প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ঝড় | টিকে থাকার সাধনা

বাতায়ন /ঝড়/ সম্পাদকীয়/ ৩ য় বর্ষ/ ১ ম সংখ্যা/ ১লা বৈশাখ,   ১৪৩ ২ ঝড় | সম্পাদকীয় টিকে থাকার সাধনা "প্রত্যেক সাহিত্যসেবীর অন্তরে চিরকালীন...

Wednesday, April 9, 2025

সিদ্ধান্ত [১ম পর্ব] | হিমাদ্রি শেখর দাস

বাতায়ন/ঝড়/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১ম সংখ্যা/১লা বৈশাখ, ১৪৩২
ঝড় | ধারাবাহিক গল্প
হিমাদ্রি শেখর দাস
 
সিদ্ধান্ত
[১ম পর্ব]
 

"নির্দিষ্ট দিনে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অফিসে বসে রাতুলসঙ্গে রাজিব ও স্নেহা। সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা হয়ে গেলপ্রিয়াঙ্কা দেখা নেই। মোবাইল সুইচ অফ। মাথা নিচু করে বসে রাতুল।"


ছেলেকে নিয়ে রোটারি সদনে বিশেষ আলোচনা সভায় যাচ্ছে রাতুল। নিজের হাসপাতালের ডাক্তারের সঙ্গে মূল আলোচক হিসেবে দিল্লি থেকে আসছেন মহিলা বাঙালি।

 
রাতুল সরকারি চাকরিজীবী হাসপাতালের টেকনিশিয়ান। গণিতে এমএসসি করার পর কিছুতেই শিক্ষকতার চাকরি হচ্ছিল না যখন আশাহত রাতুলকে কোর্স করার পরামর্শ দিয়েছিল বান্ধবী প্রিয়াঙ্কা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেডিকেল সেমিনারে পরিচয় হয়েছিল, সে তখন ডাক্তারি পাস করেছে। সেই পরিচয় পরিণত হয়েছিল ভালোলাগা থেকে ভালোবাসায়। কলেজ স্কোয়ারে বসে সুখ-দুঃখের গল্প, আর হাতে হাত রেখে স্বপ্ন দেখা।
 
রাতুল জানায়,
-একটা কথা তোমাকে বলা দরকার, জানো, আমি থ্যালাসেমিয়া বাহক, জানিনা এটা কোন জন্মের শাস্তি।
-বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে কেন এ কথা বলছ, এটা শাস্তির কিছু নয়, ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়। বাবা অথবা মা, কিংবা বাবা-মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়া জিন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানের মধ্যে ছড়ায়। ভয়ের কিছু নেই। বাহক হলে তো সমস্যা কিছু হয় না। শুধুমাত্র খেয়াল রাখতে হয় সে যেন অন্য কোন থ্যালাসেমিয়া বাহক মহিলাকে বিয়ে না করে। পরীক্ষা করলেই দেখা যাবে তোমার মা-বাবার মধ্যে একজন অবশ্যই বাহক
-অন্য মেয়েকে বিয়ে করব কেন বিয়ে যদি করতে হয় তোমাকেই করব
হাসতে হাসতে উত্তর দেয় রাতুল।
-সে তো অনেক সময় আছে, তুমি আগে চাকরি করো, আমি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করি। আমি তোমার সঙ্গে সবসময় আছি
জানায় প্রিয়াঙ্কা।
-কিন্তু সেটা কবে? দেখছ না কত চেষ্টা করছি একটা চাকরি হচ্ছে না। বুড়ো হয়ে বিয়ে করব?
প্রশ্ন করে রাতুল।
-এই খালি বিয়ে বিয়ে কেন, শিক্ষকতার চাকরির জন্য না বসে থেকে তুমি প্যারামেডিকেল কোর্স করো।
 
প্যারামেডিকেল কোর্সে ভর্তি হয়েছিল রাতুল আর প্রিয়াঙ্কা এমডি-তে। বেড়ে ছিল সম্পর্কের গভীরতা, এই সম্পর্কের কথা বাড়ির লোকজনকে জানায়নি, রাতুল জানত জাতকের মিল না হলে তার বাবা-মা কখনোই বিয়ে দেবে না। কদিন আগেই বাবা বলছিল,
-গণিতজ্ঞের মাথা বিগড়ে গেল, শিক্ষকতা চাকরির চেষ্টা না করে পায়খানা প্রসাব নিয়ে ট্রেনিং করছে। লজ্জা করে না। কোন মানসম্মান বোধ নেই। বয়স তো হচ্ছে এবার বিয়ের কথা ভাবো, তোমার মা তো আর পারছে না।
কোন উত্তর না দিয়ে চুপ থাকে রাতুল। জানে মুখ খুললে কথা বাড়বে।
-সংসারে কথাটা একটু ভাববে। বিয়ের কথা বললেই চুপ হয়ে যাও। এখন তো আর আমাদের সময় নেই জোর করে বিয়েতে বসিয়ে দেবো। তোমার তো মতামত থাকবে।
রাতুল কোন উত্তর দেয় না।
বাবা বলতেই থাকে-
-সমাজ সেবা করা বড়ো শখ, রক্তদান করতে গিয়ে কী আবার কী বের হলো নাকি বংশগত রোগ, বাবার জন্মে শুনিনি। যত্তসব- এসব শুনলে কোন বাবা মেয়েকে বিয়ে দেবে? যত হয়েছে আমার জ্বালা। তুমি কি শুনছ?
-হ্যাঁ শুনছি, তোমাদের, বাবা-মায়ের নিশ্চয়ই আছে না হলে ওটা আমার কাছে আসবে কীভাবে?
এবার উত্তর দেয় রাতুল।
-আমি কোন কথা শুনব না, এবারের সম্বন্ধ হলেই তোমাকে বিয়ে করতে হবে। এই আমি বলে দিলাম।
প্রিয়াঙ্কা এখন অনেক ব্যস্ত, নিয়মিত দুজনের দেখা হয় না। সপ্তাহে একদিন কলেজ স্কোয়ার বা কফি হাউস বা কখনো মিত্র কাফে। দেখতে দেখতে কেটে যায় চার বছর, রাতুল আজ টেকনোলজিস্ট প্রিয়াঙ্কা নামি হেমাটোলজিস্ট। হাসপাতাল সরগরম ডাক্তারের সঙ্গে টেকনিশিয়ানের প্রেম নিয়ে। দুই বাড়িতেই বিয়ের জন্য চাপ। প্রিয়াঙ্কার মা তো বলে,
-আমাদের কেন শাস্তি দিচ্ছিস, বল তো মা? তোকে বিয়ে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে মরতে পারি।
অন্যদিকে রাতুলের হাসপাতালে সহকর্মীদের হাসাহাসি। বায়োকেমিস্ট্রির রাজিব প্রায় বলে,
-কী রে, ডাক্তার দিদিমণি শেষ পর্যন্ত পাত্তা দেবে তো?
সহকর্মী স্নেহা উত্তর দেয়,
-কেন এর সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসা কী সম্পর্ক আছে? মেয়েরা ছেলেদের মতো ঠকায় না বুঝলি।
রাতুল কোন উত্তর না দিয়ে মুচকি হাসে। কলেজ স্কোয়ারে বসে গল্প করার সময় প্রিয়াঙ্কা জানায়,
-জানো বেশ কিছুদিন তোমার সঙ্গে দেখা হবে না
-কেন?
-আমাকে রিসার্চের জন্য বাইরে যেতে হবে।
-আমাকে কীসের শাস্তি দিচ্ছ? আমার যে খুব কষ্ট হবে। তাছাড়া বাড়িতে বিয়ের জন্য তাড়াহুড়ো করছে। কী যে করব?
একটু ভেবে রাতুল বলে,
-আচ্ছা, তুমি বাইরে যাওয়ার আগে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি করে নিলে কেমন হয়? মা-বাবাকে বলে অনুষ্ঠান পরে করব।
 
নির্দিষ্ট দিনে ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন অফিসে বসে রাতুল, সঙ্গে রাজিব ও স্নেহা। সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা হয়ে গেল, প্রিয়াঙ্কা দেখা নেই। মোবাইল সুইচ অফ। মাথা নিচু করে বসে রাতুল।
-তোকে আগেই বলেছিলাম, নামি ডাক্তার, তোকে বিয়ে করবে তার সম্মান থাকবে?
রাজিবকে থামায় স্নেহা,
-কেন এ কথা বলছিস? প্রিয়াঙ্কাদি নিশ্চয় কোন অসুবিধায় পড়েছে।
ম্যারেজ রেজিস্টারের ফি জমা দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে রাতুল। স্নেহা ও রাজিবকে টিফিন করার কথা বলে। তারা কেউ রাজি হয়নি।
 
ক্রমশ…

1 comment:

  1. গল্পটা পড়তে খুব খুব ভালো লাগছে।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

    ReplyDelete

১৪৩২-এর নতুন সূর্য


Popular Top 10 (Last 7 days)