ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা চ্যাটার্জি
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব – ১৫]
পারমিতা চ্যাটার্জি
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব – ১৫]
"মনকলি এটা তোমাকে রিহার্সালের সময় মনে করিয়ে দিত যে ওকে কিছু খেতে না দিলে কিন্তু ওর মাথা ধরে বমি শুরু করবে।"
পূর্বানুবৃত্তি মনকলি আবারও
কলেজে রাহুলের ঘরে এলো। পরিবেশ মধুর রইল না। রাহুল তার আর সুচরিতার বিয়ের আয়োজন নিয়ে
মানসিকভাবে ব্যস্ত। তারপর…
তারপর পুরুলিয়ায় এসে স্থিতি হয়েছে। যার খোঁজে এসেছিল তার খোঁজও পেয়ে গেছে। তাকে শুধু একটা কথাই জানাবার ছিল অল্প বয়েসের ছেলেমানুষি ভুলকে যেন ক্ষমা করে দেয়। সে এখানেও স্বল্পদিনের অতিথি। সুচরিতা বড় ভাল মেয়ে। সেই কোন ছোট্টবেলা থেকে সে বউয়াদার ফ্যান। সুচরিতার ভালবাসাকে যেন যোগ্য মর্যাদা দেয়।
তার পর দিন খুব সকাল সকাল বউয়া আর সুচরিতা বেরিয়ে এল পুরুলিয়ার পথে। পথে যেতে যেতে কত উল্লাস ভরা দুজনের। দুধারে সার দিয়ে দাঁড়ানো শিমুল-পলাশের গাছ। সুচরিতা তার কাঙ্ক্ষিত ভালবাসা ফিরে পেয়ে ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাসে হই হই করে বলে উঠল, কী অপূর্ব বউয়াদা কী অপূর্ব!
বউয়া বলল, কী অপূর্ব আমি না প্রকৃতি?
সুচরিতা মুচকি হেসে বলল, বাবা!
রস যে উপচে পড়ছে। এত প্রেম থাকলে হয়!
-দেখো আমাকে চ্যালেঞ্জ কোরো না। আমি যেমন অব্যক্ত ভালবাসাকে নিজের মনে সাদরে রেখে দিতেও পারি আবার
যখন মুক্ত হয়ে তার থেকে বেরিয়ে আসি, আর ফিরে তাকাই না।
-দেখা যাক কী হয়!
-সুচরিতা নিজের মনকে অনেক প্রশ্ন করো যে সত্যি তুমি ভালবাসতে পারবে কি না?
-তোমার এ সন্দেহের কারণটা ঠিক বুঝলাম না!
-মানে আবেগে ভেসে যেও-না, যা সিদ্ধান্ত নেবে অনেক ভেবেচিন্তে নিও, পরে যেন কোন আপশোশ না থাকে।
-বউয়াদা শুধু তোমার জন্য নিজেকে তৃষিত রেখে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম, এরপরও তোমার সন্দেহ জাগে?
-সরি সত্যি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। চলো এবার দোকান দেখলে দাঁড়িও তো, একটু চায়ের দরকার, কিছু খাবারের প্রয়োজন। পেটে ইঁদুরের লম্ফঝম্প শুরু হয়েছে।
-আরে৷ বলবে তো খিদে পেয়েছে!
-কেন তোমার কাছে কিছু আছে না কি?
-হ্যাঁ বেরোবার সময় যা পারলাম তাড়াতাড়ি কিছু গুছিয়ে নিলাম।
সুচরিতা বউয়াদাকে একটা ডিমসেদ্ধ ছাড়িয়ে যত্ন করে নুন-মরিচ ছড়িয়ে দিল তার সাথে নিজে হাতে বানানো স্যান্ডউইচ।
রাহুল বলল - বাহ্ আমার
মনের মতন খাবার দিয়েছ একেবারে।
-জানি তো তুমি ভাজাপোড়া বেশি
খাও না তাই আর কী-
-হ্যাঁ তা নিজের জন্য কিছু নাও।
-হ্যাঁ নিচ্ছি দাদা।
-মানে! তুমি এখনও আমাকে দাদা বলবে না কি?
-না তুমি তো বলে গিয়েছিলে, দরকার পড়লে এই দাদাটাকে মনে করিস, তাই-তো দাদা বললাম। ভুল করলাম না কি?
সহাস্যে রাহুল বলল, দ্যাখ তুই না এবার মার খাবি-
-এ বাবা! এদিকে বলছ ভালবাস
এদিকে আবার তুই বলছ, তা তুমি কি আমাকে বোনের মতন ভালবাসবে?
রাহুল সুচরিতার মাথায় হালকা আদরের একটা চাঁটি মেরে বলল, নাও এবার নিজে খাও তাড়াতাড়ি নইলে খালি পেটে আবার বলবে, বউয়াদা আমার মাথা ধরেছে।
-মনকলি এটা তোমাকে রিহার্সালের
সময় মনে করিয়ে দিত যে ওকে কিছু খেতে না দিলে কিন্তু ওর মাথা ধরে বমি শুরু করবে।
রাহুল রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেলল।
আসতে আসতে ওরা ক্রমশ এগিয়ে চলল পুরুলিয়ার পথে। মাঝপথে রাহুল একটা মিষ্টির দোকান দেখে গাড়ি থামিয়ে বলল একটু চা খেয়ে নেওয়া যাক মাটির ভাঁড়ে। এই গ্রাম্য রুখু পথে ছোট ছোট দোকান থেকে চা-মিষ্টি খেতে বড় ভাল লাগে।
সুচরিতা বলল, আমার জন্য কিন্তু মিষ্টি
কিনো না শুধু চা হলেই হবে।
-আরে গ্রামের টাটকা দুধের
রসগোল্লা খেয়ে দেখো সত্যি ভাল লাগবে। আমি জানি তোমার মন সিঙারার জন্য ব্যাকুল
হচ্ছে, কিন্তু এখানকার তেল কেমন হবে জানি না।
সুচরিতা ছেলেমানুষি আবদারে বলল, দেখো কী ভাল গরম গরম কচুরি ভাজছে প্লিজ আমাকে কচুরি দাও-না গো।
সুচরিতার এই ছেলেমানুষি
আবদার রাহুলের খুব ভাল লাগল, বলল তুমি আর বড় হলে না, নেমে এসো একটু,
লালপাহাড়ি প্রকৃতিকে দেখো খুব ভাল লাগবে।
সুচরিতা গাড়ি থেকে নেমে রাহুলের গা ঘেঁষে দাঁড়াল, রাহুলের খুব মধুর লাগল সে এক হাতেই সুচরিতার কাঁধটা জড়িয়ে ধরে বলল, একটু ছবি তুলি?
একমুখ হেসে সুচরিতা বলল, হ্যাঁ তোলো।
সুচরিতা একটা সবুজ তাঁতের
শাড়ি পড়েছিল,
একরাশ চুলের ভারি বিনুনির গোছা কাঁধ বেয়ে বুকের ওপর দিয়ে নেমে এসেছে,
বড় কাজল কালো চোখের এক অসাধারণ সৌন্দর্য যেন সমস্ত মুখটাকে আবৃত করে
রেখেছে। ভারি মিষ্টি লাগছে তাকে, রাহুলের দুচোখে মুগ্ধতা
নেমে এল, ঘন সবুজ গাছের বড় বড় সবুজ পাতার মাঝখানে সে দাঁড়ায়,
পড়ন্ত রোদ তার মুখে এসে পড়ে, রাহুল বেশ কয়েকটি
ছবি তুলল।
সুচরিতা বলল, এবার তুমি দাঁড়াও আমি ছবি
তুলব।
রাহুল বলল, উঁহু আমরা দুজনে একসাথে ছবি
নেব।
সে একহাতে সুচরিতাকে জড়িয়ে
নিয়ে দুজনের একসাথে ছবি তুলল। তারপর কচুরি এবং রসগোল্লা দুজনে দুজনকে খাইয়ে, মাটির ভাঁড়ে চা খেয়ে গাড়িতে
উঠল। এক অনাবিল আনন্দে রাহুলের মন ভরে উঠল, মনে মনে ভাবল
অনেকবার তো এ পথে যাতায়াত করেছে এমন আনন্দ তো কখনও তার মনকে এভাবে ভরিয়ে দেয়নি।
বোধহয় এরই নাম ভালবাসা। ক্রমশ তারা পুরুলিয়ায় এসে ঢুকল তখন সবে সূর্যাস্ত হচ্ছে
পশ্চিমের আকাশে তখনও শেষ বিকেলের লাল আলো ছড়িয়ে আছে।
মনকলি দাদার অনুরোধ রাখতে
পারল না বা চাইল না। তাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে জলভরা চোখে দাদা বলেছিল, আজ বাবা-মা বেঁচে থাকলে তুই এভাবে চলে যেতে পারতিস না।
তারপর পুরুলিয়ায় এসে স্থিতি হয়েছে। যার খোঁজে এসেছিল তার খোঁজও পেয়ে গেছে। তাকে শুধু একটা কথাই জানাবার ছিল অল্প বয়েসের ছেলেমানুষি ভুলকে যেন ক্ষমা করে দেয়। সে এখানেও স্বল্পদিনের অতিথি। সুচরিতা বড় ভাল মেয়ে। সেই কোন ছোট্টবেলা থেকে সে বউয়াদার ফ্যান। সুচরিতার ভালবাসাকে যেন যোগ্য মর্যাদা দেয়।
তার পর দিন খুব সকাল সকাল বউয়া আর সুচরিতা বেরিয়ে এল পুরুলিয়ার পথে। পথে যেতে যেতে কত উল্লাস ভরা দুজনের। দুধারে সার দিয়ে দাঁড়ানো শিমুল-পলাশের গাছ। সুচরিতা তার কাঙ্ক্ষিত ভালবাসা ফিরে পেয়ে ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাসে হই হই করে বলে উঠল, কী অপূর্ব বউয়াদা কী অপূর্ব!
-দেখা যাক কী হয়!
-সুচরিতা নিজের মনকে অনেক প্রশ্ন করো যে সত্যি তুমি ভালবাসতে পারবে কি না?
-তোমার এ সন্দেহের কারণটা ঠিক বুঝলাম না!
-মানে আবেগে ভেসে যেও-না, যা সিদ্ধান্ত নেবে অনেক ভেবেচিন্তে নিও, পরে যেন কোন আপশোশ না থাকে।
-বউয়াদা শুধু তোমার জন্য নিজেকে তৃষিত রেখে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম, এরপরও তোমার সন্দেহ জাগে?
-সরি সত্যি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। চলো এবার দোকান দেখলে দাঁড়িও তো, একটু চায়ের দরকার, কিছু খাবারের প্রয়োজন। পেটে ইঁদুরের লম্ফঝম্প শুরু হয়েছে।
-আরে৷ বলবে তো খিদে পেয়েছে!
-কেন তোমার কাছে কিছু আছে না কি?
-হ্যাঁ বেরোবার সময় যা পারলাম তাড়াতাড়ি কিছু গুছিয়ে নিলাম।
সুচরিতা বউয়াদাকে একটা ডিমসেদ্ধ ছাড়িয়ে যত্ন করে নুন-মরিচ ছড়িয়ে দিল তার সাথে নিজে হাতে বানানো স্যান্ডউইচ।
-হ্যাঁ তা নিজের জন্য কিছু নাও।
-হ্যাঁ নিচ্ছি দাদা।
-মানে! তুমি এখনও আমাকে দাদা বলবে না কি?
-না তুমি তো বলে গিয়েছিলে, দরকার পড়লে এই দাদাটাকে মনে করিস, তাই-তো দাদা বললাম। ভুল করলাম না কি?
সহাস্যে রাহুল বলল, দ্যাখ তুই না এবার মার খাবি-
রাহুল সুচরিতার মাথায় হালকা আদরের একটা চাঁটি মেরে বলল, নাও এবার নিজে খাও তাড়াতাড়ি নইলে খালি পেটে আবার বলবে, বউয়াদা আমার মাথা ধরেছে।
রাহুল রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেলল।
আসতে আসতে ওরা ক্রমশ এগিয়ে চলল পুরুলিয়ার পথে। মাঝপথে রাহুল একটা মিষ্টির দোকান দেখে গাড়ি থামিয়ে বলল একটু চা খেয়ে নেওয়া যাক মাটির ভাঁড়ে। এই গ্রাম্য রুখু পথে ছোট ছোট দোকান থেকে চা-মিষ্টি খেতে বড় ভাল লাগে।
সুচরিতা ছেলেমানুষি আবদারে বলল, দেখো কী ভাল গরম গরম কচুরি ভাজছে প্লিজ আমাকে কচুরি দাও-না গো।
সুচরিতা গাড়ি থেকে নেমে রাহুলের গা ঘেঁষে দাঁড়াল, রাহুলের খুব মধুর লাগল সে এক হাতেই সুচরিতার কাঁধটা জড়িয়ে ধরে বলল, একটু ছবি তুলি?
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment