ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা
চ্যাটার্জি
শেষ
থেকে শুরু
[পর্ব—
৩৩]
"সুচরিতার মাসি-মামিরা এসে আলাদাভাবে সাধ খাইয়ে গেছেন, সবাই ভাল ভাল শাড়ি দিয়েছেন মামার বাড়ি থেকে একটা ভাল শাঁখা বাঁধানো দিয়েছে, মাসি মাথায় খোঁপার বেশ সুন্দর তারের কাজ করা সোনার ফুল দিয়েছেন।"
পূর্বানুবৃত্তি
প্রবীরকে বলছি তোমার দাদা বা ভাই কেউ যদি থাকে ডেকে নাও ভাই, আমাকে এবার
দেশে যেতে হবে, মা
বিয়ে ঠিক করেছেন, বুঝতেই
তো পারছ বয়স হয়েছে, একেবারে
দিন ঠিক করে ফেলেছেন। তারপর…
এদিকে রাহুলের দাদা-বউদি এসে হই হই কাণ্ড আরম্ভ করে দিল, তোর আর কাণ্ডজ্ঞান হল না কাল বাচ্চা হবে আর আজ আমাদের বলছিস।
সুচরিতা বলল,
-আমি কিন্তু
অনেকদিন থেকে বলছি তোমার দেওরকে।
-তা তুমি তো নিজেও তো খবর দিতে পারতে, পুজোর সময়ও বলতে পারতে।
-তখন তো বুঝতে পারিনি, ঠিক তারপরেই তো বুঝতে পারলাম, যখন বুঝতে
পারলাম।
-তখন জানালি না কেন?
-আমার লিখে জানাতে বা ফোনে বলতে লজ্জা করছিল।
-ও হো লজ্জা করছিল, দেখ মেয়ের লজ্জা!
রাহুলের
দাদা বললেন,
-আমরা পাঁজি
দেখে এসেছি কালকের মধ্যেই সব জোগাড় করে নিতে হবে, পরশু দিন সাধ।
প্রমোদবাবুর
স্ত্রী, আর
সুচরিতার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ কলিগ এই নিয়ে সাধের অনুষ্ঠান করল। সুচরিতার মাসি-মামিরা এসে আলাদাভাবে সাধ খাইয়ে
গেছেন, সবাই
ভাল ভাল শাড়ি দিয়েছেন মামার বাড়ি থেকে একটা ভাল শাঁখা বাঁধানো দিয়েছে,
মাসি মাথায় খোঁপার বেশ সুন্দর তারের কাজ করা সোনার ফুল দিয়েছেন।
রাহুলের
বউদি বেশ মোটা গোলাপ-বালা একজোড়া এনেছিল শাশুড়ির রেখে যাওয়া আর
নিজেরা বেশ দামী কাঞ্জিভরম শাড়ি, রাহুল নিজে ঘিচা তসরের ওপর প্রিন্ট
আর পুরো একটা রূপোর সেট,
সুচরিতা রূপোর গয়না খুব ভালবাসে।
খুব বেশি
কিছু আয়োজন করা গেল না এত অল্প সময়ের মধ্যে। দুজন বউ ঠিক করা হল, বেশ ভাল
রাঁধে বলে নাম আছে, ওরাই
শুক্তো, সবজি
দিয়ে ডাল ধোঁকার ডালনা,
বড়ি দিয়ে শাক ভাজা,
আলু ফুলকপি দিয়ে মাছের কালিয়া আর দই মাছ, চাটনি দই মিষ্টি।
রাহুলের
দাদা চলে গেল, কিন্তু
বউদি থেকে গেল, আর
বেশি দেরি নেই, এসময়ে
একজন কেউ থাকা ভাল।
যথাসময়ে পেইন উঠল রাহুল ব্যস্ত হয়ে উঠল, বউদি সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
-আরে এটুকু
ব্যথা তো হবেই, কথাতেই
আছে, "মা
হওয়া কি মুখের কথা"।
হাসপাতালে
নিয়ে যাওয়া হল রাত তখন দশটা, খুব একটা বেশি সময় লাগেনি, ভোররাতে শিশুকণ্ঠে কান্নার আওয়াজ এল।
রাহুল সুচরিতার একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে, রাহুলের মনে হল মুখখানা যেন সুচরিতার
মতোই মিষ্টি টলটল করছে।
ঠিক সেই
সময়ে রাহুলের ফোনে একটা ফোন এল, সুচরিতা বলল,
-কার ফোন?
রাহুল দেখল
সজলের ফোন, তাই
আর কিছু না বললেও বুঝতে পারল এ ফোন কীসের ফোন, ভয়ে ভয়ে বলল
রাহুল,
-হ্যালো?
ওদিক থেকে
সজলের গলা ভেসে এল,
-হ্যাঁ রে
সুচরিতার কী খবর? নিশ্চয়ই এতক্ষণে হয়ে গেছে?
যাক্ বাবা ও
যা ভেবেছিল তা নয়, নাহলে
এই আনন্দের মুহূর্তটা বিষাদময় হয়ে উঠত, ও খুব আনন্দের সাথে বলল,
-মেয়ে হয়েছে
রে।
সজল খুব
আনন্দিত হয়ে বলল,
-গ্রেট— নামটা কিন্তু আমি দেব কলকাতায় গিয়ে।
-হ্যাঁ নিশ্চয়ই আমরা তো এবার তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
-হ্যাঁ আসছি তো, খুব শিগগির আসছি।
-ওদিককার কী খবর রে? ভয়ে ভয়ে
জিজ্ঞেস করতে পারছি না।
সজল শুধু
বলল,
-যমে মানুষের
যুদ্ধ চলছে।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment