বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক উপন্যাস/৩য় বর্ষ/১৩তম সংখ্যা/৩০শে শ্রাবণ,
১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা
চ্যাটার্জি
শেষ
থেকে শুরু
[পর্ব—
৩৪]
"এটাই জীবন, আসা যওয়ার পথের মাঝেই কেউ আসে পৃথিবীর নতুন আলো হাওয়ায়, আঁতুরঘরে শোনা যায় নবজাতকের কান্না আর অন্যদিকে শশ্মানের নীরবতা ও জীবন চলে যাওয়ার হাহাকার।"
পূর্বানুবৃত্তি
সজল আসার সময়ে প্রবীরকে অনেক বুঝিয়ে এল, ভারত থেকে প্রবীরের এক মাসতুতো ভাই এল, ও আসাতে সজলের আসাটা একটু সহজ এল, সুচরিতা আর রাহুলের মেয়ের ডাকনাম পাঠাল সজল, 'রুসা', তারপর একমাসের রুসাকে নিয়ে ওরা কলকাতা এল,
সজলের
বিয়েতে, ঠিক
হল আরও দু মাস থাকবে সুচরিতা সাথে আয়ামাসি, তিনমাস তো মেটারনিটি লিভ পাওয়া যায়
কিন্তু রাহুল কিছুতেই রাজি হল না বলল,
-রাঙামাটির
মেয়ে ওখানেই মুখেভাত হবে তোমরা সবাই এস।
রাহুল আর
সুচরিতা ছোট্ট রুসা তিনজনই একমাস থেকে চলে যাবে। ছোট্ট রুসা জেঠিদের কোলে কোলে
বেড়ে উঠতে লাগল, সজলের
বিয়েতে ও তো জেঠিদের কাছে থেকে গেল, প্রাণভরে আনন্দ করল সুচরিতা আর
রাহুল। বউটি ভারি মিষ্টি,
এদের মতন ফর্সা নয় তবে কালও নয়। বড় বড় চোখ, মুখখানি ভারি
সুন্দর। ওর নাম মৌমিতা। সজলের বিয়ের অষ্টমঙ্গলা সেরে ওরা সবাই বাড়ি এসেছে তখন
প্রবীরের ফোন এল,
রাহুল ফোনটা নিল কারণ সজলের মুখটা ম্লান হয়ে গেল, সজলের খালি
মনে হচ্ছিল একসময় মনকলি তাকে ভালবাসত আজ সে জীবন থেকে বিদায় নেওয়ার পথে। সুচরিতা
তখন রুসাকে কোলে নিয়ে সবে ঘরে ঢুকেছে, রাহুল সজলের দিকে চেয়ে মাথা নাড়ল, মৌমিতা কিছু
বুঝতে পারছে না, মৌমিতাকে
নিয়ে ওর ঘরে পৌঁছে দিয়ে বলল,
-তুমি চেঞ্জ করে নাও।
বিয়েতে
সজলদের বাবা চেয়েছিলেন সাবেকি বাড়িতে হোক, কিন্তু মা কড়া গলায় বলে দিলেন,
-তাহলে আমি এই বিয়েতে নেই।
তিনি নিজের
বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া সীতাহার, মানতাসা আর কানবালা দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন, ওদের অষ্টমঙ্গলাও হল, সজল
ভেবেছিল বিয়েটা সেরে দিনপনেরো থেকে ফিরে যাবে, কিন্তু তার
আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
আজকে মনকলির
বডি আসছে, এয়ারপোর্টে
প্রবীরের বাবা আর মনকলির দাদা এসেছিল, ওর দাদা হাউহাউ করে কাঁদছিল, সজল মৌমিতা, রাহুল আর
ছোট্ট রুসাকে কোলে নিয়ে সুচরিতা দাঁড়িয়ে আছে রুসার প্রায় আড়াই মাস বয়স, সবে দৃষ্টি
হয়েছে, ঘুমিয়ে
ঘুমিয়ে হাসছে, ওকে
কোলে নিয়ে সুচরিতা ঝরঝর করে কাঁদছে, আয়ামাসি সুচরিতার কোল থেকে রুসা নিয়ে নিল।
রাহুল এসে
সুচরিতার পিঠে হাত দিয়ে বলে গেল,
-এত কাঁদে না, তোমার শরীর
খারাপ করবে।
কিন্তু
সুচরিতা নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না, বুকে একটা অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে, এটা কি
যাবার বয়স? সবকিছু
তো ওর বাকি থেকে গেল। সেই ছটপটে সুন্দর মেয়েটা আজ আর নেই। মৌমিতা এসে সুচরিতাকে
জিজ্ঞেস করল,
-তোমরা সবাই খুব বন্ধু ছিলে দিদি?
-হ্যাঁ ভাই প্রাণের বন্ধু ছিলাম, দুজনেই একসাথে বড় হয়েছি।
রাহুল সজল
সুচরিতা মৌমিতা পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিল আচমকা আয়ামাসির কোলে খুব কান্না আরম্ভ করে দিল, রাহুল আয়ামাসির কোল থেকে রুসাকে নিয়ে সুচরিতার কোলে দিয়ে দিল আয়ামাসি দুধ
গুলে সুচরিতাকে দিল,
রুসা এত রেগে গিয়েছে দেরিতে খাবার দেবার জন্য যে বোতল মুখেই নিচ্ছে না, এত দুঃখের
মাঝেও পুচকু সোনার কাণ্ড দেখে সজল আর রাহুল হেসে ফেলল, অনেক ভুলিয়ে
মুখে দুধের বোতল দিল,
আর রুসা চকচক করে দুধ খেতে লাগল।
সজল বলল,
-সত্যি রে
এটাই জীবন, আসা
যওয়ার পথের মাঝেই কেউ আসে পৃথিবীর নতুন আলো হাওয়ায়, আঁতুরঘরে শোনা যায় নবজাতকের কান্না
আর অন্যদিকে শশ্মানের নীরবতা ও জীবন চলে যাওয়ার হাহাকার।
-তাইতো কবিগুরু লিখেছেন, "নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু পাছে পাছে, / তাতা থৈথৈ—।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment