বাতায়ন/মাসিক/প্রবন্ধ/২য় বর্ষ/২৮তম সংখ্যা/২রা
ফাল্গুন, ১৪৩১
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | প্রবন্ধ
সংঘমিত্রা ব্যানার্জি
মৃত্যু
সংঘমিত্রা ব্যানার্জি
"এটাই প্রতিটা মানুষের জীবনের নিয়ম। মানুষ যেমন সৃষ্টির সঠিক সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দিতে পারে তেমনই মৃত্যুরও সঠিক সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দিতে পারে। সেই ব্যাখ্যা তারাই দিতে পারে যারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত।"
মৃত্যু হল এমন এক সত্যি যা মানুষের জীবনে যে-কোনো সময় যে-কোনো দিনে আসতে পারে। মৃত্যুর অর্থ হলো মানুষের দেহের বা শরীরের অন্ত কিন্তু আত্মার বিনাশ হয় না। আত্মা হলো এক ও অবিনশ্বর। শুধু মৃত্যুর পরে আত্মা এক শরীর থেকে অন্য শরীরে স্থানান্তরিত হয়। সত্যিকারের আত্মার কখনো মুক্তি হয় না। মানুষ যতই নিজের আনন্দ খুশির মাঝখানে
বিভোর
থাকুক-না-কেন মৃত্যুর কড়া নাড়াটা তার
জীবনে আসতে বাধ্য। মৃত্যু অনিবার্য এবং মানুষ যতই মৃত্যুর থেকে বাঁচার চেষ্টা করুক-না-কেন মৃত্যুর কবলে মানুষ।
সারাজীবন যতই আনন্দের রথে চলুক-না-কেন
মৃত্যুর সারথির কাছে তাকে নিজেকে প্রদান করতেই হবে এটাই হলো জীবন। প্রতিটা মানুষের
জীবনে জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ এই তিনটি ঘটনা
ঘটে থাকে প্রথম ও তৃতীয়টি মানুষের স্ব-ইচ্ছাধারায় ঘটিত হয় কিন্তু দ্বিতীয় ঘটনাটি মানুষের স্ব-ইচ্ছা
দ্বারা কখনোই ঘটতে পারে না। যদিবা ঘটেও
থাকে তাতেও মানতে হবে যে ভগবানের কিছু নির্ধারিত করা ছিল। প্রাণীজগতের মধ্যে
মনুষ্যজগৎ এমন একটি জগৎ যার মধ্যে মান-জ্ঞান-হুঁশ এই তিনটি জিনিসই উপলব্ধি করা যায়। ভগবান মানুষ সৃষ্টির সময় এই তিনটি
বৈশিষ্ট্য দিয়েছিলেন বলেই মানুষ অন্য প্রাণীজগৎ থেকে ভিন্ন
বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রাণীজগতের মধ্যে মনুষ্যসম্প্রদায়
বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণচঞ্চল ও দীর্ঘায়ু হলেও মৃত্যুর হাতছানি থেকে তাদের রক্ষা করতে
পারে না। এটাই প্রতিটা মানুষের জীবনের নিয়ম। মানুষ যেমন সৃষ্টির সঠিক সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দিতে পারে তেমনই মৃত্যুরও সঠিক সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দিতে পারে। সেই
ব্যাখ্যা তারাই দিতে পারে যারা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। মৃত্যু দুরকমের হতে পারে, সৃষ্টিকর্তা প্রাণীজগতের মৃত্যুর সময় এক রকম স্থির করে রাখেন আর সেইসময়
আসতে-না-আসতেই সৃষ্টিকর্তা তাকে নিজের
কাছে টেনে নেন। তবে অনেক মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করে তখন তাদের মৃত্যু ঠিক ওই
সময় সৃষ্টিকর্তাই হয়তো এইভাবে স্থির করেছিলেন তাই তারা মৃত্যুটা এইভাবে মেনে
নিয়েছে। তবে মৃত্যু হওয়া হলো যে-কোনো প্রাণীজগতের মোক্ষলাভ, স্বেচ্ছায় না করাই শ্রেয়। আমার মতে মানুষ অনেক কষ্টে দশ মাস দশ দিন
মায়ের গর্ভে থেকে পৃথিবীর আলো আনন্দ-খুশি-দুঃখের ভাগ নিতে আসে। তাই সেই মনুষ্যজগৎ প্রাণচঞ্চল জায়গা থেকে নিশ্চল প্রাণহীন জগতে নিজে থেকে প্রবেশ করার কী দরকার, যেখানে আমাদের একদিন সবাইকেই যেতে হবে
সেখানে আগে থেকে গিয়ে কী লাভ? সেখানে গেলে
তো আর প্রাণচঞ্চল জীবনে ফিরে আসা সম্ভব নয় সেটা অনেকেই বোঝে না আর হয়তো বুঝতেও
চায় না। নিজের পারিবারিক জীবনে চাপের জন্য মৃত্যুর কবলে পড়তে হয়।
মৃত্যু সবসময় কষ্টকর এক প্রাণহীন জীবন। মৃত্যু যদি সত্যিই আনন্দময় হতো তবে যে-কোনো মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আবার প্রাণময় জীবনে ফিরে আসতে পারত। কিন্তু আদতে তা হয় না কখনোই আর কখনো হবেও না এটাই চিরসত্য।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment