বাতায়ন/মাসিক/প্রবন্ধ/২য় বর্ষ/২৮তম সংখ্যা/২রা
ফাল্গুন, ১৪৩১
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
সংখ্যা |
প্রবন্ধ
সাইফুল ইসলাম
বোধের
কথকতা
"ভুলবশত, না জেনে, না বুঝে কোন কাজ করা হতেই পারে। তা নিয়ে কোন কথা নেই। কিন্তু কথা হলো নিজের স্বার্থের বেলায় সচরাচর কোন ভুল হতে দেখা যায় না অর্থাৎ নিজের স্বার্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হলেও যৌথ স্বার্থ না বুঝতে পারা রহস্যময়।"
বোধ বা
বোধশক্তি এক অসাধারণ গুণ। এটি সবার মধ্যে সমান থাকে না। অধিকতর বোধশক্তিসম্পন্ন
ব্যক্তিগণ প্রায় সকল ক্ষেত্রে সফল হয়ে থাকেন। বোধশক্তির ইংরেজি পরিভাষা
হলো Common
Sense অর্থাৎ power of understanding.
বোধশক্তি বা
কমনসেন্স এমন একটি বিষয় যা কাউকে বলে-কয়ে বা কথা শুনিয়ে
তার মধ্যে আনা সম্ভব হয় না। এটি আপনা থেকেই মানুষের নিজের মধ্যে হয়ে থাকে। মূলত
আমরা বোধশক্তি বা কমনসেন্স বিহীন মানুষ তাদেরকেই বলি যারা ভেবেচিন্তে কাজ করেন না
বা কথা বলেন না,
হুট করে বোকার মতো এমন কাজ করেন বা কথা বলেন যা অন্যের বিরক্তিরই কারণ হয়ে থাকে। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে সকলের সাথে খাপ খেয়ে চলতে হয়। সমাজে
চলতেফিরতে বোধশক্তি বা কমনসেন্সের বিষয়টি ফুটে ওঠে। এ
বিষয়টির অনুপস্থিতির ফলে অন্যজনের নিকটে যেমন রোষানলে পড়তে হয়, তেমনই নিজেকেও লজ্জিত হতে হয়। কথাবার্তা, কার্যকলাপ ও বুদ্ধিমত্তায় যা সঠিক বা
মানানসই তা প্রকাশ করাই বোধশক্তি বা কমনসেন্সের বহিঃপ্রকাশ।
সৃষ্টিকর্তা মানুষকে এমন কিছু জ্ঞান প্রদান করেছেন যা পরিবার, পরিবেশ এবং
পরিস্থিতি থেকে দেখেশুনে রপ্ত করে থাকে কিন্তু এর জন্য শিক্ষালয়ে গমন করতে হয় না।
অনেকেই এ জ্ঞানের অভাবে বা এ জ্ঞান উপেক্ষা করেই অবোধের মতো কাজ করে এবং কমনসেন্সের ব্যত্যয় ঘটায়। ফলে বিব্রতকর পরিস্তিতির উদ্ভব হয়।
বোধশক্তি বা কমনসেন্সের ঘাটতিজনিত কারণে যে অবস্থার সৃষ্টি
হয়, তা
কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা যায়। যেমন ধরুন, এক সাথে একই আকৃতির কয়েকজনের পোশাক
আলমিরাতে বা হ্যাঙারে রাখা হলো। বাইরে বের হওয়ার সময় তাড়াহুড়া করে কার কোন্ পোশাক তা না দেখেই অন্যজনের পোশাকটি
গায়ে পরে বের হয়ে হওয়া। ফলে একজনের জিনিস অন্যজনের গায়ে চলে যায় যা খুবই দুঃখজনক। গাড়িতে একা এক সিটে বসার পর অন্য কোন লোক পাশে
বসতে চাইলে পূর্বের লোকের একটু নাড়াচাড়া দিয়ে বসতে হয়। এরূপ
না করে পা ছড়িয়ে সিটের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে বসে থাকা মনে
হয় বোধশক্তি বা কমনসেন্সের ঘাটতির বহিঃপ্রকাশ। যে স্থানে যে
কথা বলা ঠিক দরকার তা বাছবিচার না করে সেই স্থানে যে-কোনো
কথা হুট করে বলে ফেলা, যা খুবই বেকায়দা অবস্থার সৃষ্টি হয়। কয়েকজন একত্রে খেতে বসে
ও অন্যজনের প্রতি খেয়াল না রেখে কেবল নিজের উদরপূর্তির জন্য
সর্বস্ব গ্রহণ করা। এছাড়া বাসাবাড়ির লাইট, ফ্যান একসাথে উপভোগ করার সময় হঠাৎ
একজনকে রেখে অন্যরা সবাই চলে গেলে পরবর্তীতে শেষের জন চলে যাওয়ার সময় লাইট, ফ্যান বন্ধ
না করে উঠে চলে যাওয়াটা বোধশক্তি বা কমনসেন্সের অভাবের ফলেই হয়। প্রয়োজনীয়
জিনিসপত্র কোন ঝুড়িতে রাখার প্রয়োজন হলে পাশাপাশি ভাল ও ময়লা ঝুড়ি থাকলে কেউ যদি
ভুলবশত বা না দেখে একটি জিনিস ময়লা ঝুড়িতে রেখে দেয়, কিন্তু
পরেরজনও স্বজ্ঞানে নির্ধিদ্বায় একই ধারাবাহিকতায় ময়লা ঝুড়িতেই রাখতে থাকে
আর বলে আগে আরো ছিল তো তাই আমিও রেখেছি। অথচ দরকার ছিল আগের ব্যক্তি ভুল করলেও
অর্থাৎ ময়লা ঝুড়ির ময়লা জিনিস সরিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভাল ঝুড়িতে রেখে দেওয়া। এ ধরনের হাজারো উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
এ ধরনের লোককে অনেক সময় অবিবেচকও বলা যেতে পারে। তবে লক্ষনীয় যে, এ ধরনের ব্যক্তি নিজের স্বার্থের বেলায় একেবারেই সতর্ক। ভুল করা মানুষের স্বভাব। ভুল হতেই পারে। তাই ভুলবশত, না জেনে, না বুঝে কোন কাজ করা হতেই পারে। তা নিয়ে কোন কথা নেই। কিন্তু কথা হলো নিজের স্বার্থের বেলায় সচরাচর কোন ভুল হতে দেখা যায় না অর্থাৎ নিজের স্বার্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হলেও যৌথ স্বার্থ না বুঝতে পারা রহস্যময়।
তবে বোধশক্তি বা কমনসেন্স-এর অভাবে নিজে লজ্জিত, অপরকে লজ্জিত, অপ্রীতিকর অবস্থার উদ্ভবসহ নানা রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। বোধশক্তি বা কমনসেন্স অর্জন করার জন্য পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিতে হয়। বোধশক্তি বা কমনসেন্স থাকা, বোধশক্তি বা কমনসেন্স অর্জন করা ও আত্মস্থ করা সবারই অপরিহার্য কর্তব্য। তাই সকলকে নিজেদের স্বার্থে সবাইকে বোধশক্তি বা কমনসেন্সের জ্ঞানে আরো জ্ঞানান্বিত করা দরকার। কেন-না এর অভাবে যে-কোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা থেকে নিজেদেরকে হেপাজত রাখা সম্ভব এবং জীবনকে আরো আনন্দময় ও স্বার্থক হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব।
সমাপ্ত
খুব সুন্দর লিখেছেন
ReplyDelete