ধারাবাহিক
গল্প
অর্পিতা
চক্রবর্তী
উত্তরাধিকারী
[২য় পর্ব]
"সুভাষ আজকাল একটু বেশি বেশি ট্যুরে যায়। অনেক রাত অবধি ফোনে চ্যাটিং করে। প্রমিলা রোজই ভাবে সুভাষের সাথে খোলাখুলি কথা বলবে কিন্তু বলা আর হয়ে ওঠে না।"
পূর্বানুবৃত্তি আজ পূর্ণিমা। চারপাশটা স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় ভরে উঠেছে। চোখের জলে চশমার কাচটা
কখন যেন ঝাপসা হয়ে গেছে। হঠাৎ কাঁধের উপর একটা আলতো হাতের স্পর্শ। তারপর…
মা মেয়েকে আশ্বস্ত করে বলল,
-আচ্ছা ঠিক আছে। সে হবে ’ক্ষণ। তুই
আর রূপক আয় তো আগে তারপর দেখছি।
বৃষ্টি বলল,
-মা রূপক কিছুদিনের জন্য হায়দ্রাবাদ যাচ্ছে অফিসের কাজে। ও বেরিয়ে গেলেই
আমি চলে আসব। এখন রাখছি। তুমি কিন্তু সাবধানে থেকো। ওষুধগুলো ঠিক মতো খেও।
দেখতে দেখতে রাত কেটে ভোরের
আলো ফুটল। আজ অনেক রাতের পর খুব ভাল একটা ঘুম হয়েছে প্রমিলাদেবীর। মনের উপর থেকে
যেন বিশ মন পাথর একটা নেমে গেছে। উমাও বাড়ি চলে গেছে। এত বড় বাড়িতে প্রমিলা একা, একদম একা। এই বাড়ি ওর শ্বশুরের ভিটে। পরে অবশ্য রেনোভেশন
হয়েছে।
আজ থেকে চৌত্রিশ বছর আগে এই
বাড়ির কূলবধূর গৃহপ্রবেশ হয়েছিল। এরপর
সুভাষ আর প্রমিলার ছোট্ট সুখের সংসার আলো করে এসেছিল বৃষ্টি। তারপর দিনগত
পাপক্ষয়ের ন্যায় কেটে গেল অনেকগুলো বছর। একে একে শ্বশুর-শাশুড়ি গত
হলেন। শ্বশুর মহাশয় তার স্থাবর অস্থাবর যা কিছু বৌমার নামে করে দিয়ে গেলেন।
বৃষ্টি একটু একটু করে বড় হতে লাগল। সুভাষ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। কখনো দেশে আবার
কখনো বিদেশেও পাড়ি দিতে হয় তাকে।
বৃষ্টি তখন কলেজে পড়ে, প্রমিলার সময় যেন আর কাটতেই চায় না। ওদের বাড়ির পাশেই
ছিল একটা নার্সারি স্কুল। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিল ওর খুব ভাল বন্ধু। একটা
সময়ের পর আর সাত-পাঁচ না ভেবে স্কুলের চাকরিতে যোগদান করল প্রমিলা। এরপরেও কেটে
গেল অনেকগুলো বছর। বৃষ্টির বিয়ে হয়ে গেল। ওর প্রাণের চেয়ে প্রিয় বান্ধবী উমা
মূলত ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার মেয়ে। উমার অবশ্য খুব
কাছাকাছি বিয়ে হয়েছে। সুভাষ বরাবর কম কথা বলে। তবে প্রমিলা চাকরি পাওয়ার পর
থেকেই ওর মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছিল। বৃষ্টির বিয়ের পর থেকে ওদের দুজনের মধ্যে
একটা অদ্ভুত দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। মেয়ের সাথেও বাবার দূরত্বটাও ছিল চোখে পড়ার
মতো। সুভাষ আজকাল একটু বেশি বেশি ট্যুরে যায়। অনেক রাত অবধি ফোনে চ্যাটিং করে।
প্রমিলা রোজই ভাবে সুভাষের সাথে খোলাখুলি কথা বলবে কিন্তু বলা আর হয়ে ওঠে না।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment