে?
শিনা প্রশ্ন করে।
- রোজ আমি অফিসে পৌঁছেই এক গ্লাস জল খাই। তারপর ঘড়িটা খুলে ড্রয়ারে রেখে দিই। আবার অফিস থেকে বেরোনোর সময় পরে নিই। গত সোমবার অফিস থেকে বেরোনোর সময় দেখি, ড্রয়ারে ঘড়িটা নেই। বাকি সব কিছু ঠিকঠাক আছে, শুধু ঘড়িটা নেই। তখনই খোঁজা শুরু করি। মানে যতটা সম্ভব। অফিসের স্টাফদের তো পকেট সার্চ করা যায় না। যতটা সম্ভব সব জায়গায় খোঁজা হয়। সেই রাতেই আমি থানায় ডায়েরি করি। ইন্ডাসট্রিতে সবাই বাবাকে শৌখিন মানুষ হিসেবে জানত। বাবা ঘড়িটা ছ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিল। কুড়ি
বছর আগে। এখন সে ঘড়ির দাম আরও বেশি।
- আপনি নিশ্চিত যে সেদিন আপনি ওই ঘড়িটা পরেই অফিসে গিয়েছিলেন?
শিনার প্রশ্ন শুনে ভদ্রলোক বলেন- মিস্টার দালাল বলে এক ভদ্রলোক সেদিন ঘড়িটা দেখতে চান। তাকে ঘড়িটা দেখাই। ওর ঘড়ির দোকান আছে। এসি মার্কেটে। আমার বন্ধুর বন্ধু। আমার বন্ধুর কাছে ওই ঘড়ির কথা শুনে দেখতে এসেছিল। আমাকে অনেক করে ঘড়িটা ওকে বিক্রি করতে অনুরোধ করে। যদিও আমি রাজি হইনি।
তারপর সে চলে যায়। বলে মাস খানেক বাদে আবার আসবে। আমার মত বদলালে ঘড়িটা ওই কিনবে।
- আপনি নিশ্চিত যে মিস্টার দালাল ঘড়িটা নিয়ে যাননি?
তাতাই প্রশ্ন করে। তাতাই ওদের
মাসতুতো দিদির ছেলে। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে ইকনমিক্স নিয়ে মাস্টার্স করছে। তাতাই
আর টিনা সমবয়সি। টিনা আর শিনা দুই বোন। শিনা দু বছরের বড়। শিনার গোয়েন্দাগিরিতে ওরা
থাকে। ভদ্রলোক বলেছিলেন সকাল দশটার সময় আসবেন। এলেন দশটা বেজে দশ মিনিটে। এ সব ব্যাপার
শিনার খুব অপছন্দ। তবে দশ মিনিট দেরি, এমন কিছু বেশি না। তাই মুখে কিছু বলেনি।
- আপনার বাড়ি তো শ্যামবাজারে? তাই না?
- না। তবে শ্যামবাজারের কাছেই। আমরা তিন পুরুষ ধরে ওখানে আছি। বড় রাস্তার ওপর গিরিশ ঘোষের একটা স্ট্যাচু আছে। ঠিক তার বাঁদিকের তিন তলা বাড়িটা আমাদের। মানে বাবার অবর্তমানে, আমিই মালিক।
শিনা আবার প্রশ্ন করে- আপনি কি একমাত্র সন্তান?
- দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সে সব কাজ আমার পিতৃদেব সুসম্পন্ন করে গেছেন। আমার দু বছর আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে। ওই তিন তলা বাড়িতে এখন আমি আর তিন জন সর্বক্ষণের চাকর থাকি।
- আপনার ডিভোর্সের কারণ আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। সে ব্যাপারে আমরা কিছু জানতে চাইব না। তবে আপনার বিবাহিত জীবন কতদিনের সেটা জানতে পারি কি? টিনা প্রশ্ন করে।
- আমার প্রাক্তন স্ত্রীর নাম জুলি। জুলি বিশ্বাস। ওরা খ্রিস্টান। বনিবনা হোল না। বছর তিনেক আমরা একসঙ্গে থাকার পর আইন মেনে বিচ্ছেদ হয়। শুনেছি, জুলি এবার একজন খ্রিস্টান ছেলেকেই বিয়ে করেছে। আমার
সঙ্গে দেখা হয় না। তবে খবর পাই।
এসব অঞ্চলের বাড়িগুলো একদম
গায়ে গায়ে। কী রকম ঘিঞ্জি। কিন্তু এ বাড়িটা তেমন না। বেশ বড় বড় ঘর। মেঝেতে হাল আমলের
টাইলস বসানো। এ বাড়ির পরিবেশ বেশ মার্জিত। তবে আশেপাশের বাড়ির চেঁচামেচি
শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভদ্রলোক দেখা
করতে আসেন— খেতে বসেছিলাম। তাই পাঁচ মিনিট দেরি হয়ে গেল। আপনাদের
সঙ্গে কথা বলেই আমি অফিস চলে যাব। ইতিমধ্যে ওদের জলখাবার
এবং চা দেওয়া হয়েছে।
তাতাই ধীরে ধীরে পুরোটা খাবার
চেষ্টা করলেও, ওরা দুজন শুধু চায়ে চুমুক দেয়।
- একতলায় দুটো ঘরেই অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। তাছাড়া ঠাকুর, চাকররা একটা ঘরে থাকে। দোতলায় আমি থাকি। তিন তলায় দুটো গেস্ট রুম আছে। বাকি সব ঘর মোটামুটি বন্ধ থাকে।
শিনা সোজাসুজি ভদ্রলোকের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে-
- মিস্টার বর্ধন, আপনার কি এ বাড়ির কাউকে সন্দেহ হয়?
- একদম না। এরা সবাই আমার বাবার আমলের। মোটামুটি ত্রিশ বছরের ওপরে এরা আছে।
- একবার আপনার শোবার ঘরটা দেখব। আর ওকে বর্ধন এন্ড অ্যাসোসিয়েটসের ঠিকানাটা বলে দিন। আমরা আপনার অফিসেও একবার যাব।
মিস্টার বর্ধন একটা কার্ড টিনার হাতে দেয়। শিনা, টিনা আর ভদ্রলোক দোতলায় উঠে যায়। তাতাই তাড়াতাড়ি খাবার খেতে থাকে। পাশাপাশি দুটো ঘরকে জুড়ে একটা ঘর করা হয়েছে। একটা বড় পালঙ্ক, একটা আলমারি এবং একটা ড্রেসিংটেবিল ছাড়া কোন আসবাবপত্র নেই। সঙ্গের টয়লেটের মাপ সাধারণ টয়লেটের তিনগুণ।
- পাশের ঘরটা আমার খাবার ঘর। ওটাও কি দেখবেন?
- না। তবে আজই আপনার অফিসে একবার যাব। আর দালালের ঘড়ির দোকান তো দালাল এন্ড কোম্পানি। এসি মার্কেটে। তাই তো?
করি। যদিও আমি কখনও বাবা যেই চেয়ারটায় বসতেন সেটায় বসিনি। সেটাকে একপাশে সরিয়ে রেখে অন্য একটা চেয়ারে বসি। সেও প্রায় দশ বছর হয়ে গেল। বাবা বেঁচে থাকলে এখন তার পঁচাত্তর বছর বয়স হতো।
- আর আপনার এখন কত বয়স হলো?
টিনা প্রশ্ন করে। ও ডায়েরিতে সব নোট করে নিচ্ছে।
- আমার পঁয়তাল্লিশ চলছে। আগামী ডিসেম্বরে ছেচল্লিশে পড়ব।
- শেষ কখন ঘড়িটা আপনার নজরে আসে?
শিনা প্রশ্ন করে।
- রোজ আমি অফিসে পৌঁছেই এক গ্লাস জল খাই। তারপর ঘড়িটা খুলে ড্রয়ারে রেখে দিই। আবার অফিস থেকে বেরোনোর সময় পরে নিই। গত সোমবার অফিস থেকে বেরোনোর সময় দেখি, ড্রয়ারে ঘড়িটা নেই। বাকি সব কিছু ঠিকঠাক আছে, শুধু ঘড়িটা নেই। তখনই খোঁজা শুরু করি। মানে যতটা সম্ভব। অফিসের স্টাফদের তো পকেট সার্চ করা যায় না। যতটা সম্ভব সব জায়গায় খোঁজা হয়। সেই রাতেই আমি থানায় ডায়েরি করি। ইন্ডাসট্রিতে সবাই বাবাকে শৌখিন মানুষ হিসেবে জানত। বাবা ঘড়িটা ছ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিল। কুড়ি
বছর আগে। এখন সে ঘড়ির দাম আরও বেশি।
- আপনি নিশ্চিত যে সেদিন আপনি ওই ঘড়িটা পরেই অফিসে গিয়েছিলেন?
শিনার প্রশ্ন শুনে ভদ্রলোক বলেন- মিস্টার দালাল বলে এক ভদ্রলোক সেদিন ঘড়িটা দেখতে চান। তাকে ঘড়িটা দেখাই। ওর ঘড়ির দোকান আছে। এসি মার্কেটে। আমার বন্ধুর বন্ধু। আমার বন্ধুর কাছে ওই ঘড়ির কথা শুনে দেখতে এসেছিল। আমাকে অনেক করে ঘড়িটা ওকে বিক্রি করতে অনুরোধ করে। যদিও আমি রাজি হইনি।
তারপর সে চলে যায়। বলে মাস খানেক বাদে আবার আসবে। আমার মত বদলালে ঘড়িটা ওই কিনবে।
- আপনি নিশ্চিত যে মিস্টার দালাল ঘড়িটা নিয়ে যাননি?
শিনার খুব অপছন্দ। তবে দশ মিনিট দেরি, এমন কিছু বেশি না। তাই মুখে কিছু বলেনি।
- আপনার বাড়ি তো শ্যামবাজারে? তাই না?
- না। তবে শ্যামবাজারের কাছেই। আমরা তিন পুরুষ ধরে ওখানে আছি। বড় রাস্তার ওপর গিরিশ ঘোষের একটা স্ট্যাচু আছে। ঠিক তার বাঁদিকের তিন তলা বাড়িটা আমাদের। মানে বাবার অবর্তমানে, আমিই মালিক।
শিনা আবার প্রশ্ন করে- আপনি কি একমাত্র সন্তান?
- দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সে সব কাজ আমার পিতৃদেব সুসম্পন্ন করে গেছেন। আমার দু বছর আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে। ওই তিন তলা বাড়িতে এখন আমি আর তিন জন সর্বক্ষণের চাকর থাকি।
- আপনার ডিভোর্সের কারণ আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। সে ব্যাপারে আমরা কিছু জানতে চাইব না। তবে আপনার বিবাহিত জীবন কতদিনের সেটা জানতে পারি কি? টিনা প্রশ্ন করে।
- আমার প্রাক্তন স্ত্রীর নাম জুলি। জুলি বিশ্বাস। ওরা খ্রিস্টান। বনিবনা হোল না। বছর তিনেক আমরা একসঙ্গে থাকার পর আইন মেনে বিচ্ছেদ হয়। শুনেছি, জুলি এবার একজন খ্রিস্টান ছেলেকেই বিয়ে করেছে। আমার
সঙ্গে দেখা হয় না। তবে খবর পাই।
২
- একতলায় দুটো ঘরেই অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। তাছাড়া ঠাকুর, চাকররা একটা ঘরে থাকে। দোতলায় আমি থাকি। তিন তলায় দুটো গেস্ট রুম আছে। বাকি সব ঘর মোটামুটি বন্ধ থাকে।
শিনা সোজাসুজি ভদ্রলোকের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে-
- মিস্টার বর্ধন, আপনার কি এ বাড়ির কাউকে সন্দেহ হয়?
- একদম না। এরা সবাই আমার বাবার আমলের। মোটামুটি ত্রিশ বছরের ওপরে এরা আছে।
- একবার আপনার শোবার ঘরটা দেখব। আর ওকে বর্ধন এন্ড অ্যাসোসিয়েটসের ঠিকানাটা বলে দিন। আমরা আপনার অফিসেও একবার যাব।
মিস্টার বর্ধন একটা কার্ড টিনার হাতে দেয়। শিনা, টিনা আর ভদ্রলোক দোতলায় উঠে যায়। তাতাই তাড়াতাড়ি খাবার খেতে থাকে। পাশাপাশি দুটো ঘরকে জুড়ে একটা ঘর করা হয়েছে। একটা বড় পালঙ্ক, একটা আলমারি এবং একটা ড্রেসিংটেবিল ছাড়া কোন আসবাবপত্র নেই। সঙ্গের টয়লেটের মাপ সাধারণ টয়লেটের তিনগুণ।
- পাশের ঘরটা আমার খাবার ঘর। ওটাও কি দেখবেন?
- না। তবে আজই আপনার অফিসে একবার যাব। আর দালালের ঘড়ির দোকান তো দালাল এন্ড কোম্পানি। এসি মার্কেটে। তাই তো?
ক্রমশ…
জমে উঠছে।
ReplyDeleteপরের পর্বে র প্রতীক্ষায় থাকবো
ReplyDelete